বন্যা
মাখনলাল প্রধান
এবং পূর্বাভাস না থাকলেও আমরা অভ্যাসগত কারণে শুধু হাতে বাড়ি থেকে বের হই না । সেদিন আকাশ ঘিরে রমরমা আয়োজন তেমন ছিল না , এমনকি বুড়িয়ে যাওয়া সূর্যের নুয়ে পড়া চোখের দৃষ্টিতে মন ভাল হয়ে যায় । আমরা যাচ্ছিলাম আলপথ ধরে ধানের মাঠে । সবুজ চাদরে ঢাকা জমির উপর সোনার তুলি চালিয়ে চালিয়ে কে এমন করে ঢেলে রেখে গেল মোহ । বিশাখা ছবি আঁকে । সে মুগ্ধতার ধারাপাত খুলে বারবার আবৃত্তি করছিল , ইস , কী চমৎকার ! অবিশ্বাস্য !
আমরা সবুজ সমুদ্রের মাঝে ঢেউয়ে ঢেউয়ে ।গ্ৰাম – সে তো দূরের ঠিকানা । মানুষ যেন অচেনা জীব । পৃথিবীতে শুধু আমরা । এত রোমান্টিক একটা মুহূর্তে আমরা দিগন্ত মেলে দেওয়া গাছের নীচে হাত মেলে ঘুরপাক খেলছি । হঠাৎ কোথা থেকে হাওয়া পাগল মেঘ ছুটে এসে খেয়াল গাইতে শুরু করল ।
আমাদের সেদিকে কোনো মনোযোগই ছিল না । অবেলার বাসরঘরে এমন দরজা জানলা এঁটে ছিলাম যে বৃষ্টি এলো সাজ পোশাক পাল্টে একেবারে সৈনিকের বেশে । তারপর এলোপাতাড়ি বৃষ্টির কামান দাগা শুরু হল । মাঝে মাঝে চিৎকার কুচকাওয়াজ আর কামান দাগার ঝলকানি । বিশাখা প্রথমটা খুব আনন্দ উপভোগ করলেও ক্রমে ক্রমে ভয়ে ঝিমিয়ে যেতে লাগল । আমি হেসে উড়িয়ে দিলাম । এরকম বৃষ্টিতে ভিজতে খুব মজা । বৃষ্টি এরকমই তো হয় । ভাদ্রের দিনে এরকমই হঠাৎ হঠাৎ না বলে যেন ভারি এক পশলা ঢেলে দেয় । সঙ্গে ছাতা আর টর্চ লাইট তো আছেই । তবে এই গাছটা বহু পুরোনো দিনের । আমাদের চলার পথে গ্ৰীষ্ম বর্ষার দিন রাতের বড় সাথী ।
যখন বৃষ্টি থামার লক্ষণ দেখাই যাচ্ছে না , মনে মনে দু:চিন্তা করলেও বিশাখাকে বলছি , গ্ৰামকে জানতে গেলে এটাও জানা দরকার ।
বিশাখার কানে কোনো কথা পৌঁছয়নি । সে রীতিমতো ভয়ে আতঙ্কিত ,তো সুখের কথা বলবে কী ! আর সে যে বারবার একটু সান্নিধ্য খুঁজছিল, সেটা অজানা ছিল না । অত্যধিক বৃষ্টি সব ভেস্তে দিল । আমি ভাবছিলাম, ও যেন বিরূপ না হয়ে পড়ে । একটা স্থায়ী ভাবনার ভিত গড়তে গিয়ে প্রথমেই এরকম বাধা মেনে নেবে তো ! কত কথা ভাবছি , তবু এ অবুঝ ধারা অবুঝ থেকে গেল । সময় যে কত চলে গেল ,আর যেন আমরা সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম ।
মা বোধ হয় বুঝতে পেরে ছিল । জগন্নাথ কাকাকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয় একটা রেনকোট এবং আর একটা বড় টর্চ । সেই সঙ্গে সঙ্গী হিসেবে অবশ্যই জগন্নাথ কাকা । বৃষ্টি নয় , মৌসুমি বিস্ফোরণ ঘটায় এমনই একটা সমস্যা সৃষ্টি হল । বাড়ি ফিরে আসতে আসতে সম্পূর্ণ ভিজে গেল বিশাখা। বাড়ি এসে তাকে কিছুটা যেন স্বস্তি বোধ করতে দেখে মনোবল ফিরে পেলাম । মা ওকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ভেতরে নিয়ে গেল আর তাড়াতাড়ি ফিরে এলে এসব দুর্ঘটনা ঘটত না বলে আমাকে ধমকাল । বড় কথা এরা ভারতীয় শহরের মেয়ে এত জল ঝড়বৃষ্টি কী সহ্য করতে পারবে ?
আমিও তো সেই কথাই ভাবছিলাম । বিশাখা সত্যিই ছবি আঁকে তো- মনে মনে চিন্তা করেছি । সম্রাট কিরো যদি রোম নগরীতে আগুন ধরিয়ে বেহালা বাজাতে পারে– ছি : ! সবাইকে কিরো করার কী দরকার ! ওতো ওর ছোট্ট নোট বুকে কিছু স্কেচ করছিলই । কেউ কেউ শিল্পের জন্য অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পছন্দ করে ।
সারারাত অঝোরধারায় বর্ষামঙ্গল গান আমার মাথার মধ্যে শতফলার লাঙ্গল চালিয়ে গেল । এরকম বৃষ্টির দেশ আমাদের সেকথা জানি , প্রতি বছর হয় । তবুও তার ভয়ংকর প্রভাব পাশের শহরের মানুষ একটুও বোঝে না বলেই যত চিন্তা । আমরা জানি এই মুষলধারে বৃষ্টির কোনো লগ্ন-তারিখ থাকে না । কিন্তু আজকের দিনটি আমার জন্য অন্য রকম হওয়ার কথা ছিল । বৈঠকখানায় বসে গতকাল যেভাবে গল্প হাসি ঠাট্টা করেছি আজ তার প্রদীপ জ্বালানো গেল না । বিশাখাকে দেখলাম যেন চিন্তিত মনে অঙ্ক মেলাতে মেলাতে এঘর ওঘর পায়চারি করছে । আমি মোলায়েম কণ্ঠে ডাকলাম , বসতে বললাম- আজকের অভিজ্ঞতার কথা বলতে এবং পেন্টিং এ কীভাবে –- না সে বোধ হয় শুনতে পায়নি । একবার একটা ঘোরের মধ্যে যেন কাছে এসে জানতে চাইলে–বন্যা হয়ে যাবে না তো ?
আমি রসিকতা করে অভয় দিতে চাইলাম- ভাসব বলেই আমার সকল নিয়ে বসে আছি । আরে , না ভাসলে জীবনের মূল্য বোঝা যায় না ।
সে কোনো কথা না বলে তেমনি পায়চারি করে যায় । নির্ঘাত ভয় পেয়েছে । মাকে বললাম । মা ওকে টেনে নিয়ে গেল রান্নাঘরে ।
সকালে দেখি বিশাখার কথাই সত্যি হল । তিন-চার দিন বাইরে বেরোবার পথ ছিল না ।কোথায় ধানের মাঠ , আল পথ , গ্ৰাম , বাড়ি ঘর । প্রশান্ত মহাসাগর । বিশাখা দেখেই কেঁদে ফেলল । একবার বলেই দিল- আর বোধ হয় আমি প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব না ।
মা সান্ত্বনা দেয়-কান্দো না মেয়ে , এ রকমের বান বছর বছর হয় । তোমার কুনো ভয় নেই মা । আমরা তো তোমার সঙ্গে আছি ।
বিশাখা মুখ ফিরিয়ে বলে – আমি আমার কথাই বলছি কাকিমা । মানুষ নিজেকে নিয়েই বেশি ভাবে । সবার উপরে আত্মরক্ষা ।
আমাকে বলে- অনুভব , এর থেকে মুক্তির পথ নেই ?
আমি বিশাখার কথার সূত্রে জানাই যে , মানুষ একাই জন্মায় আবার একাই ফিরে চলে যায় । সর্বদা সে নিজেকে একা একা বলেই জানে । শিশু মায়ের বুকে থেকেও ভয়ে বারবার মাকে জড়িয়ে ধরে । ঘরের মধ্যে থেকেও সে নিরাপত্তা খুঁজে পায় না । কারণ তার একাকিত্ব বোধ তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় । আমরা কোনোদিনই সেই বোধের বাইরে সমাজে-সংসারে বেরোতে শিখিনি বিশাখা । সেটা তোমার দোষ নয় , শুধু তোমার কথা নয় , সেটা আমাদের সম্পর্কের ট্রাজেডি ।
সারাদিন গেল , জল বেড়েই চলল । কতরকম মাছ ধরা হল , কতরকম রান্না, বিশাখার রুচি নেই । সেদিন রাতে একেবারে কষায় কালো রাতের অন্ধকার ভেঙে হৈ হৈ চিৎকার । সে কী ভয়ানক জলের তড়পানি আর দুরন্ত স্রোতের টান । ইলেকট্রিক নেই , পথ ঘাট নেই । হঠাৎ জলের উপর এত চিৎকার , কারা করছে ? চারদিকে গেল গেল রব । দেখতে দেখতে জল ফুলে ফেঁপে তুর্কি সেনার মতো ভেঙে দুমড়ে ঘরে ঢুকে পড়ল ।ক্রমশ জলে পায়ের পাতা, পেশী , হাঁটু পর্যন্ত উঠতে লাগল । টাইটানিকের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মরতে হবে নাকি , বিশাখা বলে ফেলল ।
সে কী ভয়ংকর অবস্থা ! অন্ধকারের মধ্যে যেন গলা টিপে চুবিয়ে ধরার ষড়যন্ত্র । জল ভেঙে কে যে কোন দিকে পালাচ্ছে । শব্দ আর ঢেউ বলে দিচ্ছে পালাও যদি বাঁচতে চাও । হঠাৎ অনুভব অন্ধকারের মধ্যে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটল ।
– কে কে ?
-ভয় নেই ।আমি ।
– কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমাকে ? এই ঘোর আঁধারে কোথায় চুবিয়ে –চারদিকেই তো শুধু জল ।
– নিরাপদ জায়গায় সকলেই যায় । আমরাও সেখানে যাচ্ছি ।
এত জল কোথা থেকে আসে , কোথায় যায় , কোনোদিনই জানতাম না ।বারবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি ফেলে দেবে জলে কাদায় ।অনুভব থমকে থমকে যাচ্ছিল । আমি কখনও কেঁপে উঠিনি । বেশ শক্ত বাহুডোরে , নড়াচড়া করার অবকাশও ছিল না । আমি যেন শেয়ালের মুখে হাঁস-মুরগি ।কতক্ষণ পরে একটা উঁচু বাঁধের উপর যখন পৌঁছালাম তখন দাঁড়াতে এত কষ্ট হচ্ছিল যে কথা বলতে পারিনি । সেখানে হাজার হাজার মানুষ , এত মানুষ এখানে কোথা থেকে এল ? ছেলে বুড়ো মেয়ে গোরু ছাগল হাঁস মোরগ আর বিচিত্র শব্দ ও তার উচ্চারণও অদ্ভুত । উদ্ধার কার্যের নানান কাহিনি আর দুসাহসিকতার গর্ব । কীভাবে যে কেটেছে কটাদিন , জনমানুষে পশুতে কাদায় চিৎকারে হাহাকারের নিদারুণ জটিলতায় ।
নদীর বাঁধ ভেঙে এরকম একটা দুর্যোগের উপর মানুষের জীবন কীভাবে বিপন্ন হয় , কেউ বোঝে না ।
বিশাখাকে অনুভব কয়েক দিন পরে নৌকায় তুলে পাকা রাস্তার গাড়িতে পৌঁছে দেয় ।
নিজে সব ব্যবস্থা করেই বিশাখাকে বুঝিয়ে দেয় গ্ৰামের মানুষ সত্যিকার মানুষ । এখানে প্রাণের উত্তাপ মোটেই কম নয় ।
তিন মাস পরে বিশাখা গ্ৰামের বন্যার উপর ছবি এঁকে এগজিবিসন করে । সমালোচক ও দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে । রাতারাতি ভীষণ জনপ্রিয় শিল্পী হয়ে ওঠে বিশাখা । শিল্পীর নিজের অভিজ্ঞতা এত সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে বলেই তার কদর একলাফে অনেক উঁচুতে উঠে গেল । বড় বড় সেমিনারে ডাক পাচ্ছে , বিদেশেও ডাক আসতে পারে । এত ব্যস্ত যে অনুভবের ফোনটা রিসিভ করতেই পারে না ।
অনুভব নিজে এসেছিল এগজিবিসনে । ব্যস্ততার দরুন , ধন্যবাদ টুকু জানাবার প্রয়োজন বোধ করেনি ।
আর সম্পর্কটা ? সেটা নিয়ে বিশাখা বলেছে , তোমার কাছে কৃতজ্ঞ , বন্ধুত্ব টুকুর কথ আমি ভুলব না । যত দূরে যাই না কেন তোমার কথা আমার মনে থাকবে । আমার ব্যাপারে তোমাকে ব্যস্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি ।
অনুভব এখনও আসে এগজিবিসনগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে । বিশাখার এক বান্ধবী লীনা ধরে ছিল খুব । সে জানত বিশাখার ছবির উৎস । অনুভব বলেছিল– গ্ৰামে আর বন্যা হয় না লীনা । গ্ৰাম জানে শহরের কাছে এসব কেবলমাত্র পণ্য ।
লীনা অবাক হয়ে যায় , বলে-কী যে বল অনুভব !
-একদম গভীর অনুভব থেকে বলছি । গ্ৰাম মরে গেছে শহরের মার্কেটে ।
বন্ধু হলেও বিশাখাকে সে কম চেনে না লীনা। নিজেরটা খুব ভালো বোঝে । অনুভব একটা নিপাট সরল মানুষ । লীনা অনুভবের গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করে ।
অনুভব নিস্তেজ । লীনার শত অনুরোধেও অনুভব মন খুলে কথা বলতে পারে না । লীনা মাঝে মাঝে তাকে বিভিন্ন এগজিবিসনে নিয়ে যায় , তার মূল্যবান মতামত জানতে চায় । অফিস থেকে বেরোলেই দেখে লীনা অপেক্ষা করছে । বিরক্তবোধ করলেও মুখে কিছু বলে না । অনেকটা সময় অ্যাকাডেমিতে কাটিয়ে বাসায় ফেরে ।
সেদিন আকাশ জুড়ে মেঘের সরগরম আসর শুরু হয়েছে । মায়ের একান্ত অনুরোধে জন্মাষ্টমী পুজোতে বাড়ির পথে অনুভব স্টেশনে দাঁড়িয়ে , কখন ট্রেন আসবে । এ বছর বাড়ির প্রতি বড্ড অবহেলা করে ফেলেছে অনুভব । আসলে সে একটা মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে ছিল । ভারতীয় রেলের ঘড়ি বরাবর একটু স্লো । চা একটু খেয়ে নেওয়া যায় , ভেবে চায়ের স্টলে পৌঁছাতেই দেখে হাসি মুখে লীনা একটা কাপ এগিয়ে দিচ্ছে ।
অনুভব অবাক হয়ে বলে – তুমি কোথায় চললে ?
– তুমি তো আর আমাকে কোনো তোমার বাড়ি ডাকলে না ।
চা পানের সঙ্গে আলাপ চলে দুজনের । হঠাৎ ট্রেন এলে দুজনে উঠে পড়ে । কথার যেন শেষ হয় না । অনুভবের কৌতূহল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় দ্বিতীয় বার তার গন্তব্য জানতে চায়নি । কিন্তু নামতে গিয়ে দেখে লীনা তার সঙ্গে সঙ্গে চলেছে । অনুভব অবাক হয়ে শোনে যে সে তার সঙ্গে যাবে একেবারে গ্ৰামে , গ্ৰামের বন্যা দেখার তার এত সাধ , সেটা যেন অনুভব ব্যর্থ না করে দেয় ।
সত্যিই এবারও বন্যা হল । লীনা কী যে খুশি হল বলে বোঝানো যাবে না । জলে সাঁতার কেটে , দৌড়-ঝাঁপ করে মাতিয়ে দিল সবাই কে । অনুভবের মা কী খুশি ! কী ভালো রে মেয়েটা ! যদিও এবার আর নদীর বাঁধ ভাঙেনি । তবুও জলে কাদায় রাস্তা ঘাট একাকার । ঠাণ্ডা লাগিয়ে জ্বরে ভুগে লীনা বেশ কয়দিন শুয়ে বসে কাটাল । ফেরার দিন গ্ৰামের মানুষকে একেবারে কাঁদিয়ে দিয়ে তবে না এল ।
অনুভব দেখতে এসেছিল লীনা বিশাখার মতো নাকি তার চেয়ে অন্যরকম কোনো ছবির জগতে পৌঁছে গেল । এতদিনে সে ক’টা ছবি আঁকতে পারল । লীনার প্রতি কেমন একটা টান দেখতে পেয়েছিল । অনুভব এগজিবিসন করার জন্য নিজেই ঘোরাঘুরি করছে রীতিমতো । নিজের চোখে একবার দেখে নেওয়া দরকার । কেমন আকর্ষণীয় হবে , সেটা জানা থাকলে কাজের জোর বেড়ে যায় ।
লীনা ছবি আঁকে তবে সেটা নিতান্তই সখের ব্যাপার । ছবি এঁকে বিখ্যাত হওয়ার স্বপ্ন তার নেই । বারবার বলেছে , আঁকছে আঁকছে , তবে এখনি সেসব নিয়ে অস্থির হও না । যোগাযোগ রাখলেও ছবির বিষয়ে কথা হয়নি । কী রকম , কতগুলো ছবির পরিকল্পনা করছে , এসব কথা সে বলেনি । অনুভব জানতে বারবার তাড়া দেয় ।
ছবির কথায় লীনা সোজা করে বলে আমার গ্ৰাম ভালো লেগেছে অনুভব । আমি গ্ৰামকে ভালোবেসে ফেলেছি । আমি যাপন করছি ।
অনুভব বিরক্ত হয় – তুমি শিল্পী, ভালোবাসা শিল্পের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পাবে । চোখের ভালোবাসা দুদিনের , তারপর ভুলে যায় মানুষ । কেউ কোনো দিন জানতে পারবে না ।।শিল্প থেকে যাবে যুগ যুগ ।
লীনা বলে -আমি সে ভালোবাসা বুকে বেঁধে নিয়েছি । হৃদয় ভরে গেছে আমার ।
– তাকে শিল্পে মুক্ত করে দাও । জগতে বিলিয়ে দিতে দ্বিধা কেন ?
– অনুভব , সেটা আমার একান্ত আপনার , অন্য কাউকে দেওয়া যায় না । শুধু তুমি আমার কাছে থাক ।
অনুভব হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে । বলে – আমি শিল্প চেয়ে ছিলাম । গ্ৰামের শিল্প । শুধু শিল্প । তুমি শিল্পী নও , তুমি কোনোদিনই তা পারবে না । বিশাখা সত্যিকারের শিল্পী ।
অনুভব চলে যায়। বলে যায় , তুমি কোনোদিন পারবে না। লীনা তাকে আবার ধরে ফেলে স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে গ্ৰামের পথে সচ্ছন্দে চলে যায় । আর কোনো বন্যার আসতে বাধা থাকা বোধহয় উচিত নয় । মানুষ সতত খামখেয়ালি।
গ্ৰামকে দাও, গ্ৰাম এঁকে ভরিয়ে দিক। তার উপর কলম চালিয়ে শেষ কথা অন্য কেউ বলতে পারে না । এখন সে গ্ৰামের ছোটোদের ছবি আঁকার দিদিমণি। অনুভব অনেকটা স্বস্তি বোধ করে ।