গোপনে ভালোবাসি কলমে সেলিনা আক্তার সেতু

গোপনে ভালোবাসি
সেলিনা আক্তার সেতু

আসসালামু আলাইকুম সকল গুরুজনদের প্রতি।
ভালোবাসা খুব অদ্ভুত ব্যাপার -স্যাপার না চাইতেই হয়ে যায়। কিন্তু সেটা প্রকাশ করা আমার দ্বারা কখনোই সম্ভব হয়নি। প্রচুর পরিমাণে আড়ালে থেকে ভালোবসি। মনের গহিনে জমে আছে সেই পবিত্র ভালোবাসাগুলো। যা প্রকাশ করতে আমার লজ্জা আর ভয় লাগে। আমি কখনোই প্রিয়জনদের ভালোবাসা অর্জন করতে পারিনি ।কারণ মিষ্টি কথায় মন ভোলানোর মেয়ে আমি নয়।আমি একঘেয়ে। সবার সাথে সহজে মিশে যেতে পারিনা। আবার যার সাথে মিশে যায় তাকে ছাড়া কিছুই বুঝিনা। আমার প্রথম ভালোবাসা আমার আব্বু-আম্মুর প্রতি। তারা আমাকে প্রচুর বিশ্বাস, ভালোবাসা,সম্মান,প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কিছু দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি আজ পর্যন্ত কিছুই নাকি বাবা মায়ের কাছে জেদ করিনি বা চাইনা।এটা আমার বাবা মায়ের উক্তি। আমার আব্বু আম্মু আমার প্রশংসা সব সময় করে প্রতিটি মানুষের কাছে। আর কেউ যদি আমার পড়ার ব্যাপারে কিছু বলে,তখন আমার বাবা গর্ব করে বলেন। আমার মেয়ের শুধু একটা ইচ্ছা পড়ালেখা করার। আমার মেয়ের আগ্রহ আছে বিদায় আমি পড়াচ্ছি। আমার ২য় ভালোবাসা আমার প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি আমাকে পড়ালেখায় এতো উৎসাহ দেওয়ার জন্য। আমাকে সব সময় সার্পোট করার জন্য। মা বাবার পরে কেউ যদি আগলে রাখে সেটা আমার প্রিয় শিক্ষকরা। আমাকে মা বাবা হয়তো টাকা দিয়ে পড়ায়। কিন্তু ভালো শিক্ষা তো স্যাররা দিয়েছেন। সন্তানের মতো ভালোবেসেছেন। সুখে দুঃখে ভালোবেসেছেন।আমরা মেয়েরা চাইলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি সেই সৎ সাহস যুগিয়েছেন। অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করে তুলেছেন। আমি তাদের ভালোবাসায় প্রতিবার মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি। যখন আমি কয়েকদিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যায় তখন বুঝতে পারি ঠিক কতটা ভালোবাসলে তাদের ছাড়া থাকাটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। অজান্তেই চোখের পানি টলমল করতে থাকে। আমি আমার আব্বু আম্মুকে প্রচুর পরিমাণে ভালোবাসি। আর শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা তখই বুঝতে পারি। যখন তাদের ছেড়ে চলে আসি। আমি আজ ও তাদের প্রচুর ভালোবাসি মিস করি। কিন্তু বলতে পারিনা। আমাকে আমার স্যাররা একদিন যদি কোন কারণে না যেতাম। বাসায় চলে আসতো। আর একদিন যদি পড়া না পারতাম। দজ্জালের মতো মারতো। ক্লাস ৮ এ একবার খেয়েছিলাম।৪-৫টা বেত নিয়ে মেরেছিল৷ রাগে তো কয়েকদিন যায়নি। আর আব্বু আম্মুকে বলায় তারা তো আর পড়াবেনা বলেছিলো ওই স্কুলে। কিন্তু স্যাররা ঠিকই বাসার ঠিকানা নিয়ে রাতের ১০ টায় চলে আসে বাসায়।তারপর স্যার আর মারবেনা বলেছে কখনো। স্যার সব চেয়ে বেশি আমায় ভালোবাসতো। আমি না খেয়ে গেলে স্যার ঠিকই বুঝে যেতো। আমাকে নাস্তা খাওয়াতো। আচারের গাড়ি আসলে আমাকে ১০০ টাকা দিয়ে বলতো তোদের যা খাইতে মন চায় খা।আমরা যখন প্রাইভেটের টাকা দিতাম। ফোসকা ওয়ালা কে এনে আমাদের ইচ্ছা মতো ফোসকা খাওয়াতো। সেটা ছিলো আমাদের প্রতি স্যারদের পবিত্র ভালোবাসা।আমি সব স্যারদের খুব মিস করি। কিন্তু আমি কল্পনা ও করিনি আমাকে কখনো গ্রামে চলে আসতে হবে।তারপর কলেজে ভর্তি হওয়ার পর পেলাম আরও কিছু স্যারদের।খুব সুন্দর করে আমাদের ভালো মন্দের শিক্ষা দেয়,বুঝতে শিখায় কিভাবে আমাদের পড়লে পড়া সহজ হবে আর সব সময় স্যারদের সহযোগিতা পেয়েছি।খুব ভালো আমাদের বিএমের স্যারগুলো। সব সময় বাবা মায়ের মতো সার্পোট করে। ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।সকল গুরুজনদের।

আরো পড়ুনঃ  পরাণ কলমে রূপক বরন বড়ুয়া

 

নিয়মিত পড়ুন এবং লেখুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *