ডায়েরীর পাতা থেকে কলমে ইশরাতুল জান্নাত

ডায়েরীর পাতা থেকে কলমে ইশরাতুল জান্নাত

১ ডিসেম্বর, ২০২০

তিনি বলেছিলেন, ‘এমন কাউকে এখনো রেখে যেতে পারছিনা যারা আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য কাঁদবে?’

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন আপনার আম্মু বুঝি কাঁদবে না?’

তিনি বললেন, ‘আম্মু তো কাঁদবেই। আমি তাদের কথা বলছি যারা আমার খুব কাছের কেউ না হলেও আমি আমার সততা, ভালোবাসা এবং কোমল আচরণ দ্বারা তাদের এমন মায়ার বাঁধনে বেঁধে রেখে যাব যে আমি তাদের প্রিয় হই অথবা অপ্রিয়, তারা আমাকে ভালোবাসুক অথবা ঘৃণা করুক কিন্তু আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য কেঁদে কেঁদে দুয়া করতে বাধ্য হবে।’

সেদিন কথাগুলোর গভীরতা উপলব্ধি করতে পারিনি। কিন্তু একদিন তিনি সত্যিই চলে গেলেন। আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম এ পৃথিবীর গতিপথ রুদ্ধ হয়েছে। আর সূর্য উঠবেনা। পাখি গাইবেনা। বইবে না সতেজ হাওয়া। কিন্তু নাহ!পরদিন নিয়ম করে সূর্য উঠেছে। আবার সন্ধ্যা নেমেছে।

তারপর তো কতগুলো দিন কেটে গেলো। আজও সূর্য উঠে। পাখি গায়। কলকল ধ্বনিতে বয়ে চলে নদীর স্রোত। আজও হাসি ঠাট্টায় জমে উঠে আড্ডা।

আর আমি অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখি, যে পৃথিবীর পানে আমার নিরন্তর ছুটে চলা আমার অনুপস্থিতিতে তার গতিবিধি সামান্যটুকুও বাধাগ্রস্ত হবেনা।

তবুও চলতে হয়। কারণ এখানে চাইলেই থেমে যাওয়া যায়না। আবার কখনো বা নতুন করে চলতে উদ্যত হয়েও থেমে যেতে হয় একজন মহা শক্তিধরের ইশারায়। চলার পথে মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়াই। চেনা গলির বাঁকে, নিয়নবাতির আবছা আলোয় অথবা রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে তারাগুলোর মাঝে আমি হারিয়ে যায়। মাঝে মাঝে শ্বাসটা ভারী হয়ে আসে। কাউকে খুব করে বলতে ইচ্ছে করে, ‘আমার যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।’ কিন্তু কাকে বলব! কে শুনবে আমার অগোছালো কথাগুলো!

হতাশ হয়ে ফিরতে গিয়েও আশার প্রদীপ জ্বলে উঠে। আমার রব্ব তো আছেন! তিনি তো আমাকে শুনেন। এমনকি যখন আমি শব্দ খুঁজে পাইনা!

আরো পড়ুনঃ  ঝরে যাওয়া প্রাণ কলমে মার্জিয়া আক্তার রজনী

অতঃপর আমি আমার রব্বের দিকেই ফিরি। দুহাত তুলা মাত্রই আমার ঠোঁট আর জিহ্বা যেন আমার মস্তিষ্কের অপেক্ষা না করেই বলে উঠে, ‘আল্লাহ! তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আপনি তাকে ক্ষমা করুন। তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন। তার মেহমানদারিকে সম্মানিত করুন এবং তাকে জান্নাতবাসী করুন।’

‘আমীন ইয়া রব্ব’ বলতে বলতে আমি আনমনা হয়ে যাই। নিজেই নিজেকে সুধায়, ‘রেখে যেতে পারছি তো এমন কাউকে? যারা আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য কেঁদে কেঁদে দুয়া করবে! আমি তাদের প্রিয় হয় অথবা অপ্রিয়, তারা আমাকে ভালোবাসুক অথবা ঘৃণা করুক কিন্তু আমার মৃত্যুর পর তারা বলতে বাধ্য হবে, হে আল্লাহ সে খুব ভালো মানুষ ছিলো আপনি তাকে ক্ষমা করুন।

কে জানে! গাফুরুর রাহীম হয়ত তার কিছু বান্দা বান্দীর নেত্রপল্লব থেকে গড়িয়ে পড়া কফোঁটা অশ্রুর উছিলায় এই গুনাহগার বান্দীকে ক্ষমা করে দিবেন!

 

নিয়মিত পড়ুন এবং লেখুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *