আল্ট্রা ওয়ার্ল্ড'স মাইস্ট্রি 

আল্ট্রা ওয়ার্ল্ড’স মাইস্ট্রি 

আল্ট্রা ওয়ার্ল্ড’স মাইস্ট্রি 
মোজাম্মেল হক 

অ্যাজকোর্ট রবেটো নামক এক তনয় তেইশ শতাব্দী সময়কালের একদিন আল্ট্রা দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাকাশের অবস্থিত বিভিন্ন গ্রহ খোঁজার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বেশিরভাগ গ্রহ আবিষ্কার হয়ে যাওয়ায় আল্ট্রা দূরবীক্ষণ যন্ত্র লাল সংকেত প্রদান করছিল তাকে। তবুও রবেটো আশা না হারিয়ে নিজের কাজ করেই যাচ্ছিল। এমন সময় একটি অজানা গ্রহের দিকে আল্ট্রা দূরবীক্ষণ যন্ত্র ফোকাস করলে রবেটো দেখতে পায় আল্ট্রা দূরবীক্ষণ যন্ত্রে এইটা যে,আল্ট্রা দূরবীক্ষণ যন্ত্র কোনো তথ্য দিচ্ছিল না। বরং অদ্ভুত সব শব্দ করে যাচ্ছিল খালি যন্ত্রটি। আর তখনই রবেটো বুঝে যায় যে, সে নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়ে গিয়েছে। সে সেই গ্রহের দিকে নজর দেয়। গ্রহটা অনেকটা লালচে বর্ণের। আমাদের সৌরজগতে অবস্থিত মঙ্গল গ্রহের মতো দেখতে হুবহু। আর আল্ট্রা দূরবীক্ষণ যন্ত্র জুম করার পর রবেটো সেখানে একটা নগরী দেখতে পায়। যে নগরীর গগন দিকে কী যেন যতসব অদ্ভুত জিনিস উড়ে যাচ্ছিল। যন্ত্রটি আরো জুম করলে সে দেখতে পায় যে সেখানে পানি ও গাছপালা ভর্তি বিভিন্ন স্হান। রবেটো ভাবে যে, একদিকে একেবারে ভিনগ্রহ, আর তাছাড়া পানি আছে সেখানে। তাহলে নিশ্চয়ই সেখানে প্রাণীর দেখা পাওয়া যেতে পারে। আর রবেটো এটা ভেবে তখন খুশি হয় যে, সে সেই প্রাণীদের উপর সফলভাবে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারলে সে পৃর্থ্বীর বুকে গ্রহ অনুসন্ধানী পুরষ্কার যেমন অর্জন করতে পারবে, তেমনই বিখ্যাতও হতে পারবে।

সে লক্ষ্যে সে গ্রহটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে খুব কাছে থেকে ভালোভাবে অনেক সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এখন তাঁর একটাই কাজ, আর সেটা হলো সেই গ্রহে পদার্পণ করা। গ্রহটিতে যেতে হলে সাধারণভাবে একটি স্পেসশিপের লাগবে ২৩ হাজার বছরেরও বেশি। মানুষের আয়ুও যেখানে এতো বছর নয়। কিন্তু তাঁর সময়ে অত্যাধুনিক সকল প্রযুক্তির আশীর্বাদে এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছিল যেটি কিনা ১০০০ বছর সময়কালের ভ্রমণকৃত স্হানকে মাত্র ১ মিনিটে সমকালের ভ্রমণকৃত স্থানে রূপান্তর করে দিতে সক্ষম। অর্থাৎ এক হাজার বছরে যে স্থানে সাধারণভাবে পৌঁছা সম্ভব সেখানে সেই যন্ত্রটি মাত্র এক মিনিটে সেই ১ হাজার বছরের সমান পথ অতিক্রম করতে পারে। এরকমই বিচিত্র সকল প্রযুক্তিতে পূর্ণ ছিল সেই সময়। তাই এই সময়ের সকল মনুষ্যের জীবনযাত্রাও ছিল স্বপ্নময় ও আধুনিকতাপূর্ণ এবং সহজতর। সে সময়ের

আরো পড়ুনঃ  মা না থাকার কষ্ট - মা ছাড়া জীবন

সফলতার পেছনের অন্যতম দাবিদার বিজ্ঞানীরাও ছিলেন আরো আধুনিক এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তৎপর। তখনকার যুগ ছিল উদ্ভাবনের যুগ। অর্থাৎ সে যুগে সকল মনুষ্যই উদ্ভাবনের কাজে লিপ্ত ছিল এবং উদ্ভাবন ছাড়া সেই যুগের কোন মনুষ্যকেই সঠিক ও উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা যেত না। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে কম্পিউটার পারদর্শী মনুষ্যের মূল্য যেমন বেশি, তেমনি সে সময় উদ্ভাবন কাজে সফল মানুষের মূল্য ছিল বহুগুণে বেশি। বিজ্ঞান বিষয়ে সে সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোকপাত করা হতো বিদ্যালয়গুলোতে। যাতে সবাই নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য সক্ষম হতে পারে এবং তার সাথে অনেক বেশি অনুসন্ধানী হতে পারে। রবেটোও ছিল এ বিদ্যালয়গুলোর একটিতে অধ্যয়নরত এবং অনুসন্ধিৎসু। সে পড়ালেখায় ভালো ফলাফল করায় শিক্ষক তাঁকে একটি আল্ট্রা দূরবীক্ষণ যন্ত্র প্রদান করেন আরও দূরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এবং অনুসন্ধিৎসু হওয়ার জন্য। রবেটো যন্ত্রটা দিয়ে বহু গ্রহ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেছে। তাঁকে সে গ্রহে যেতে স্পেসশিপ ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু সেসময়ে স্পেসশিপের মূল্য ছিল বড্ড বেশি। অর্থাৎ একজন শিশুর পক্ষে একটা স্পেসশিপ কেনা কোনোমতেই সম্ভব নয়। তাছাড়া একজন প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রেও অনেকসময়ে সেটা কেনা সম্ভব নয়। তবে যদি সেই ব্যক্তির মাসিক আয় ও বাৎসরিক আয় ভালো হয় তবেই সে স্পেসশিপ কেনার সক্ষমতা রাখে। কারণ সে সময়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বহুবিধ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আর সেটা হয়েছিল সেসব দেশগুলোর সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়া সেই সময়ে সকল দেশের সরকারের নিকট সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ছিল। সে সময় কোনো রাষ্ট্রেরই সরকার চাইতো না যে, তাদের কোনো একজন নাগরিক বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত থাকুক। সকল নাগরিককে কর্মক্ষম করার জন্য বিভিন্ন মৌলিক অধিকারের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছিল সেসময়ে। আবার যাঁরা তখন লেখাপড়ার দিক দিয়ে ছিল অনেক এগিয়ে, তাঁরা বিভিন্ন মেধাশ্রমের উচ্চ পদের চাকরি ভোগ করতেন। অর্থাৎ সেসময়ে পারদর্শিতার স্তর অনুযায়ী এবং ব্যক্তির সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন নাগরিককে বিভিন্ন প্রকার কর্ম প্রদান করা হতো। সে সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মের ছিল সহজলভ্যতা। অর্থাৎ কর্মসংস্থান ছিল সে সময়ে বর্তমান পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি। বরং সে তুলনায় সেসময়ের পৃথিবীতে লোকসংখ্যা ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিকদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। আর এ রিক্ততাটা সকল রাষ্ট্রের সরকারকেই সেসময়ে ভাবিয়ে তুলেছিল। তবে সেসময়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারেরা রোবট দিয়ে কাজ করানোর জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিতো। তবে জনগণকে বাদ দিয়ে তাঁরা এ প্রকল্প হাতে নিতো না। বরং জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পর যদি কোন কর্মসংস্থানে জনবল নেওয়া বাকি থাকে তবে তাঁরা সেক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহারের দিকে মনোযোগী হতো। অর্থাৎ বাকি কর্মসংস্থানগুলোর জনবল ঘাটতি তাঁরা রোবটের মাধ্যমে পূর্ণ করে দিতো। আর রোবট মানুষের চেয়ে দ্রুত কাজ করার কারণে সেসময়ে যে দেশে ছিল কর্মী রোবটের আধিক্য, সেসব দেশ ছিল অধিক উন্নত এবং উৎপাদনের দিক দিয়ে সবার থেকে তুলনামূলক এগিয়ে। কারণ সেসময়ের সকলেই ছিল মিতব্যয়ী। সকলেই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করার দিকে অধিক মনোযোগী থাকতো। আর সেসময়ের সম্পদ বন্টনের ব্যবস্থা ছিল অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সেসময়ে যোগ্যতা অনুযায়ী সম্পদের বন্টন করা হতো না। বরং যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করেছে তাকেই সম্পদের আংশিক অংশ দেওয়া হতো। সর্বোচ্চ উৎপাদনকার্যে নিযুক্ত এসব ব্যক্তিদের সবাইকে সমানভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো সেসময়ের সকল রাষ্ট্রে। রাষ্ট্রের আয়তন সেসময়ে দেখা হতো না বরং কোন রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করেছে সেটা দেখা হতো। সেসময়ে আমদানি ও রপ্তানি ছিল প্রচন্ড শক্তিশালী। তখন বিশ্বের সর্বনিম্ন আয়ের দেশও বর্তমানে একটি উন্নত দেশের ন্যায় রপ্তানি করতো। আবার কিছু কিছু দেশ এর চেয়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণেরও বেশি রপ্তানি করতো। অর্থাৎ বর্তমান পৃথিবীর তিন থেকে চারটি উন্নত দেশের অর্জন করা মাথাপিছু আয়ের সমান মাথাপিছু আয় অর্জন ও ভোগ করত তখনকার সময়ের সর্বনিম্ন আয়ের দেশগুলো। কেমন এক অবাক করা ব্যাপার যেন এটা। কিন্তু সে দেশগুলার ব্যক্তির বিলাসিতার দিক বিবেচনা করলে তা তাদের উৎপাদনের তুলনায় খুব কমই হয়ে যায়। কারণ তাঁরা সবসময় উৎপাদন কাজেই ব্যস্ত থাকতো। নিজেদের বিলাসিতার দিকে নজর দিতো না। আত্মউন্নয়নের জন্য তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টায় লিপ্ত থাকতো। এমন কর্মঠ মানসিকতার কারণে সেসময়ে বেশিরভাগ ব্যক্তিই উৎপাদন কাজে প্রচুর সফলতা লাভ করতো। এদিকে রবেটো প্রচুর পরিশ্রম করে তাঁর শিক্ষাজীবনে। কারণ তাঁকে মহাকাশচারী হতে হবে। অবশেষে সে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। সে তাদের সময়ের মহাকাশ গবেষণা সংস্হা মিসামো এর সদস্য হয়। এবার সেই দিনটি চলে আসে। যে দিনের জন্য অপেক্ষা করছিল রবেটো। সে মহাকাশে তাঁর ছোটবেলায় খুঁজে পাওয়া সেই গ্রহে যাওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু এদিকে সেইদিন রকেট উৎক্ষেপণ করার কথা থাকলেও সেদিন জারি করা হয়েছিল রকেট উৎক্ষেপণ এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা। ফলে রবেটো সেইদিন যেতে পারল না। এতে রবেটোর মন খারাপ হয়ে যায় এবং সে ভাবতে থাকে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের মনুষ্যদের দায়সারা মনোভাব ও কর্মের কারণেই সংঘটিত হয়। প্রকৃতি হয়তো এর মাধ্যমে বদলা নেয়। কিন্তু আমাদের উচিত প্রকৃতির দিকে খেয়াল করা। কারণ আমরাও একসময় প্রকৃতির ওপরেই সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিলাম। (সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত) 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *