গল্প টা বন্ধুত্বের কলমে মাহী সুলতানা রুমা

গল্প টা বন্ধুত্বের

গল্প টা বন্ধুত্বের
মাহী সুলতানা রুমা

ছোট্ট বেলায় আমি খুব একা ছিলাম ছোট্ট বেলা কেউ আমার সাথে মিশলেও আমি দুরত্ব বাজায় রাখতাম। অজনা কোনো কষ্ট আমাকে ৫ বছর বয়সেই শেষ করে দিতো । মা বাবার থেকে দূরে ছিলাম এক বছর ।নানুর বাডিতেই ছিলাম । তবে অনেক একা ছিলাম । কথা বলতাম না তাই কেউ আমাকে বোবা ও বলতো। চোখের পাণি আমার পডতো না তবে নূনা পানি হয়ে চোখেই থাকতো।
যখন আম্মু আব্বুর কাছে আসলাম। তখন আব্বু মাদ্রাসা ই ভর্তি করে । সবার আদরের বডো মেয়ে ছিলাম । কিন্তু এতো মানুষের ভিড়েও নিজেকে একা লাগতো।
আমি সবার থেকে দূরে থাকতাম কারন আমি ভয় পেতাম সবার সাথে মিশতে কথা বলতে তাই সবাই আমার রাগী ভাব টাই সব সময় দেখতো । কেউ ভয়ে কথা বলতো না আমার সাথে?
কিন্তু আমি ও চাইতাম আমার একজন বন্ধু হোক, প্রিয় মানুষ হোক কিন্তু ইচ্ছে করলেই অনেক বন্ধু পেতাম কিন্তু দুরুত্ব বজায় রাখতাম । একদিন আমি নতুন মাদ্রাসা ই ভর্তি হয়েছি জীবনের ১৩ টি বছর চলে গেলো কিন্তু কোনো বন্ধু বা কারো সাথে মিশি নি কথাও বলি নি।

একদিন আমার জীবনে একজন না ৩ জন মেয়ে আসে যাদের সাথে আমি নিজ থেকেই কথা বলি এবং ওরা ও বলে আর একটু ভাব হয়ে যাই । সারক্ষন ঝগড়া করতাম, একদিন ও শেই ঝগড়া বাদে কেউ থাকতাম।সবাই একদিন বন্ধু হলো কারন আমি রেগে একা চলে আসছি। পরে এসে বলে দেখ রুমা সারক্ষন রাগ করলে কি করে হবে আমরা তো বন্ধুর মতোই। তখন আমি বলি বন্ধুর মতোই বন্ধু তো আর না ।তখন ওরা বলে না সেটা বলি নি আমরা বন্ধু ই পরে বন্ধু হয়ে গেলাম।তারপর দুষ্টুমি,ঝগড়া করে আমাদের ফেন্ড শিপ যাচ্ছিলো । আমাদের ফেন্ড শিপে প্রেম নিষিদ্ধ ছিলো । কিন্তু একদিন ওরাই রিলেশন করলো।আর নাবিলা সেটা আমাকে বলছে ও রিলেশন করে যে এটা যাতে মিথীলা না যানে । আর আমিও কথা রাখলাম। তবে আমি বলছি এটা ঠিক হবে না ও আমাদের বন্ধু । তখন ও বলে আমি সব বুঝিয়ে বলবো ।পরে আমি আর কিছু বলেনি।নাবিলা আগে নিজ থেকে আমাকে মেসেজ দিতো। কিন্তু ও রিলেশনে যাওয়ার পর আমাদের অবহেলা করা শুরু করে।
আর ওই ছেলেটার জন্য মাদ্রাসা ছেডে চলে যাই ।এবং আমাদের কেও।যে বলছে কখনো ছেডে যাবে না সে ছেডে গেলো।আমি অনেক ভেঙে পড়েছি অনেক গুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছি হাত কেটে পেলছি তাও ও আসলো না ওরা জানতো আমি একটা ছেলেকে ভালোবেসি এবং পাইনি তাকে সে অন্য কাউকে ভালোবাসে আমি কষ্ট পেয়েছি আর আমি বন্ধু ত্বে ঠকেছি ।মিথীলা ও অবহেলা করতো আমি অনেক কান্না করতাম যেই আমিটা কান্না কে চোখে বন্ধি করে রাখতাম সে ওদের জন্য রাত জেগে কান্না করেছি।ক্লাসে আবার ও একা হয়ে গেছিলাম হঠাৎ আমাদের ক্লাসের রাহিমার সাথে প্রথম কথা বলছি তাও ফোনে পরিচয় লুকিয়ে আর বন্ধু হয়ে যাই । আর ও যখন আমার পরিচয় পেয়ে যাই । তখন আমাদের কথা বলা বন্ধ হয়ে যাই । কিছু দিন পর মন খারাপ করে ফোন দেখছিলাম হঠাৎ রাহিমার মেসেজ।রাহিমা মেসেজ দেই আমরা কি সব ভুলে যেতে পারি না আমরা কি আবার কথা বলতে পারি না। তখন আমি কিছু বলি নি কারন আমার মন খারাপ ছিলো। মিথীলা আমার সাথে ঝগড়া করছিলো। পরে রাহিমাকে সব বলছি ও আমাকে শান্তনা দিয়েছে। একসময় আমরা বেস্ট ফেন্ড হয়ে যাই। কিন্তু মিথীলা কখনোই জিজ্ঞেস করে নি আমি রাহিমার কি হয়? যখন আমাদের মাজে বেস্ট ফেন্ড এর সম্পর্ক হয়ে যাই তখন মিথী লা জিজ্ঞেস করে রাহিমার আমার কি হয়? পরে আমি বলছি আমার বেস্ট ফেন্ড । ও আমাকে আবার ও ইগনোর করে চলে গেলো । আমি আবারো মন খারাপ করে ক্লাসে বসে ছিলাম আর রাহিমা ক্লাসে আমার মন ভালো করেছে । এই ভাবেই চলছিলো আমাদের বন্ধুত্ব।হুম হঠাৎ মিথীলা আমার কাছে এসে আমাকে অপশান দেই আমি কি মিথীলাকে নিবো নাকি রাহিমাকে নিবো।আমি চুপ হয়ে গেলাম, অনেক আঘাত পেয়েছি এই ছোট কথায়। তবে আমি অপশান জিনিস টা পছন্দ করি না তাই আমি মিথীলার সাথে আর কথা বলি নি তবে ওর সাথে বসতাম একদিন ও আমাকে অপমান করে ওর পাশ থেকে উঠিয়ে দিয়েছে । আর আমি লাস্ট বেঞ্চে চলে গেলাম একা বসেছি। রাহিমা আমাকে দেখছিলো বার বার।আমি লাস্ট বেঞ্চে বসে ভাবতে থাকি , আমার ছোট্ট ভুল টাই তোরা দেখলি কিন্তু তোদের হাজার ভুল ক্ষমা করে তোদের পাশে থেকেছি,যেই আমি কখনো ফোন মানে কি চিনতাম না সেই আমি তোদের জন্য ফোন ধরেছি।যেই আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলতাম না সেই আমি তোদের জন্য তোদের bf এর সাথে কথা বলছি । তোদের অবহেলা মাথা পেতে নিয়েছি। তোরা যা বলতে আমি তা করেছি । পড়ালেখা ও ছেডে দিয়েছি। ফোন নিয়ে তোদের সাথে কথা বলেছি । নিজেকে কেমন করে পেলেছি। বাবা মায়ের কাছে তোদের জন্য খারপ হয়েছি আজ তোরা আমাকে বলছিস রাহিমাকে নিবি নাকি আমাকে নিবি । কিন্তু আমি তোদের বলতে চাই যে তোরা যখন তোদের অন্য বন্ধু নিয়ে আমার কাছে বলতি আমি ভাবতাম হয়তোবা বন্ধু অনেক করা যাই তবে অনেক কষ্ট হতো আমার। আর তোরা আমাকে সামান্য ভূলের জন্য এতো অপমান করলি , বিশ্বাস ঘাটক বানালি,
সবার কাছে খারাপ বানালি ।পরে এইসব ভাবতে ভাবতে
আমি ও প্রতিজ্ঞা নি আমি আর কখনোই মিথীলার সাথে বসবো না যতোক্ষন ও না বলবে। দুরত্ব হয়ে যাই আমাদের মাঝে।আমিও আর কখনো মিথীলার কাছে যাই নি রাহিমা আমাকে আগলে রেখেছে। একবার ও একটা ছেলেকে পছন্দ করে আর ওই ছেলেটার জন্য আমার আর রাহিমার মধ্যে ঝগড়া হয়

আরো পড়ুনঃ  রংপুরের লেখিকা নিলুফার জাহান রুবাইয়া'র সেরা গল্প “দাদুর বঙ্গবন্ধু”

অনেক কঠিন ঝগড়া,ফেন্ডশিপ টা শেষের দিকে পরে আমি ও অনেক ভেঙে পড়েছি । ফিরে পেতে চেয়েছিলাম ওকে পরে ও একদিন আবার আসে সব ভুলে গুলো শেষ হয়ে যাই দুইজনের ফেন্ডশিপ অনেক গভীর হয়ে যাই এখনো আছে কিন্তু পরশু মিথীলা আমার কাছে আসছে আর আবার ও আমাকে অদ্ভুত প্রশ্ন করে।আগের মতোই আমি উওর দি নাই কারন আমি তো কিছু প্রকাশ করতে চাই না
তাই আমি বলি কিছু জিনিস দূর থেকেই সুন্দর
ও আমাকে কিছু না বলে বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন করে।আর আমি সেই গুলোর উওর দি নাই কারন আমি চাই নি ও কষ্ট পাক কিন্তু আমার চুপ থাকা টাকে ও কাজে লাগিয়েছে সবার সামনে ক্লাসে আমাকে ২টা থাপ্পড় মেরেছে পরশু ।আমি মনে মনে ভাবি অযথা আমাকে কিছুই না যেনে মেরেছিস একদিন আপসোস করবি।রাহিমা পাশে ছিলো আমাকে থাপ্পড় মেরেছে আর ও রেগে মিথীলাকে মারতে গেছে । আমি রাহিমাকে দূরে সরিয়ে পেলছি আর আমার কসম দিয়ে চুপ করিয়ে রাখছি।
যাতে কিছুই না বলে।তারপর কাল কে আমি রেডি হয়ে মাদ্রাসা ই যাবো কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো। আর পায়ে ব্যথা ছিলো তাই রিকশা করে চলে গেলাম গিয়ে দেখি মিথীলা দাডিয়ে আছে।আমি ওকে ইগনোর করে চলে যাচ্ছিলাম তখন মিথী লা আমার হাত ধরে বলে কালকের ঘটনার জন্য sorry।আমি চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলাম কোন কথা বলি নি ক্লাসে গিয়ে দেখি রাহিমা ও আসছে কি যেনো লেখতেছে । তখন মিথীলা আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখে বলে আজকে আমার সাথে বসবি।পরে আমি সব দিকে তাকিয়ে দেখি সেকেন্ড টুল বাদে সব গুলোই পুরো তাই মিথীলার সাথে বসছি । রাহিমার দিকে তাকিয়ে দেখছি ও রেগে আছে।কিন্তু আমি কিছুই করতে পারি নি মিথীলা আমাকে বাহিরে নিয়ে গেছে এবং বিভিন্ন কথা বলছে ক্ষমা চাইছে।

আরো পড়ুনঃ  বাবা হারানোর কষ্ট | আব্বু তুমি ফিরে এসো

কান্না করছে ইত্যাদি কিন্তু মিথীলার কান্না ছিলো একসময় আমার দুর্বলতা কিন্তু কাল আমি ওর কান্না দেখে হাসছি আর বলি এখন কান্না করে লাভ নেই আমার থেকে কোনো উওরের আশা করিছ না।
আমায় যেতে দে । ও আমার পায়ে পডে গেছে আমি ও বসে গেছি পিছনে লোকজন ছিলো। পরে ওকে উঠিয়ে শক্ত করে হাত ধরলাম। আর বলছি এইসবের মানে কি । একবার চাস দূরে যাই আমার পিরে পেতে চাস।

মনের মধ্যে অনেক কথা থাকলেও কিছুই বলিনি । মিথীলা আবার বলে রাহিমা আমাদের মাজে কেনো আসছে আমি এবার ওর হাত টা ছেডে দিলাম কিন্তু ও শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।আমি বলছি আমার সাথে কেনো এমন করছ বার বার ই ? কেনো এমন করছ তোদের মধ্যে ঝগড়া চাই না আমি সব কিছু ঠিক রাখতে চাই কিন্তু বার বার ই তোদের মিলিয়ে দিতে চাইছি কিন্তু বিনিময়ে ভুল বুঝেছিস আর কি চাস?
তখন ও কিছু বলে নি। আর ঘন্টা পডে গেছে ক্লাসের তাই চলে যাচ্ছিলাম । ও আমার হাত টা ধরে বলে এই হাত ছাডার জন্য ধরি নাই । আমি আবার ও নিজের মনে বলি ছেডে তো গিয়েছিস।আমি সব কিছু নিজেকে ই বলি কখনোই ওদের কাছে প্রকাশ করি না কারন ওরা কষ্ট পাবে বলে।পরে ও বলেছে আমি আবার ও আগের মতো ওর সাথে আর রাহিমার সাথে বসতাম পরে আর কি করার ওকে একটা সুযোগ দিয়েছি ।
রাহিমা অনেক কষ্টে সব বুঝিয়ে বলছি।রাহিমা অভিমান করলে ও আমার কথা রাখছে।আমি যখন রাহিমার সাথে না বসি ও একা থাকবে তাও কারো সাথে কথা বলবে না । কিন্তু মিথীলা আমি না থাকলেও সবার সাথে কথা বলে। গল্প টা বন্ধুত্বের , তবে শেষ নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *