
সন্ধ্যার আকাশে মেঘ
~ শারমিন ইতি
পশ্চিম আকাশে সূর্য রক্তিম আবরন ধারন করেছে, সন্ধ্যে নামার আগের মুহুর্ত মেঘে ঢাকা আকাশ হয়তো বৃষ্টিও নামবে ক্ষনিক পর। সামনের খেলার মাঠের খেলতে থাকা ছেলে গুলো বাড়ি ফেরার তারায়, পাখিরা উড়ে যাচ্ছে তাদের নিজ গৃহে। সামনের গাছের ডালে দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে দুই পাখি এদের যেন বাসায় ফেরার তারা নেই। অভিমান ভাঙানোর প্রচেষ্টা চলছে।
– বাসার ভিতর এত কাজ পরে আছে, অথচ তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো?
রাগান্বিত পুরুষ কন্ঠটা সন্ধ্যার পাশে এসে দাঁড়ালো, সন্ধ্যা এখনো তাকিয়ে আছে সেই গাছের ডালের পাখির দিকে।
– কি দেখছো এক মনে তাকিয়ে ওইদিকে? মেঘ সেই রাগি ভাব নিয়েই তাকালো সামনের দিকে।
– মেঘ! আপনি মান অভিমান বুঝেন? ওই দেখুন একটা পাখি অন্য পাখিটার অভিমান ভাঙাচ্ছে।
– পাখিদের আবার মান অভিমান, হাস্যকর। মুখে এক অবজ্ঞা ময় হাসি রেখেই উত্তর দিলো মেঘ।
– পাখিদের ও মান অভিমান থাকে, মানুষের ও থাকে শুধু বুঝতে হয়।
সন্ধ্যা চলে আসতে গিয়ে আবার থেমে গেলো।
– আপনি যাকে ভালোবাসতেন পরিবারকে বুঝিয়ে তাকে বিয়ে করলেই পারতেন। আপনি আমি সে সবাই ভালো থাকতে পারতাম।
– তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো?? আমাকে বিয়ে করে ভালো নেই তুমি?
– হ্যা অনেক ভালো আছি ভালোবাসা সম্মান ছাড়া মানুষ অযত্নে এক দায়িত্ব নিয়ে বাঁচে ঠিক তেমন।
মেঘ সন্ধ্যার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো।
– আচ্ছা দেখুন
আকাশের দিকে তাকিয়ে সন্ধ্যা আর মেঘ কত গভীর ভাবে একে অপরের মাঝে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
যেন একে অপরের সৌন্দর্য,
আমি বিহীন এমন এক প্রাকৃতিক সন্ধ্যা একদিন উপভোগ করবেন।
আচ্ছা আপনি কি আমাকে মনে করে একটু কাঁদবেন তখন!
ওহ কেনই বা কাঁদবেন হয়তো মনেও পড়বে না। আমি কে আপনার যে কাঁদবেন!।
কথাগুলো বলে সন্ধ্যা আর দাঁড়ালো না। কাকে সে শুনাবে মন খারাপে গল্প কে আছে তার, যে ভালোবাসা, মর্যাদা তাকে চেয়ে নিতে হবে সেটা মৃত্যু হোক তাও চায়না সে।
মেঘের অফিসের কলিগরা আজ দুপুরে আমন্ত্রণে এসেছিলো
সবাই খাবারের যখন প্রশংসায় মশগুল, মেঘ সবার সামনে বললো এত প্রশংসার কি দরকার, বেশি প্রশংসা করলে বাড়ির বউ পরে বাড়ির সামনে রেস্টুরেন্ট দিয়ে বসবে। কি আজব লাগবে!! সবাই চুপ হয়ে গেলো সন্ধ্যার চোখ ঢুকরে যেন বের হতে চাইলো দুফোঁটা জল। সে নিজেকে সামলে নিয়ে সরে গেলো সবার সামনে থেকে। মেঘ হাসতে ছিলো শুধু্।
…………………….……………………………………………………….
হাজার ও বসন্ত আসে আবার চলে যায়, কখনো নিয়ে আসে সুখ কখনো দুঃখ। শুধু প্রকৃতির এক নিয়ম নীতি অভ্যাসে মেঘের পাশে সন্ধ্যা রয়ে যায়। সুখ দুঃখে প্রকৃতি পানে তাকালেই তাদের উপলব্ধি করা যায়।
আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘ যেন ডুব দিলো সেই নির্মম এক দিনের মাঝে,
মেঘের ছোট বোন মীরার বিয়ের শপিং করতে গিয়েছিলো সবাই। ফেরার পথে,
– আমাকে একটু রাস্তা পার করে দিবেন? হাত ধরে? বার বার গাড়ি আসছে বুঝতে পারছি না ভয় লাগছে। ভয়ার্ত মুখ নিয়ে মেঘের কাছে আবদার করলো।
– এখন সবার সামনে আমি তোমার হাত ধরে রাস্তা পার করবো?? রাস্তা পার হতে পারোনা বাসা থেকে বের হও কোন সাহস নিয়ে?? আপদ সব আমার উপরেই জোটে রাগান্বিত কন্ঠে কথা গুলো শেষ করে মেঘ রাস্তা পারের জন্য সামনে এগোলো।
সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে ছিলো স্তব্ধ হয়ে আবসা চোখে মেঘের প্রস্থান দেখছিলো।
– এখনো দাঁড়িয়ে কেন আসুন। মেঘের রাগি গলা শুনে সামনে পা বাড়ালো সন্ধ্যা…..।
হঠাৎ সবার চিৎকারে রাস্তার অপাশে গিয়ে মেঘ ফিরে তাকালো পিছনে।
রাস্তার মাঝে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে সন্ধ্যা গাড়ি টা মনে হয় মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে থিতলে রয়েছে মাথাটা।
রাস্তার সবাই বলাবলি করছে মেয়েটা গাড়ির সামনে ওমন না দাড়ালেই পারতো, আবার কেউ কেউ বলতে লাগলো গাড়ির গতি বেশি ছিলো।
….…………………………………………………………………………….
চোখে পানির আগমন উপলব্ধি করলো মেঘ। সন্ধ্যা একদিন বলে ছিলো সে না থাকলে আমি কাঁদবো কিনা! কেনই বা কাঁদবো কে ও??
আসলেও কে ও? বিয়ের প্রথম দিন রাতেই যখন বলে দিয়েছি আমার কাছে কখনো স্ত্রী অধিকার পাবেনা আর আশাও করবে না কখনো। সন্ধ্যার আর যায়গা হয়নি বিছানায় নিচেই অযত্নে পরে থাকতে থাকতে কেটে যেত রাত।
অবহেলা অযত্নে মেরে ফেলেছে সন্ধ্যাকে না ওটা ছিলো রোড এক্সিডেন্ট না ছিলো আত্নহত্যা ওটা খুন।
যেটা দিনকে দিন করেছে।
আনাচে-কানাচে পরে থাকতো মানুষ টা, অপ্রয়োজনেও তাকে দেখাা যেত, আজ খুব দেখার ইচ্ছে কিন্তু নেই কোথাও নেই।
মেঘের খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না, সে কান্নার ও অযোগ্য খুনিদের কাঁদতে নেই তারা পাষান হবে। একটা জীবন কেটে যাবে খুনি নাম হয়ে।
মেঘ বিহীন সন্ধ্যা!! উহু সন্ধ্যা বিহীন মেঘ।
অবহেলা অযত্নে মানুষ মরে প্রতিদিন, যখন ধৈর্য আর সহন ক্ষমতা হারিয়ে যায় তখন শুধু নিজ ইচ্ছেতে নিশ্বাস নিতে ভুলে যায়।