আধুনিকতার আবরণ
মালুফা ইসলাম
মারিয়াম শুয়ে আছে। অন্ধকারে সে নিতান্তই ভয় পায়। তাই সে কখনো একা ঘুমাতে পারে না, মায়ের সাথে ঘুমায়।
হঠাৎ চোখ খুলে গেলো, ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে ওর রুম টা! মাকে ডাকছে মাও কথা বলছে না। হাত দিয়ে পাশে দেখতেই যাবে, ওমনি হাত আটকে গেলো, নাড়ানো যাচ্ছে না!
ভেবেছে হয়তো কাঁথার সাথে আটকে যাচ্ছে। কিন্তু একি..! ওর গায়ের উপর পিচ্ছিল কিছু লাগছে!!
মনে হচ্ছে ঠাণ্ডা কিছু। কিন্তু কি থাকতে পারে? হাত দিয়ে দেখতেই যাবে ওমনি আঙ্গুলে বিষাক্ত কিছুর কামড়…
যন্ত্রণায় পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে! ও চিৎকার করছে…! মা বাবা, ভাইয়ারা কেউ আসছে না! অথচ ও সবার কত্ত আদরের, তাহলে কেন আসছে না!?
এবার মনে হচ্ছে পুরো শরীরে ঠাণ্ডা কিছু অনুভব হচ্ছে! একি!
কোটি কোটি সাপ! ওর এত যত্নে বড় করা চুল, এত ঘন চুল গুলো সব সাপ হয়ে গেছে!! (যে চুল গুলো ফেইসবুকে বেগানা পুরুষের চোখ জুড়াতো)
ও চিৎকার করে ডাকছে আর ভাবছে, আমার একটু হাত কেটে গেলে সবাই দৌড়ে আসতো, এখন আমায় বার বার মেরে ফেলছে বিষাক্ত কেটোরা! এখন কেন তারা কেউ আসছে না!?
পুরো শরীরে বিষাক্ত সাপেরা কামড়ে যাচ্ছে! ওর এত যত্ন করে ঘন করা চুল এখন ঘন সাপ হয়ে কামড়াচ্ছে!!!
এরই মধ্যে বিষাক্ত বিচ্ছু ঢুকে পড়লো,
বিচ্ছু গুলো ছোট করে কামড়ে ধরে রাখছে! রক্তাক্ত শরীর টা আরও বিষাক্ত হয়ে উঠছে!! পুরো শরীরে সমানে কামড়ে যাচ্ছে,, যন্ত্রণায় ও কাতরাচ্ছে! কেউ আসছে না! (এগুলো আর অন্য কিছু না, বন্ধুদের আড্ডায় দেওয়া গালি গুলো বিচ্ছু হয়ে এসেছে)
হঠাৎ বিকট আওয়াজ!! ওর কানের পর্দা ফেটে রক্তে ভেসে যাচ্ছে!
আচমকা নিজ থেকেই ওর চোখ খুলে গেলো! একটা কাটা মাথা ওর ঠিক চোখের এক ইঞ্চি উপরে, ওর দিকে তাকিয়ে আছে!
না ও ভয়ে চোখ বন্ধ করতে পারছে না। বন্ধ হচ্ছে না!!! কী বিচ্ছিরি চেহারা, এক চোখ নেই, মুখের চামড়া নেই, রক্ত ছুয়ে ছুয়ে পড়ছে ওর মুখে! মাথার উপরের অংশ নেই বলে আরেকটি লাল টকটকে চোখকে এত্ত বড় দেখাচ্ছে!! মগজ গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে! কী ভয়ংকর কাটা মাথা…
এবার চারিদিক থেকে অদ্ভুত কিছু প্রাণী এলো! এরা ওকে চিবিয়ে হাড়গুলো ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো করে ফেলে দিচ্ছে; আবার শরীরটা জোড়া নিচ্ছে, আবারও মুখে নিচ্ছে তারা..! এভাবে চলছেই….
হঠাৎ কারো ধাক্কায় মারিয়ামের ঘুম ভাঙ্গলো!
“কি হলো? এমন গোঙ্গাচ্ছিলি কেন?
স্বপ্নে কিছু দেখেছিস??”
ওর কোনো জবাব নেই ওর শরীর কাঁপছে অনবরত। তাড়াতাড়ি ফোন নিলো।
ওর সব ছবি ডিলিট দিলো, যত অশ্লীল পোস্ট ছিল সব ডিলিট করলো। তারপর আইডি ডিলিট করে দিলো সারাজীবনের জন্য!
প্রতিজ্ঞা করলো ওর বেদ্বীন বান্ধবী আর জাস্ট ফ্রেন্ড নামক ছেলে বন্ধুদের সাথে কখনো সম্পর্ক রাখবে না!
তারপর উঠে তাহাজ্জুদে অঝোরে কাঁদতে লাগলো। সারাজীবনের সব গুনাহ গুলো চোখে ভাসছে ওর!
ওর মাও আড়ালে চোখের জল মুছলো।।
তিনি মেয়েকে এত বুঝানোর ট্রাই করলেন। মেয়ে তো বুঝতে চাইতোই না, উল্টো বলতো,
“আমরা আধুনিক যুগের মেয়ে মা। তোমরা এসব বুঝবা না। এই যুগে ছেলেদের সাথে ঘোরা-ফেরা, আড্ডা দেওয়াটাই স্মার্টনেস! নয়তো ফ্রেন্ডরা আমায় সেকেলে ভাববে!”
তিনিও বুঝলেন, তার দোয়া আল্লাহ ফিরাননি…!