বাবা দিবসে কিছু কথা, বাবা দিবস নিয়ে লেখা

বাবা দিবসে কিছু কথা ২০২৪

বাবা দিবসে কিছু কথার শুরুতেই বলতে চাই, প্রতিটি বাবা সুস্থ ও সুন্দর জীবন কল্পনা করছি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাবাদের ভূমিকা অপরিসীম। অনেক ক্ষেত্রে ১ থেকে ২০, ১৮, ২৫ অধিকাংশই ১৮ বছরের বেশি সময় বাবাদের উপর সম্পূর্ণ পরিমাণে নির্ভরশীল। এক পা থেকে আরেক পায়ে ফেলে পর্যন্ত বাবার ভূমিকা রয়েছে। পায়ে দেওয়া জুতা থেকে শুরু করে, চোখে দেওয়া চশমা পর্যন্ত বাবার টাকায় কেনা। এই থেকে আমাদের জীবনে বাবাদের গুরুত্ব বুঝতে আমরা কখনোই ভুল হবে না।

 

বাবা দিবসে কিছু কথা বলতে গেলে আমি একটি কথাই বলবো, এই বাবা দিবস বা মা দিবস একদিনে সীমাবদ্ধ নয়৷ যে একদিনে সীমাবদ্ধ রাখে, সে সন্তান হওয়ার যোগ্য নয়। আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের পিতা মাতার অথাৎ বাবা-মায়ের কাছে পরামর্শ নিয়ে চলার চেষ্টা করবো। এটাই আমাদের সফলত চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। 

 

 

বাবার অবদানের কথা বলো

বাবার অবদানের কথা বলো | বাবা দিবসে কিছু কথা
বাবার অবদানের কথা বলো | বাবা দিবসে কিছু কথা

         বাবা ছিল বলেই আমি, আপনি ও প্রত্যেকটি প্রাণী এই পৃথিবীর বুকে আসতে পেরেছি। কেননা বাবার ঔরসে মায়ের গর্ভে আমরা সম্পূর্ণতা পেয়ে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর পৃথিবীর আলো দেখতে পারি। প্রত্যেকটি মা তাঁর সন্তানকে সেবা ও যত্ন দিয়ে বড় করে তোলে। আর বাবা সেই সন্তানের যাতে কোন রকম অসুবিধা না হয়, তার জন্য আর্থিক সাহায্য কঠোর শ্রম করে যোগান দিয়ে থাকেন। বাবা ও মায়ের সহযোগিতায় একজন সন্তান মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠতে পারে। 

         আমাদের সমাজে সাহিত্য এবং চর্চায় মায়ের কথা যতটা আলোচনা করা হয়। ঠিক ততটা আলোচনা বাবার করা হয় না। তাঁর অবদান অন্ধকারেই থেকে যায়। বাবা কোন সময় নিজের কথা গর্ব করে বলেন না কারো কাছে। বাবা মুখটি বুঝে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য দিনের পর দিন পালন করে যান। যতই বাধা বিপদ আসুক, বাবা কোন সময় ভয় পেয়ে সরে থাকেন না। পরিবারের প্রত্যেকে যাতে সুখ ও সুবিধা ভোগ করে সঠিকভাবে যেতে পারে, তার হালটা বাবা ধরে রাখেন।

         প্রত্যেকটা বাবা’ই চান তাঁর নিজের অপূর্ণ ইচ্ছে ও স্বপ্ন অর্থাৎ নিজে যা হতে চেয়েছিলেন, তা হতে পারেননি। সেই স্বপ্ন ও ইচ্ছে যেন তাঁর নিজের সন্তান পূর্ণ করতে পারে। তার জন্য যা যা করার ও যতদূর যাওয়া সম্ভব, তত দূর তিনি যাবার চেষ্টা করেন। সন্তানের সফলতায় যত কষ্টই করতে হোক না কেন, তিনি সেই কষ্ট হাসিমুখে পালন করে যান। সন্তান যেমন বিফল হলে বাবার কষ্ট সবচেয়ে বেশি হয়। ঠিক তেমন সন্তান যখন সফল হয়, তখন বাবা সবার থেকে বেশি খুশি হন। সন্তানের সুখেই বাবা সুখী হন। 

আরো পড়ুনঃ  একজন মায়ের গল্প

         পরিবারের দায়-দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, বাবা নিজের ঘষে যাওয়া চটি কিংবা ছেঁড়াফাটা গেঞ্জিটা খুব সহজে বদলে নেন না। এমনকি নিজের অসুখ করলে ওষুধও তিনি কিনে খেতে চান না কিংবা ডাক্তারের কাছে যান না। দূরে কোথাও যেতে হলে, গাড়িতে চড়ে না গিয়ে পায়ে হেঁটে যান। যাতে করে দুটো অর্থ বাঁচাতে পারেন। আর সেই অর্থ দিয়ে সন্তানের সুখের জন্য কিংবা তার শিক্ষার জন্য বই কিনে দিতে বেশি তৎপর থাকেন। বাবা সন্তানকে যখন কিছু দেন, তার পরিবর্তে তিনি কিছুই চান না, শুধু সন্তানের হাসি মুখটি দেখলেই বাবার মন ভরে যায়। 

          বাবা একজন স্বাভাবিক ও সুস্থ মানুষ, তাই বাবারও অনেক সময় মনে কষ্ট হয় বিভিন্ন কারণে। কিন্তু বাবা তাঁর মনে কষ্টের কথা কাউকেই বলতে পারেন না। কেননা তিনি যে পরিবারের সবার থেকে বড়। আর বড় হয়ে ছোটদের কিভাবে বলবেন নিজের মনের কষ্টের কথা? তাই বাবা নিজের কষ্ট নিজেই চুপচাপ মুখ বুঝে সহ্য করে নেন। বাবা যেমন বাইরে গিয়ে চাকরি, ব্যবসা কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করেন। ঠিক তেমন ঘরের অর্থাৎ পরিবারের জন্যও অনেক কাজ করেন। বাবা, মানে ঘরে থাকলেও কাজ, বাইরে থাকলেও কাজ করে যান। আরাম তিনি খুব একটা বেশি করতে পারেন না বা করার সময় পান না।

          সন্তান যখন অর্থ উপার্জন করে বাবার হাতে এনে দেয়। তখন বাবা বলেন, না-না আমার এসব লাগবে না। তোর নিজের কাছেই জমা করে রেখে দে, ভবিষ্যতে তোর কাজে লাগবে। বাবা শুধু দিতেই জানেন, তেমন কোন বিশেষ প্রয়োজন না পড়লে, বাবা কোন সময় সন্তানের কাছে হাত পাতেন না। তবে প্রত্যেকটি সন্তানের উচিত বাবাকে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সম্মান করা। আর বৃদ্ধ বয়সে বাবা অর্থাৎ যখন তিনি কাজ করতে অপারগ। তখন তাঁর সেবা ও যত্ন করে তাঁকে মানসিকভাবে শান্তিতে রাখা সন্তানের কর্তব্য। বাবার অবদানের কথা কোন সময় ভোলা উচিত নয়।

 

 

বাবার মর্যাদা

 

বাবার মর্যাদা নিয়ে লেখা | বাবা দিবসে কিছু কথা
বাবার মর্যাদা নিয়ে লেখা | বাবা দিবসে কিছু কথা

“বাবা” শব্দটি দুটি অক্ষরের হলেও এর গভীরতার কথা বলে কখনোই শেষ করা যাবে না। বাবা নামের যে মানুষটা আছে, সে সারাদিন রোদ – বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র তার পরিবারের কথা চিন্তা করে সবকিছু মুখ বুজে সহ‍্য করে উপার্জন করে যায় । তার পরিবার, সন্তানদের জন‍্য সে এত কঠোর পরিশ্রম করে যায় দিনের পর দিন। এই পৃথিবীতে একমাত্র বাবাই চায় যেন তার সন্তানটি তার চেয়েও বড় কিছু করে, একটা ভালো মানুষ হয় । বাবারা বছরের পর বছর চলে যায়, ঈদের পর ঈদ চলে যায় কিন্তু কখনোই নিজের জন‍্য একটা নতুন জামা পর্যন্ত কিনে না। শুধুমাত্র তার ছেলেমেয়েদের নতুন কাপড় কিনে দেয়। খোঁজ নিয়ে দেখেন এক জুতো কতদিন হলে পড়ে আছে বাবা। জুতোর তলা খসে যাচ্ছে তবুও নতুন জুতো কেনার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। আমাদের মায়েরাও আমাদের অনেক ভালোবাসে। তা আমাদের সামনে প্রকাশ করে। কিন্তু বাবারা কখনোই তাদের ভালোবাসা আমাদের সামনে প্রকাশ করে না। শুধু কাজের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে যায়। সত্যিই বিষয়টি কি অদ্ভুত তাই না ? বাবা মানেই মাথার উপর একটা বিরাট বড় ছাদ। এই ছাদটার মর্ম কোন দিন বুঝবেন জানেন? যেদিন বাবা নামের এই ছাদটা আর পৃথিবীতে থাকবে না। আমরা অনেকেই বাবাকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু কখনো লজ্জা পেয়ে সরাসরি বাবার সামনে যেয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে পারি না – ” তোমাকে ভালোবাসি বাবা “।
এই পৃথিবী থেকে বাবা নামক দুটি শব্দ হারিয়ে যাওয়ার আগেই বাবার সামনে যান এবং জড়িয়ে ধরে বলে দিন বাবা, ‘তোমাকে খুব ভালোবাসি’। তারপর দেখুন বাবা কতটা খুশি হয়। এই খুশি আপনার হৃদয়ের প্রশান্তিকে আরও বেশি বাড়িয়ে দিবে ।

আরো পড়ুনঃ  ঈদের খুশি এবং বাস্তবতা | ঈদ নিয়ে প্রবন্ধ

 

 

 

পিতার অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনীয়তা 

 

পিতা দিবসে কিছু কথা, বাবা দিবসে কিছু কথা
পিতা দিবসে কিছু কথা, বাবা দিবসে কিছু কথা

আজকের সভ্যতাকে সহজতর করার পেছনে বহু পৈতৃক প্রাণ অবদান রেখেছে। তাদের অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে বহু জাতি। বিভিন্নভাবে তাঁরা রেখে গিয়েছেন অবদান। তার মাঝে আবার অনেকে সামলেছেন নিজের পরিবার। একপ্রকার দায়িত্বের বোঝা তাঁরা স্বীয় হৃদয়ে সহজভাবেই নিয়েছেন। পিতার কর্মঠ মনোভাব সকলের কাছে যেন উদাহরণস্বরূপ। আমাদেরকে পরিশ্রমী করে তোলার জন্য সর্বকালে পিতারা সজাগ ছিলেন। স্বীয় উন্নয়নের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পিতা সর্বকালেই সন্তানের নিকট ছিলেন এক অসমাপ্ত ভালোবাসা হয়ে। সন্তানকে বিভিন্ন প্রেরণাদানে ও সঠিক পথ দেখানোর ক্ষেত্রে পিতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সন্তানের চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে ও সন্তানকে সামাজিক মনুষ্যে পরিণত করার ক্ষেত্রে পিতার ভূমিকা অনবদ্য ছিল। মানুষ যখন থেকে সামাজিক জীবনে প্রবেশ করেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। আবার যখন মনুষ্য পারিবারিক জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছিল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তখন দেখা গিয়েছিল পিতৃতান্ত্রিক পরিবার। মাতৃতান্ত্রিক পরিবার খুব কমই দেখা গিয়েছিল সেখানে। অর্থাৎ সে পরিবারে পিতা হয়ে উঠেছিলেন প্রধান। পৈতৃক প্রাণ সর্বকালে কঠিন কর্মে পিছু হটেনি। সর্বদাই সে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। এতে ঘটেছে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা। অনেক পৈতৃক প্রাণ চলে গিয়েছিল কঠিনকে জয় করতে গিয়ে। কিন্তু এ প্রাণ আবার খুলে দিয়েছিল নতুনের দ্বার। মনুষ্য সেই কঠিন কর্ম সম্পাদনে নতুন নতুন পদ্ধতি বের করেছিল। আবার অন্তরাত্নায় সাহস সঞ্চারেও সেটি ভূমিকা রেখেছিল। অর্থাৎ পৈতৃক প্রাণের বিসর্জনের বিষয়টা। আবার পরিবার গঠন ও উন্নয়নে পিতারা সর্বকালে ভূমিকা রেখেছিল। পিতারা তাদের বংশধরদের বিভিন্ন পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সন্তানের পথপ্রদর্শক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিলেন সবসময়। তার বিভিন্ন আবদার মিটিয়ে দিয়েছিলেন। সন্তানের প্রতি পিতার অবদানটা বলে শেষ করার মতো নয়। তবে সন্তানের কাছে পিতা সর্বকালেই একজন বিশ্বস্ত বন্ধু ও ভরসার জায়গা হয়ে ছিলেন। সন্তানের জীবনকে গড়তে গিয়ে তিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই অতিবাহিত করে দিয়েছিলেন। আবার সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যও পিতা রেখেছেন অনবদ্য ভূমিকা। তার সাথে করেছেন প্রচুর পরিশ্রম। সন্তানের বিপদে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন পিতা। আবার এদিকে পিতা তাঁর কর্মক্ষেত্রে রেখেছেন সমান ভূমিকা। নিজের কাজের প্রতিও তিনি ছিলেন ঠিক পরিবারের ন্যায় দায়িত্বশীল। পৃথিবীতে বহু দায়িত্বশীলতার উদাহরণ দেখা গেলেও যে দায়িত্বশীলতা অন্য সকল দায়িত্বশীলতাকে হার মেনে দেয়, সেটা হলো পিতার দায়িত্বশীলতা। কারণ তাঁর দায়িত্বশীলতা শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং তাঁর দায়িত্বশীলতা প্রকাশ পায় তাঁর কর্মক্ষেত্রে। আবার সমাজেও তার কিছু দায়িত্বশীলতা দেখা যায়। সব মিলিয়ে পৈতৃক প্রাণের দায়িত্বশীলতার অভাব নেই। পৈতৃক প্রাণের কঠোর দায়িত্বশীলতায় শুধু পরিবারই উপকৃত হয় না, বরং উপকৃত হয় সমাজ ও রাষ্ট্র। পিতা যেমন আমাদের যোগ্য সামাজিক মনুষ্য করে তুলতে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন, ঠিক সেইভাবে আমাদেরও উচিত বার্ধক্যে পিতাকে যথার্থ সেবাদান করা। 

আরো পড়ুনঃ  তাঁদের ঈদানন্দ | ঈদের প্রবন্ধ

 

সর্বশেষ বাবা দিবসে কিছু কথা 

 

বাবা দিবস নিয়ে তো অনেক কিছুই বলা হলো। আমরা তো অনেক জনকেই অনেক কিছু উপহার দেই? তাই না। বিনিময়ে একটু অল্প সল্প একটু ভালোবাসা প্রকাশ করে এটুকুই। কিন্তু বাবা দিবসে বাবা-মাকে কিছু উপহার দিতে পারেন। বাবার জন্য কাপড় নিতে পারেন, তবে হ্যাঁ অবশ্যই মায়ের জন্যেও নিবেন। আসলে গত ১ মাস বা তারও বেশি কিছু দিন আগে মা দিবস গেলো, সেদিন হয়তো মাকে কিছু দেওয়া হয়নি। আজকে বাবা দিবস উপলক্ষে তাদের আপনার সামান্য উপহারটুকু অনেক আনন্দদায়ক মূহুর্তে রূপান্তরি হবে বলে আশা করছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *