ঈদের খুশি এবং বাস্তবতা
এম এম এইচ মুকুল
সমাজের সর্বত্রই আজ দলন..পীড়ন আর অনিয়মের জয় জয়কার। ব্যাক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে দুর্নীতি আর পেশীশক্তির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কেউ কেউ গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়। তাদের বিলাসী অট্রালিকার নিচে চাপা পড়া মানবতা আজ শুধুই বইয়ের পাতায় ছাপানো কয়েকটি কালো অক্ষর। পাজরভাঙ্গা শ্রমে যারা উপরতলার রসদ যোগায় তাদের প্রাপ্তির ঘরে কেবলই শূন্য। একমুঠো ভাত আর লজ্জা নিবারনের একটুকরো কাপড় কেড়ে নেয় কারো কারো উরুর নিচের গোপন দরজার চাবি। রিক্সাওয়ালার পেট হাওয়া বেড়িয়ে যাওয়া চাকার মতই লেপ্টে থাকে দেহ নামের চামড়ার খাঁচায়। স্ত্রী সন্তানের আব্দারগুলো অভাবের আলমারিতে ঘুমিয়ে থাকে আর কখনো জেগে না ওঠার পরম নিশ্চয়তায়। প্রান্তিক চাষির ফুসফুসে লাঙ্গলের ফলার মতই চষে বেড়ায় দারিদ্রের সৈনিকেরা। দিনমজুরের দুহাতে কেবলই না পাওয়ার বিচিত্র ইতিহাস। পুরুষের পর পুরুষ মাটির কারুকাজে অন্যের জলসাঘরের সৌন্দর্য বর্ধনকারী কুমারের পরিবারে হাহাকারের করুণ সুর বেজে চলে নিত্যদিন। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতি মধ্যবিত্তের জীবনেও আনে চরম দুর্গতি। তাদের বাজারের থলে বদলে দেয় অংকের হিসাব নিকাশ। শূন্যের দরজায় আটকে থাকে সঞ্চয়ের বাহন।
এসবের মধ্যেই বছর ঘুরে ফিরে আসে রমযান মাস। সাওমের রোশনাই দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। বাহারি ইফতারে খিলখিলিয়ে হাসে কারো কারো ডাইনিং টেবিল। পাশেই ডাস্টবিনে ক্ষুৎপীড়িত পথশিশু খুঁজে বেড়ায় এক মুঠো এঁটো খাবার। সাওমের শিক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বিলাসবহুল বিপণীবিতানে বাড়তে থাকে অর্থের ঝনঝনানী, পর্দার আড়ালে হোটেল রেস্তোরাঁয় চলতে থাকে রসনাবিলাস।
তারপরও খুশির বার্তা নিয়ে ঈদ আসে। কিন্তু সেই বার্তা সাধারণ মানুষের মুখের হাসিকে প্রলম্বিত করে না। বরং প্রত্যাশা পূরণের দুর্গম যাত্রায় কেবলই হোচট খায়, না পাওয়ার যন্ত্রণা বুকের ভেতরে কষ্টের হাতুরি চালায়। নিরবে বয়ে চলা অশ্রুতে অবগাহন করে ঈদও ফিরে যায়, শুধু ফেরে না গরিবের সৌভাগ্যের ক্ষণ।
তবুও শত কষ্ট ভুলে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে ধৈয্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে অপেক্ষায় থাকবো পরবর্তী ঈদের, একটি নতুন এবং সর্বজনীন ঈদের (খুশির)।