চলো না হারিয়ে যাই ২য় পর্ব

চলো না হারিয়ে যাই ২য় পর্ব
লেখকঃ জয়ন্ত কুমার জয়

মিষ্টি আপুর কো”মরে হাত রাখতেই আমার সারা শ”রীর শিউরে উঠলো।আকষ্মিক যে ব্যাপারটা ঘটলো সেটায় আমি প্রচন্ড ধাক্কার মতো খেলাম।আমার মাথা শূন্য হয়ে গেলো,দেখলাম মিষ্টির চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।

আমি সরে দাঁড়ালাম।নিজেকে খুব তুচ্ছ আর নিকৃষ্ট মনে হতে লাগলো।মিষ্টি আপু চোখের জল মুছতে মুছতে বললো
” বিষণ্ন! তুই আমার সাথে এসব….”

বাকিটুকু বলার আগেই মিষ্টি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।আমি বুঝতে পারছি না কি করবো।আমি থতমত খেয়ে বললাম

” এই মিষ্টি,তুমি প্লিজ কান্না থামাও,আমি বুঝতে পারিনি।আমি….”

মিষ্টি হাত ইশারায় আমার কথা থামিয়ে দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো ” বিষন্ণ তুই আমার চোখের সামনে থেকে সর। নইলে আমার মতো খারাপ কিন্তু কেউ হবে না “

মিষ্টি যে প্রচন্ড রেগে আছে সেটা বেশ বুঝতে পারলাম।তাই কিছু না বলে ওর ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম।

মেসের ছাদে চুপচাপ বসে আছি।সারা শরীর ঘামছে।এমন নিকৃষ্ট একটা ভাবনা আমার মাথায় এলো কিভাবে এই ভেবে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।এই সবকিছু হয়েছে ওই লেকচারারের জন্য।

প্রচন্ড রাগে সাপের মতো ফস ফস করতে করতে উপস্থিত হলাম মিষ্টিকে দেখতে আসা সেই লেকচারারের বাড়িতে।বাড়ির গেইটে মোটা নেমপ্লেটে লেখা কৌশিক।লেখাটায় কষে একটা ঘু’ষি বসিয়ে দিলাম।এতে নেমপ্লেটের কিছু না হলেও আমার হাতের যে বারোটা বেজে গেছে সেটা বেশ বুঝতে পারলাম।হাত পে’টের সাথে চেপে ধরে প্রচন্ড ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম।

ঘুম ভাঙ্গলো পরেরদিন সকালে।ফোনে সময় দেখলাম দশটা পনেরো বাজে।আজ ক্লাস ১২ টায়।ফোনের দিকে হাত বাড়াতে টের পেলাম ডান হাত নাড়াতে পারছি না।কাল রাতের ঘু’সিটা বড্ড জোরে দিয়ে ফেলছি।

কলেজে ঢুকে আমার প্রথম কাজ মিষ্টিকে খোঁজা।মিষ্টিকে খোঁজা তেমন কঠিন কোনো কাজ না।ও বেশিরভাগ সময় লাইব্রেরিতে,নইলে ক্যাম্পাসের বাঁধানো মাঝারি সাইজের লিচু গাছটার নিচে বসে থাকে।

অবাক করার ঘটনা হলো আজকে মিষ্টি লাইব্রেরিতে বা লিচু গাছের কোথাও নেই।মিষ্টির দুইটা বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পারলাম মিষ্টি আজ কলেজে আসেনি।

হঠাৎ কানে ভেসে এলো কেউ যেন আমায় ডাকছে।আশেপাশে তাকালাম।দেখলাম আমার ঠিক পেছনেই দুঃখ বিলাশ চত্তরে লিওন ভাই বসে আছে।লিওন ভাই কলেজের রাজনীতির সাথে আঁটসাঁট ভাবে জরিত।কাছে যেতেই উনি বললেন

আরো পড়ুনঃ  উপন্যাস বেরঙিন পথে শুরু হলো কথা

” কাল রাতে তুই কই ছিলি? “

আমি নির্লিপ্ত স্বরে বললাম ” মেসে “

লিওন ভাই আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বললো ” তোর হাতে ব্যান্ডেজ কেন? কাঁচ লেগে কে’টে গেছে নাকি?”

আমি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললাম ” আরে না,কাঁচ আসবে কই থেকে।মেসে রান্না করতে গিয়ে একটু পু’ড়ে গেছে “

লিওন ভাই ঠো’ট বাকিয়ে হেসে বললো ” কাল রাতে কৌশিক স্যারের বাড়িতে গিয়ে নিচ তলার সবকটা গ্লাস ভেঙ্গেছিলি কেন? “

কথাটা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম।একথা লিওন ভাইয়ের তো জানার কথা না।তবুও যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম

” কৌশিক স্যারের বাড়ির গ্লাস আমি কেন ভাঙ্গবো “

লিওন ভাই অট্ট হেসে বললো ” সিসি ক্যামেরার বলে যে একটা ডিভাইস আছে সেটা হয়তো তোর অজানা “

সাথে সাথেই আমার শরীর কেমন যেন হিম হয়ে আসলো।সত্যিই তো!তবে কি সিসি ক্যামেরায় আমায় দেখা গেছে?লিওন ভাই বললো

” মাস্ক পড়া থাকলেও ওইটা যে তুই ছিলি সেটা আমি জানি।তুই ফেঁসে গেছিস বিষণ্ন,বড্ড বড় ভুল করে ফেলছিস।কাল প্রিন্সিপাল তোকে ডেকেছে “

” আমায় কেন ডেকেছে? “

” কি জানি।কলেজ থেকে বহিষ্কার করে দিতেও পারে।এমনটাই তো শুনলাম “

আমি আর কিছু বললাম না।যদি এটা প্রমাণ হয় যে আমিই গ্লাস ভেঙ্গেছি, তাহলে আমায় কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হবে এটায় কোনো সন্দেহ নেই।আমি এতো বোকার মতো একটা কাজ করলাম কিভাবে!সিসি ক্যামেরার কথা আমার মাথাতেই ছিলো না।এই মুহুর্তে মিষ্টির সাথে কথা বলা প্রয়োজন।আমি যেকোনো ঝামেলায় পড়লে মিষ্টিই আমার শেষ সম্বল।সে কিভাবে যেন আমায় সব ঝামেলা থেকে ঠিক বেড় করিয়ে আনে।আমার বিশ্বাস মিষ্টি এবারেও আমায় ঠিক সামলে নিবে।কিন্তু কাল রাতে যা করছি সেটা নিয়ে ও এমনেই অনেক রেগে আছে।

এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে মিষ্টিদের বাড়ির সামনে আসলাম।মিষ্টিকে ফোন করতে গিয়ে দেখি নাম্বার ব্লোক করে দিয়েছে।সোশাল সব যায়গা থেকে ব্লোক! দারোয়ান আমায় দেখে গেইট খুলে দিলো।বাড়িতে ঢুকে দেখি মিষ্টির মা রান্না করছেন।ওনা কাছে গিয়ে বললাম

” আন্টি এটা কি রান্না করছো? “

আন্টির হাসি মিষ্টির মতোই অসম্ভব সুন্দর।মিষ্টি সম্ভবত আন্টির কাছ থেকেই এতো সুন্দর করে হাসতে শিখেছে।আন্টি হেসে বললো

আরো পড়ুনঃ  উপন্যাস বেরঙিন পথে শুরু হলো কথা ২য় পর্ব

” পিঠা বানাচ্ছি।খেয়ে যাবি কিন্তু “

” আচ্ছা খাবো।তার আগে বলো মিষ্টি আপু কই “

” ও মনে হয় ছাঁদে গেছে।গিয়ে দেখ “

মিষ্টি ছাঁদের মাঝখানো রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।বিষণ্ন দুহাতে মিষ্টির পা চেপে ধরে বসে আছে।পা চেপে ধরে বারবার বলছে ” মিষ্টি আমার ভুল হইছে।এমনটা আর হবে না।প্লিজ এবারের মতো মাফ করে দাও “

প্রতিত্তোরে মিষ্টি মুখ ভোতা করে দাঁড়িয়ে আছে,কিছুই বলছে না।বেশ কিছুক্ষন এভাবে পা চেপে বসে থেকেও যখন মিষ্টির রাগ করছে না তখন বিষণ্ন ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে করতে বললো

” আমি একটা ঝামেলা করে ফেলছি।তুমি হেল্প না করলে আমায় কলেজ থেকে বেড় করে দিবে “

মিষ্টি মুখ ভোতা করেই বললো ” বেড় করলে করবে।আমি কি করবো “

মিষ্টির কথা শুনে বিষণ্নর মুখটা প্যাচার মতো হয়ে গেলো।মিষ্টি যদি সত্যিই কিছু না করে তাহলে তো নির্ঘাত কলেজ থেকে বের করে দিবে! এসব ভেবে বিষণ্ন আগের থেকেও জোরে শব্দ করে কান্না করতে করতে বললো

” নায়ায়ায়া,তুমি এটা করতে পারো না।বাবা যদি জানতে পারে যে স্যারের বাড়িতে হাম’লা করার জন্য আমায় কলেজ থেকে বেড় করে দিছে তাহলে আমায় পেঁয়াজের মতো কুচিকুচি করে কে’টে পিঁয়াজু বানায় খেয়ে ফেলবে।তুমি আমায় বাঁচাও প্লিজ,তোমার সব প্রাক্টিকেল আমি লিখে দিবো প্রমিজ “

বিষণ্নর এমন কথা শুনে মিষ্টির প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে।অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বললো ” পা ছার।ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতেছিস কেন?তুই তো দেখি বাচ্চাই থেকে যাবি সারাজীবন “

বিষণ্ন বাধ্য ছেলের মতো মিষ্টির পা ছেড়ে উঠে দাড়ালো।মিষ্টি কঠিন স্বরে বললো

” এই টুুকুতেই চোখের জলে নাকের জলে এক করে ফেলছিস।চোখ মোছ “

বিষণ্ন সঙ্গে সঙ্গে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছলো।বিষণ্নর এমন বাচ্চা ভাব দেখে মিষ্টির খুব হাসি পাচ্ছে।এই ছেলেটাকে দেখলে কেউ মনেই করবে না কলেজে পড়ে।মিষ্টি  মৃদু স্বরে বললো

” এখন বল কি হইছে “

” কৌশিক স্যারের বাড়িতে কাল রাতে গিয়ে নিচের ফ্লোরের সব গ্লাস ভেঙ্গে আসছি “

মিষ্টি ভ্রু কুঁচকে বললো ” তুই ভাঙ্গবি গ্লাস! আর সেটা আমার বিশ্বাস করতে হবে? “

আরো পড়ুনঃ  উপন্যাস বেরঙিন পথে শুরু হলো কথা পর্ব ৩য় 

বিষণ্ন আমতা আমতা করে বললো ” না মানে আমি বাইরে দাঁড়ায় ছিলাম।দুইটা পিচ্চিরে দিয়ে বাড়িতে ঢিল ছুড়ায়ে নিছি “

” তুই থাকতে পিচ্চিদের দিয়ে ঠিক ছুড়িয়েছিস কেন? “

বিষণ্ন মুখ ভেতা বলে বললো ” আমি অনেক কয়বার চেষ্টা করছি।গ্লাসে না লেগে অন্য যায়গায় লাগে।তাই পিচ্চি দুইটারে দিয়ে গ্লাস ভাঙ্গায় নিছি “

” তা হঠাৎ গ্লাস ভাঙ্গতে গেলি কেন? “

বিষণ্ন এর উত্তরে কি বলবে বুঝতে পারছে না।বিষণ্ন চাইলেও বলতে পারছে না যে ” তোমায় দেখতে এসছে, আর সেটা সহ্য করতে পারিনি জন্য রেগে গ্লাস ভেঙ্গে এসছি”।বিষণ্ণর চুপ থাকা দেখে মিষ্টি বললো

” কি হলো বল? “

বিষণ্ণ চোখ মুখ কুঁচকে বললো ” উনি কেন তোমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে?এটা আমার মোটেও সহ্য হয়নি।তাই “

” উনি বিয়ের প্রস্তাব আনলে তাতে তোর সমস্যা কি? “

বিষণ্ণর ইচ্ছে করছে মিষ্টির দুই গা’ল টিপে লাল করে দিতে।এই মেয়েটা এতো কিছু বুঝে,অথচ বিষণ্ন যে ওকে এতো এতো পছন্দ করে সেটা কেন বুঝে না?

মিষ্টি বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো ” আজকাল তোর দেখি সাহস বাড়ছে।স্যারের বাড়ির গ্লাস ভাঙ্গছিস,সিনিয়র আপুদের কি’স করার ট্রাই করিস “

মিষ্টির মুখে এই কথা শুনে বিষণ্নর মাথা দিয়ে ধোঁয়া বেড় হওয়ার মতো অবস্থা হলো।কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে লাগলো।বিষণ্ন লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো

” ইয়ে মানে,আসলে, মানে বিশ্বাস  আমি ওসব করতে চাইনি “

মিষ্টি ঠো’ট বাকিয়ে বললো ” কি’স করতে চাসনি? তাহলে কি করতে চেয়েছিলি?তার থেকে বেশি কিছু? “

বিষণ্ন বিষ্ময়ে চোখ বড়বড় করে একপলক তাকালো মিষ্টির দিকে।তারপর মাথা নিচু করে রইলো।বিষণ্নকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলতে পেরে মিষ্টির মনে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ হতে লাগলো।

চলবে?

>> চলো না হারিয়ে যাই গল্পের সকল পর্ব
লেখকঃ জয়ন্ত কুমার জয়

Facebook Golper Group
>> ফেসবুকে সকল গল্পের লিংক পেতে জয়েন করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *