
অদৃশ্য তরীর গন্তব্য
মাহজাবীন তাসনীম রুহী
সেদিন হেমন্তের বিকেল।
রোদে হালকা কুয়াশার আস্তরণ, বাতাসে ধুলোর গন্ধ।
তুমি ফিরে এসেছিলে শহরে—সেই শহরে, যেখান থেকে আমি বহুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
পুরোনো রাস্তা, পরিচিত চায়ের দোকান,
আর সেই পরিত্যক্ত ঘরটা—যার দেয়ালে একসময় আমাদের নাম লেখা ছিল চক দিয়ে।
তুমি দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলে, চুপচাপ।
ঘরের ভেতর এখন শুধু ধুলা, ছেঁড়া পর্দা আর বাতাসের আওয়াজ।
আমি তখন জানালার পাশে ছিলাম—না, বাস্তবে নয়, হয়তো স্মৃতির কোনো অবশিষ্ট রূপে।
তুমি জানোনি, আমি তোমায় দেখছি।
তোমার চুলে এখন কিছু রুপালি রেখা,
কণ্ঠে এক অচেনা ক্লান্তি।
তুমি তাকিয়ে আছো সেই পুরোনো চেয়ারে,
যেখানে একদিন আমি বসে তোমার জন্য কবিতা লিখেছিলাম।
তুমি ফিসফিস করে বললে,
“তুমি হেমন্তে খুঁজেছিলে আমাকে, অথচ আমি পাইনি।”
তোমার কণ্ঠে কোনো অভিযোগ ছিল না _ছিল কেবল এক নীরব ব্যথা।
আমি চাইলাম বলতে, “বসন্তজুড়ে আমি ছিলাম তোমার পাশে,
তোমার নিশ্বাসের কাছাকাছি কোথাও।”
কিন্তু পারলাম না
কারণ আমি তখন আর এই পৃথিবীর ছিলাম না।
তুমি হয়তো বুঝেছিলে।
তোমার চোখে হঠাৎ কিছু জমে উঠল—
হয়তো জল, হয়তো অনুশোচনা, হয়তো কেবল শূন্যতা।
তুমি ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে,
কুয়াশায় ভিজে যাচ্ছিল তোমার শার্টের কাঁধ।
আমি জানতাম, এই ফিরে যাওয়া চিরকালের।
আমাদের দেখা হবে না আর কখনও,
তবু কোথাও—কোনো এক অদৃশ্য তরীর গন্তব্যে
আমরা একসাথে ভেসে থাকব,
সময়ের সীমানার বাইরে।
- মাহজাবীন তাসনীম রুহী
- অনার্স ২য় বর্ষ
- এম সি কলেজ সিলেট
- বিভাগ: রাষ্ট্রবিজ্ঞান




