সিরাজাম মুনির | লেখিকা আতিয়া মাহজাবিন

সিরাজাম মুনির | লেখিকা আতিয়া মাহজাবিন

সিরাজাম মুনির
লেখিকাঃ আতিয়া মাহজাবিন

অগ্নিগর্ভ মহাশূন্যে যখন তিমিরের দানব শৃঙ্খলিত করে রাখে অনন্ত কালো ঘেরাটোপ,
তখন এক নবনূর আসমানের প্রান্তর থেকে ভেসে আসে, ছিন্ন করে অন্ধকারের অবরোধক স্তবক।
যেন দিগন্ত বিহীন মরুর অন্তহীন তৃষ্ণার্ত প্রান্তরে হঠাৎ সঞ্জীবনী ঝর্ণাধারা নেমে আসে,
আপনার আগমনে প্রতিটি নিঃস্ব হৃদয় রক্তজমাট ক্লেদ থেকে মুক্ত হয়ে নূর আলোয় ভাসে।
হে সিরাজাম মুনির আপনি না এলে পাষাণ হৃদয়ের বুকে হাহাকার ভিড়ে থাকতো নিস্তরঙ্গ মৃত্যুর মতো,
ক্রীতদাসের গলদেশে শিকল চেপে ধরতো শয়তানি হিংস্রতার কঠোর হাহাকার আবৃত ক্ষত।
আপনি এলেন বলেই ধূলিময় মরুতে প্রস্ফুটিত হলো ন্যায্যতার গোলাপ,
আপনি এলেন বলেই রক্তাক্ত মানবতা পেল মুক্তির বিপুল আলোকরূপী স্নিগ্ধ জলধারার চাঁপ।
আপনার চোখের গভীরে যে দয়ার নদী অনিঃশেষ ঢেউ তোলে,
তা সমুদ্রের প্রলয়কেও হার মানায়, তা আকাশের বজ্রকেও শান্ত করে।
আপনি হলেন এমন এক রহমতের মেঘ, যার ছায়াতলে শত্রুও খুঁজে পায় প্রশান্তি,
আপনি হলেন এমন এক সুবাসিত গোলাপ, যার পাপড়িতে খোদার রহস্য লুকানো নূরের বাণী।
হে উম্মতের প্রাণাধার! রাতের গভীর নিস্তব্ধতায় আপনি কেঁদেছেন উম্মতের জন্য,
আপনার অশ্রুর ধ্বনি শুনে আসমানের ফেরেশতারাও হয়ে গিয়েছিল অভিভূত ও বিহ্বলতায় অচল।
আপনার দোয়ায় অগ্নিগর্ভ কিয়ামতের দিনও হয়ে যায় আশা জাগানিয়া বসন্ত,
আপনার শাফায়াত ছাড়া রক্তাক্ত পাপের বোঝা কখনো হতো না উম্মতের থেকে দূরন্ত।
কিয়ামতের দিন যখন সূর্য মাথার ওপরে এক বর্শা হয়ে দাঁড়াবে,
তখন সব নবীই বলবে “নফসি নফসি”, অথচ আপনি বলবেন “উম্মতি উম্মতি” দোয়া ঝরাবে।
আপনার ঠোঁটের দয়ার ঘোষণা শুনে আরশ কেঁপে উঠবে রহমতের জোয়ারে,
আপনি না থাকলে সেই দিন আত্মা গলে যেতো ভয়ানক অগ্নিঝড়ে।
হে নবীজি ! আমার ক্ষুদ্র কলম যখন আপনার নাম লিখতে চায়,
তখন অক্ষরের ভেতর যেন নূরের বজ্রপাত হতে চায়, হৃদয় কেঁপে ওঠে অশ্রুসিক্ত মায়ায়।
আপনার ইশক্ব ছাড়া দুনিয়ার রঙিন কাব্য তো কেবলই মরীচিকা,
আপনার ইশক্বেই লুকিয়ে আছে চিরন্তন মুক্তির অমৃত প্রতীক ধ্বনি মঞ্জুষা!
হে মরুর নিঃসঙ্গ বাতাসে প্রলয় বিধ্বস্ত ধূলিঝড় ভেদ করা মহাপ্রেমিক আলোকবর্তিকা,
আপনার পদতলের শুকনো বালুকণাও নৃত্য করে সোনালি তারকার মতো যেন নূরানী দীপ্তিকা।
আপনার হাতের তালুতে দয়ার ছোঁয়া পেয়ে শুষ্ক শিরা হয়ে ওঠে নদীময় উচ্ছ্বাসে,
আপনার দৃষ্টির আভায় প্রলয় জ্বালা নির্বাপিত হয়ে যায় শান্তির সুধাধারার আশ্বাসে।
হে রহমাতুল্লিল আলামীন! আপনার কণ্ঠস্বর শুনে পর্বতও হয়ে ওঠে বিনম্র,
ফেরেশতারা দলে দলে নেমে আসে, যেন কাব্যিক নূরের তরঙ্গমালা অদ্বিতীয় ও গম্ভীর।
আপনার উচ্চারণে আল্লাহর নাম ঝংকার তুলতেই আঁধার গলে যায়,
শয়তানের দুর্গ ভেঙে পড়ে, আসমানের বাতাসে তকবীর ধ্বনি ভেসে যায়।
হে উম্মতের মুক্তির সেতু! হে কিয়ামতের শাফায়াতের প্রতিশ্রুতি!
আপনার নামেই হৃদয় খুঁজে পায় সান্ত্বনার অবিরাম প্রবাহিত নূরের যতি।
আপনার ইশক্বই কবির হৃদয়ে জ্বালায় অনিঃশেষ প্রদীপ,
আপনার ইশক্বই কবির কলমকে বানায় অশ্রুবিন্দুর মুক্তো সজ্জিত রূপ।
হে প্রিয়তম! আপনার কালো কেশের ঢেউয়ে লজ্জিত হয় আঁধারের ঘনঘটা,
আপনার চিবুকের দীপ্তিতেই রৌদ্রও খুঁজে পায় আত্মসমর্পণের পতাকা।
আপনার হাসিতে তো প্রস্ফুটিত হয় গোলাপ, ঝরঝরে শিশিরকণার মতো,
আপনার রোদনে ভিজে ওঠে কাবার পাথর, যেন দুনিয়া পায় জীবনের সঞ্চারিত আলো।
হে দয়ার নবী! আপনি না এলে আমরা থাকতাম অন্ধকারের কয়েদখানায়,
আপনি না এলে আমরা পেতাম কেবল শয়তানের অগ্নিশিখার শৃঙ্খলায়।
আপনি এলেন বলেই অজ্ঞতার নিদাঘ মরুতে ফুটলো জ্ঞানের শ্যামল বৃক্ষ,
আপনি এলেন বলেই শূন্যতায় এলো শান্তির নূর, ভালোবাসার দ্যুতি প্রভৃক্ষ।
হে আসমানের গর্ব! হে মানবতার অমূল্য ধন!
আপনার ইশক্বেই তো কবির কলম খুঁজে পায় জীবনের মহান সুরধ্বনন!
প্রতিটি অশ্রুবিন্দু আপনার প্রেমে রূপান্তরিত হয় মুক্তার দীপ্ত স্রোতে,
প্রতিটি নিঃশ্বাস আপনার নামেই বিলীন হয় রহমতের ঢেউতে।
হে আসমান জমিনের সুধাময় আলো! আপনার ইশক্বের দীপ্তিতে দগ্ধ মরুর বুকে জন্ম নেয় শ্যামল মধুবন,
আপনার করুণা ছাড়া মানবতার ইতিহাস হতো কেবল অশ্রুজল আচ্ছাদিত পরাভব গ্রন্থন।
আপনি এলেন বলেই অগ্নিগর্ভ হৃদয় পেল প্রশান্তির নীল আকাশ,
আপনি এলেন বলেই পাষাণ বুকও গললো মোমের মতো, পেল অশ্রুসিক্ত সুবাস।
হে নবীজী! আপনার এক নজরে হাওয়ার ঝড় হয়ে যায় শান্ত,
আপনার এক হাসিতে চন্দ্রকলা ভরে ওঠে অনন্ত দীপ্তিতে, সূর্যের জ্বালাও হয় লাজভ্রান্ত।
আপনার দয়ার স্রোতে জাহান্নামের আগুনও হয় থমথমে,
আপনার নাম উচ্চারণে ফেরেশতারাও সাজে নূরানী তসবিহ স্বরমে।
আপনি হলেন সেই আসমানি ফুল, যার সুবাস আখিরাতেও বিলীন হয় না,
আপনি হলেন সেই কুসুম শীতল ছায়া, যা মৃত্যুর অন্ধকারেও নিভে যায় না।
হে রহমতের মেঘমালা! আপনার ছায়ায় পাপীও খুঁজে পায় আশ্রয়,
হে নূরের সূর্যোদয়! আপনার কিরণে দুঃখের রাতও হয়ে যায় সুবাসিত প্রভায়।
আপনি ছাড়া কবির কলম কেবল ধূলি, নিস্তেজ শূন্যতা,
আপনি ছাড়া শব্দগুলো হয়ে যায় কেবল মরুভূমির শুষ্ক প্রতিধ্বনিতা।
হে প্রিয়তম! আপনার কালো কেশের তরঙ্গে আঁধারও সেজে ওঠে দীপ্ত চমক,
আপনার রৌশন চেহারায় সূর্য চন্দ্রও খুঁজে পায় আত্মসমর্পণের অবিনশ্বর রংমহলক।
আপনার দৃষ্টির মায়ায় জমিনও গলে পড়ে সুবাসিত অশ্রুতে,
আপনার কণ্ঠের তিলাওয়াতেই আসমান ভরে ওঠে তকবীরের সুরে।
হে উম্মতের প্রাণআশা! আপনার জন্যই পাপী হৃদয় খুঁজে পায় জান্নাতি বাতাস,
আপনার নামেই দুনিয়ার প্রতিটি নিঃশ্বাসে ভাসে মুক্তির আভাস।
যদি আখিরাতে তৃষ্ণার্ত হয়ে দাঁড়াই হাউজে কাওসারের ধারে,
হে নবীজী! আপনার হাতের পেয়ালা ছাড়া আর কোথাও মেটাবে না আমার অগ্নি তৃষ্ণার জ্বরে।
আপনি না ডাকলে কারো ডাক শোনা হবে না সেদিন,
আপনি না চাইলে কারো মুক্তি লেখা হবে না কোনো দিন।
হে শাফায়াতের মশাল! হাশরের আঁধারে আপনার শাফায়াতেই খুঁজে পাবে উম্মত মুক্তির দিশা,
আপনার করুণার ছায়াতলে লুকাবে আমার অশ্রুভেজা লাঞ্ছিত আত্মার নিশা।
হে প্রেমের নবী! আপনার নাম উচ্চারণেই দুনিয়ার প্রতিটি গৃহ আলোকিত হয়ে ওঠে,
আপনার নামেই ফেরেশতারাও নেমে আসে রহমতের বাণী নিয়ে, নূরের তরঙ্গে ভেসে।
আপনার ইশক্বই কবির হৃদয়ের সঞ্জীবনী,
আপনার স্মরণই কবির জীবনের শ্রেষ্ঠ রূপরাণী।
হে ইশক্বের আলোকবর্তিকা! আপনি ছাড়া আমার নিঃশ্বাস শূন্য,
হে প্রিয়তম! আপনার ইশক্বই আমার রবের নিকট চূড়ান্ত পূর্ণ।
আপনি না এলে হৃদয় হাহাকার পেত অন্ধকারের নিঃশ্বাসে,
আপনি না এলে পথও হারাত গভীরতর নীরবতার জলছাপে।
হে প্রিয়তম! আপনার স্মরণ ছাড়া রাত্রি কেবল নিঃসঙ্গ,
আপনার অভাবেই হৃদয় বাজে বিচ্ছেদের অমোঘ সঙ্গ।
আপনার ছোঁয়া ছাড়া পাথরও অশ্রুজল খুঁজে না পেত,
আপনার দৃষ্টি ছাড়া আকাশও খুঁজে পেত না মুক্তির পাথ।
হে নবীজী! আপনার নাম ছাড়া দিনও হয় নিস্তেজ,
আপনার কাতরতায় ভরা রাতও হয় বিদীর্ণ, দুঃখময় ও ভেজ।
আপনি না এলে পথচলা হতো নিরব নিঃশেষ যন্ত্রণায়,
আপনি না এলে হৃদয় খুঁজত না আলো, খুঁজত না আশার প্রেরণায়।
হে আসমানের নূর! আপনার বাণী ছাড়া ব্যাকুল মনের গান,
আপনার অভাবে নিস্তব্ধতায় হারায় জীবনের প্রাণ।
আপনি ছাড়া দুনিয়ার শব্দও হয় নিস্তেজ, নিঃশব্দ,
আপনার ভালোবাসা ছাড়া হৃদয় হারায় প্রলয়ের চূড়ান্ত অন্ধ।
হে প্রিয়তম! আপনার ইশক্ব ছাড়া পথচলা ধ্বংসের শিকল,
আপনার ছোঁয়া ছাড়া আত্মা খুঁজে পেত না মুক্তির নিখিল নীল।
আপনি ছাড়া যে বেদনা বাজে অন্তরস্থল,
আপনি ছাড়া যে প্রেমের ছন্দ মুছে যায় অমল!
হে নবীজী! আপনার ইশক্বের অভাবেই শূন্য হয় আকাশ,
আপনার স্মরণ ছাড়া জীবনের রঙ যে খুঁজে পায় না নিঃশ্বাস !

আরো পড়ুনঃ  ব্যাস্ত সবাই কলমে আয়েশা সিদ্দিকা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *