ইতিহাসের সেরা ১০টি বাবাকে নিয়ে কবিতা || বাবাকে নিয়ে কিছু কথা

বাবাকে নিয়ে কবিতা

জীবনে অনেক লেখকের লেখা পড়েছি, অনেক কবির কবিতা পড়েছি। অনেক কিছুই শিখেছি-জেনেছি, কিন্তু তাদের কখনো তা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারছি কি না তেমন কোন উদাহরণ আমার কাছে নেই। তাই পড়াশোনা কমিয়ে দিয়েছিলাম, ফেসবুক ফিডে যেদিন বাবা দিবসের পোস্ট দেখলাম সেদিন নিজেকে কেমন জানি অপদস্ত মনে হচ্ছিলো। কি কারণে সেরা আমার অজানা।  অজানা তো হওয়ারি কথা! যে মানুষ টি পরিবারে ছায়া হয়ে আছে তাকে নিয়ে মানুষ কত সুন্দরেই না ঠাট্টা করছে সেদিনে। সত্যি বলতে কি?.. বাবাকে নিয়ে পোস্ট করলে কিংবা বাবাকে নিয়ে ফেসবুক ছবি আপলোড বা স্টোরি শেয়ার করলে কখনো ভালোবাসা যায় না। বাবারা নিজে না খেয়ে সন্তানের জন্য তার পছন্দ খাবার কিনে, খেলনা কিনে, পোষাক কিনে! কিনে না?.. আপনাকে প্রশ্ন করছি….

হ্যাঁ কিনে,,,কিন্তু আপনি আপনার বাবার সন্তান হয়ে কি করতে পারছেন?… ইনকাম করে কখনো বাবাকে কিছু নিয়ে দিয়েছেন?.. দেননি? … ভালোবাসি বলেছিলেন?.. আরে ভাই ভালোবাসি বললে ভালোবাসা হয় না। পোস্ট করলে ভালোবাসা হয় না, কাজে কর্মে ভালোবাসা প্রকাশ করুন। মনে রাখবেন আপনি ও একদিন অভিভাবক হবে, বাবা কিংবা মা হবেন, সেদিন আপনার সন্তানকে আপনিও ঠিক তেমন ভালোবাসবেন এবং আপনার সন্তান ও আপনার মতোই প্রতিক্রিয়া করবে। এটা ভাবে প্রতিটি কাজ করবেন,  যাতে বাবা-মা কখনো আপনার ব্যবহারে কষ্ট না পায়।

আজকে আমরা বাবাকে নিয়ে কিছু কবিতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। কবিতা গুলো অবশ্যই আপনাদের ভালো লাগবে ইন শা আল্লাহ।  কবিতা গুলো ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে পাশে থাকবেন। কোন সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটে শেয়ার করলে অবশ্যই লেখকের নাম সহ শেয়ার করবেন।

বাবা কলমে এ, বি, মিজানুর রহমান

বাবাকে নিয়ে কবিতা

বাবা
এ, বি, মিজানুর রহমান

 

ভূমিষ্ঠ হলে শিশু পৃথিবীতে
বেড়ে ওঠে বাবার হাতে।
পায়ে পায়ে হাঁটতে শেখান
নরম কোমল হাতে।
বুকে নিয়ে ঘুমান বাবা
আঁধার ঘরে রাতে।
চোখ রাঙালে মা জননী
বকে দেন মাকে।
সারা রাত জেগে থাকেন
অসুখ বিসুখে।
সেই বাবাই শাসক হন
শৈশব পেরুলে।
কৈশোরে চোখ রাঙানো
এদিক সেদিক হলে।
মনে হয় বাবার মত নিষ্ঠুর
বুঝিবা নাই পৃথিবীতে।
আসলে বাবা হলেন সু শাসক
চান না তিনি সন্তান নষ্ট হতে দিতে।
সব বাবারা চান
সন্তান যেন তার থাকে দুধেভাতে।
এই কথাটা বুঝি এখন
বড় হতে হতে।

 বাবা কলমে পল্লব কিশোর রায়

 

বাবাকে নিয়ে কবিতা, বাবা নিয়ে কবিতা

বাবা
পল্লব কিশোর রায়

 

বাবার মতন ভালো,,
কখনো কেউ বাসেনি,,
সর্বস্ব উজার করে আলো।
বাবা ছিল বট বৃক্ষের ছায়া,
যার ছায়ায় ছিল আমার কায়া।সামন্য অসুস্থতায় আমি
ছিলেম যখন কাতর,
কাটিয়েছেন বাবা কত
নির্ঘুম রজনী,
আমার শিয়রে বসি।

কত সুখ, কত সাছন্দ,
তুমি দিয়েছ বিসর্জন,
আমাদের সপ্নীল
ভবিষ্যত নির্মানে।
তার শিকি ভাগ করিনি
আমি, তোমার অভাগা সন্তান।

আজ তোমার প্রস্থানে,
তোমারে মনে পড়ে খুব,
শত আধারে খুজে
ফিরি তোমায়।
কেদে ভাসাই বুক।

 

বাবা কলমে মোঃ শাহানুর আলম শাফিন 

বাবা
মোঃ শাহানুর আলম শাফিন

 

বাবা তুমি বট বৃক্ষ
যার ছায়ায় প্রতিটি সন্তান সুরক্ষিত।
যেখানে এতোটুকু পাবে না ক্ষিপ্ত রোদ
যে জীবন ঝড়ের প্রতিবন্ধক।

তোমার চোখে দেখি জীবনের দর্পন
যার হাত ধরে করি নির্মম,নিষ্ঠুর জীবনে পদার্পণ।
সুচরিত্র গঠনে পরম শিক্ষাদাতা,
শত আঘাত যন্ত্রণার মাঝে
তুমি সান্ত্বনার আশা।

বাবা মানে শত শাসন সত্ত্বেও
এক নিঃসার্থ ভালোবাসা।
তোমার অসম্পুর্ণ সপ্নপূরণ,
আমার জীবনের প্রত্যাশা।

তুমি গল্পের আড়ালে থাকা এক মহানায়ক
যে গল্পের পরম নৈতিক শক্তি,
বাবা তোমার নিরব ভালোবাসা।

কোথায় আছ বাবা কলমে নূর আলম গন্ধী

 

কোথায় আছ বাবা
নূর আলম গন্ধী

 

কোথায় আছ বাবা তুমি
খুঁজি তোমায় রোজ
সেই যে গেলে আর এলে না
কেউ কি জানো খোঁজ?

খুঁজে ফিরি দূর আকাশে
হাজার তারার ভীড়ে
আকুল হৃদয় গুণছে প্রহর
আসবে কবে ফিরে।

খুঁজে ফিরি তেপান্তরে
খুঁজি জনে জনে
আমায় ফেলে কই তুমি আজ
হারালে কোন বনে?

তোমার খোকা নেই ভালো নেই
বুকে ভীষণ ক্ষত
স্মৃতির পাহাড় হাতছানি দেয়
কাঁদায় অবিরত।

বাবা কলমে মোঃ মামুন অর রশীদ

 

বাবা
মোঃ মামুন অর রশীদ

 

বাবা নামক যন্ত্র মানব
দুঃখ পেলে কভু
মুখ ফুটে কয়না কথা
নিরবে থাকে তবু।

পরিশ্রমের মালা গলায় পরে
ঘুরে বেড়ায় রোজ
শত কষ্টেও রাখে সে যে
প্রিয়জনদের প্রতি খোঁজ।

জীবন যুদ্ধে কেমন করে
জয়ী হতে হয়
ছোট্ট থেকে সেখায় মোদের
ভয়কে করে জয়।

সংসারটাকে সুখী করতে
জীবন রাখে বাজি
শত কষ্টেও না করেনা
যেন কষ্ট পেতে রাজি।

আমারও যে স্বপ্নের পুরুষ
শুধুই আমার বাবা
আমার কাছে তাই তো তিনি
মক্কা কিংবা কাবা।

কত আবদার কত চাওয়া
করছে তিনি পূরণ
প্রতিক্ষণে তাইতো তারে
আমি করি স্মরণ।

বাস্তবতার এই আসল হিরো কে
কোথায় গেলে পাবা
হাজার বছর থাকুক বেঁচে
মনের রাজ্যে বাবা।

নিজের বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা কলমে কে.এম.ওসমান গনি

 

নিজের বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা
কে.এম.ওসমান গনি

 

বিপদে আপদে থাকেন বাবা
ছাতা মাথায় ধরিয়া
কাঁধে করে রাখেন বাবা
সন্তান কে তুলিয়া ।

নিজে না খেয়ে বাবা
সন্তানকে খাওয়ায়
ছেঁড়া জামা গায়ে দিয়ে
নতুন জামা পড়ায় ।

কত কষ্ট করেন বাবা
সন্তানের লাগিয়া
বড় হয়ে সন্তান যায়
সেই বাবাকে ভুলিয়া ।

বাবার মতো এতো আপন
আর কেহ তো নাই
চলে গেলে পৃথিবী থেকে
কোথায় পাবে ঠাঁই ।

নিজের বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা
যতন করো তার
হারিয়ে গেলে খুঁজে কি
পাবে তুমি আর ।

 

বাবা ও ছেলের চরিত্রের ছোট্ট গল্প প্রতিবিম্ব

 

প্রতিবিম্ব
সোনিয়া তাসনিম খান

 

বাবা, আমাদের ইমিগ্রেশন হয়ে গেছে।সবকিছু ঠিকঠাক হলে মাস দেড়েকের মাঝেই ফ্লাই করব। ইনশাআল্লাহ।

– ও।কবে প্রসেসিং শুরু করেছিলি? বলিসনি তো কিছুই।

– বলা আর কি, বাবা? তুমি অযথা আবার ভাববে।তাই কিছু বলিনি।ওখানে অনেক বড় একটা অপার্চুনিটি পেয়েছি। আমার ক্যারিয়ারটা ঘুরে যাবে। ইনশাআল্লাহ।

“হুম” ফয়েজ সাহেব মৃদু স্বরে সম্মতি দেন।

– ইয়ে, বাবা কিছু মনে করো না। এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিয়ে দেব, ভাবছি। তুমি একা মানুষ। অযথা এত বাড়িতে একলা পড়ে থাকলে দম বন্ধ লাগবে। তাছাড়া ভাড়া দিলে মাসে মাসে কিছু টাকা এ্যাকাউন্টে জমা হয়। শুধু শুধু আইডল ফেলে রেখে..।

ফয়েজ আহমেদের কপালে ভ্রুকুটি জমে উঠেছে। নিজের সন্তানের মুখমন্ডলের ভাষা পড়ে নিতে চাইছিলেন যেন।মোটা চশমার আড়ালে থাকা বৃদ্ধ দৃষ্টি বুঝি বা তা পড়তে অক্ষম হচ্ছে।চোখটা বুঝি গেলই একেবারে। ইশতিয়াক ইতস্তত করছিল খুব। ঘন ঘন চোখের পাপড়ি পড়ছে ওর।হাতের আঙুল বেশ কয়েকবার মটকে নেবার দৃশ্যটিও চোখ এড়াল না ফয়েজ সাহেবের। বরফ শীতল কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়লেন ছেলের দিকে

-আর কিছু বলবি বাবা?

– হ্যাঁ। বাবা বলছিলাম। তোমার থাকা নিয়ে। তোমার জন্য বেশ ভাল একটা বৃদ্ধাশ্রম দেখে এসেছি আমি আর রুমা। খুব সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশ। তোমার মত আরও অনেকে আছে ওখানে। তোমার কোন কষ্ট হবে না একদম।

চমকালেন না ফয়েজ আহমেদ। মনেমনে এমনই কিছু একটা আন্দাজ করছিলেন। ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ঝুলিয়ে নিলেন। বললেন

– ওহ, এই কথা! তার প্রয়োজন হবে না। আমি বরং নরসিংদীর বাড়িটাতে গিয়ে থাকি। শেষ বয়সে গ্রামে গিয়ে থাকারই পরিকল্পনা ছিল আমার আর তোমার মায়ের। সে তো আমাকে একলা রেখেই চলে গেল। তা আমি না হয় একাই…

-ইয়ে বাবা, তুমি রাগ করো না। একটা কথা বলব।

– আবার একটা কথা? বল।কি বলবে?

– ইয়ে… বলছিলাম কী, জানই তো মাইগ্রেশন করছি।এতবড় একটা ব্যাপার। একটা হ্যান্ডসম এ্যামাউন্টের ব্যাকআপ থাকলে একটা আলাদা সাহস থাকে মনে। তাই ভাবছিলাম…

ফয়েজ সাহেব এবার অজানা আশংকায় শংকিত হন।মনের ভয়ের ছাপ মুখে পড়তে দেন না উনি। যন্ত্রের মত বলেন, “কি ভাবছিলে?”

– ভাবছি, যদি গ্রামের জায়গাটা বিক্রি করা যায়, তবে বেশ ভাল হয়। তুমি একলা অত ঝুট ঝামেলা সামলাতে পারবে না। সম্পত্তি মেইনটেইন করা এই বয়সে একা করার কি কম ঝক্কি বল! তাই বলছিলাম যে, পরশু দিন দেলোয়ার সাহেবের পার্টি আসবে কাগজ পত্র নিয়ে।তুমি যদি তাতে একটু…

– পার্টিও ঠিক করে নিয়েছ এর মাঝে?

নিজের শুকনো গলার আওয়াজটা যেন কানে এসে বিঁধল বাজে ভাবে। ইশতিয়াক হেসে ফেলে বলে

– বুঝ না বাবা, সময়ের কাজ সময়েই করতে হয়। তুমি ভেব না একদম। পার্টি অনেক বড়। ভাল দাম দিবে। তুমি তাহলে রাজি আছ। তুমি কিন্তু না বল না, বাবা। প্লিজ।

পায়ের নিচের মাটিটা যেন আচমকাই সরে গেল।ইশতিয়াকের অনুনয় শুনে ক্লান্ত বিধ্বস্ত কন্ঠে ফয়েজ আহমেদ বলেন

– মানা করবার আর অবকাশ রাখলে কই?

হাসি বিস্মৃত হয় প্রিয় সন্তানের মুখে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে

– ইশ, বাবা, আই লভ ইউ। বাবা।তাহলে ওদের বলে দেই পরশু বিকেলে আসতে।

কেমন যেন মুখ থেকে আপনা আপনি উত্তর বেড়িয়ে এল ফয়েজ আহমেদের, “বল”।

ইশতিয়াক কাল বিলম্ব করে না একদম। পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা নম্বর প্রেস করে।বিপরীত প্রান্ত সাড়া দিলে বলে

– ইয়েস। দেলোয়ার সাহেব। আপনাকে যেভাবে বলেছিলাম আগামী পরশু। হ্যাঁ।হ্যাঁ…

কথা বলতে বলতে ছেলে মিলিয়ে যায় দরজার ওপারে। নিজের আরাম কেদারায় বিমর্ষ ভাবে দুলতে থাকেন ফয়েজ আহমেদ। স্মৃতির সাদা কালো ক্যানভাসে একটা পরিচিত মুখ উঁকি দেয়। রেহানার মুখ। রেহানা একরাশ হাসি মাখা মুখ নিয়ে বলছে

– বাড়ির পেছনে একটা শান বাঁধানো পুকুর থাকবে, বুঝলে? রোজ সন্ধ্যে বেলা সেই পুকুর ঘাটে আমি তোমার হাতে হাত রেখে সেখানকার নির্জনতার নীরব ভাষা শুনব।ঠিক আছে?

ফয়েজ আহমেদের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। মনে জমেছে বিষাদ আর অভিমানের বাষ্প। জীবনের আয়না তার আর তার প্রজন্মের মাঝে আজ এসে দাঁড়িয়েছে। জীবনের শেষ সায়াহ্ণে পৌঁছে যাওয়া মানুষটি সেই ঘষা কাঁচের আয়নাতে পড়া তার প্রতিবিম্বের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে। কি আশ্চর্য! এতবড় জীবনে এটা জানতে বাকি ছিল যে, প্রতিবিম্বও বিপরীত চিত্র দেখায় তাহলে।

(সমাপ্ত)

 

আরো কবিতা পড়তে চিরকুটে সাহিত্যের সাথেই থাকুন

আরো পড়ুনঃ  তাঁর হাসি | কবি বাবুই

1 thought on “ইতিহাসের সেরা ১০টি বাবাকে নিয়ে কবিতা || বাবাকে নিয়ে কিছু কথা”

  1. Pingback: বাবাকে নিয়ে গল্প | লেখেছেন সানজিদা সাবিহা » Chirkute Sahitto

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *