বন্যা কলমে: নারগিস খাতুন

বন্যা
নারগিস খাতুন

ময়না ও ময়না কোথায় গেলি ঝড় ওঠেছে পানি হতে পারে তাড়াতাড়ি অগনিটা ঝার দিয়ে বাঁশেরপাতা গুলো জড়ো করে নে নাহলে যে কাল আর ভাত রান্না করতে পারব না। এই বাঁশের পাতাই যে রান্না করার একমাত্র জ্বালানি। মা পাতা জড়ো করে নিচ্ছি আমি কিন্তু ঘরের চালে যে ফুটো হয়ে গিয়েছে পানি যে সোজা ঘরের ভেতর চলে আসে। প্রতিবারই তো পানি পড়া বন্ধ হলে ঘর থেকে পানি ছেঁকে বার করতে হয়। মা ঘরের চালটা ঠিক করোনা কেনো। মা ময়না ঘরের চাল ঠিক করার মতো অত টাকা নেই মা। পানি পড়া বন্ধ হলে দেখছি কিছু খর পায়কি না। খর গুলো বেঁধে চালে দেবো এবারের মতো আর একটু কষ্ট করো, পানি থামলেই আমি খরের উদ্দেশে যাবো পারাতে। তোর বাবা মারা যাবার পর থেকেই এই পাঁচ বছর এই ছোটো কুড়ে মাটির ঘরটা আর এই ছোটো জায়গাটুকু যে আমাদের সম্বোল। তোর এক বছর বয়সেই তোর বাবা মারা গেছে।

মা ঘরের ভেতরে আসো পানি পড়ছে আর ভিজোনা জ্বর চলে আসবে তোমার। দুইদিন আগেই তোমার জ্বর এসেছিল কাল ঠিক হয়েছে আর ভিজে কাজ করো না। যা ভিজে যাবে আবার পরে রোদ্র হয়ে সব শুকিয়ে যাবে। মা আর ভিজছি না ঘরে আসছি তুইও ঘর থেকে বাইরে আসিস না।

মা পানি আর পড়ছে না চলো দুইজন ঘরের পানি জমা গুলো বাইরে ফেলে দিয়। মা খুব খিদে পেয়েছে ঘরে কিছু খবর নেই? না রে মা ময়না ঘরে কিছুই নেই তুই এক গ্লাস পানি খেয়ে নে আমি এখনি ভাত রান্না করছি তুই তখন খাবি। ঠিক আছে মা।

মা রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে যাও কাল যেটা হবে দেখা যাবে এত চিন্তা করোনা আল্লাহ আছে সব ঠিক করে দেবে। মা ময়না তুই ঘুমা আমি ভাতের চাল থেকে ছোটো পাথর গুলো বেচে রাখি কাল ভাত রান্না করতে হবে। মা তুমি পুরো বিকাল বিড়ি বেঁধে মাজা ব্যথা করছে বললে আবার এখন চাল থেকে পাথর বাজবে বলছো। সকালে দুইজন বেঁচে নেবো এখন ঘুমাও।

আরো পড়ুনঃ  দাদুভাইয়া ও নানুভাইয়ার গল্প

মা মা.. কি হলো রে ময়না এমন ছুটে এসে হাঁপাচিস যে কি হয়েছে তোর। মা নয়ন চাচার চায়ের দোকানে টিভিতে খবরে শুনলাম চার পাঁচ দিন টানা মেঘ থাকবে আকাশ জুড়ে আর পানি হবে টানা। কি সর্বনাশ কথা বললি তুই, চার পাঁচ দিনের জ্বালানি ও খাবার ঘরে জমা রেখে দিতে হবে তাহলে। মা ময়না তাড়াতাড়ি কাজ সেরে নে গাছের পাতা শুকনো ডাল হাতের কাছে যা পাবি তাই গুছিয়ে রেখে দেয়। আমি ঘরে কি কি খবর রাখবো সেই ব্যবস্থা করছি মা।

ও মা পানি যে খুব বেশি হচ্ছে শুকনো পাতা পানিতে ভিজে ভেসে গেলো রাস্তায় যে এক হাঁটু পানি জমে গিয়েছে। মা চলো না আমরা সবার মত ওই স্কলের চলে যায় ওখানেই সবাই যাচ্ছে থাকার জন্য স্কলটা বেশি পানি হলেও ডুববে না। ঠিক আছে মা ঘরের যে খাবার আছে সেই গুলো বেঁধে নিয় দিয়ে যাবো।

মা ও মা দূরে তাকিয়ে দেখো বন্যার পানিতে আমাদের মাটির ঘরটি ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে, বন্যা শেষ হলে আমরা থাকবো কোথায় মা। মা তুমি কান্না করছো। না না মা, বন্যা কমে গেলে কিছু দিন আমরা না হলে স্টেশনেই শুয়ে থাকব আর প্রতিদিন একটু একটু করে মাটি জোগাড় করে আবার নতুন করে বাড়ি বানাবো। তুমি চিন্তা করোনা মা ময়না।

                সমাপ্ত

মুর্শিদাবাদ    ভারতবর্ষ 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *