ঈদ স্মরণে হে ইবনুল খাত্তাব
কলমে মুজতাহিদ বিন শহীদ
ঈদ মানে আনন্দ। উল্লাস মাখা স্বচ্ছ আকর্ষণ। নীরব মনের আকস্মিক অস্থিরতা। মিলনমেলার প্রথম ধাপ।ঈদের কথা শুনতেই হৃদয়কোণে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। কিন্তু যখন আশেপাশে তাকাই মুসলিম জাতির এই অধঃপতন দেখে আপনার কথা মনে পড়ে যায়। সেই আনন্দ অন্তর থেকে মুছে যায়।
সালামুন আলাইকা! কেমন আছেন? জানিনা, তবে, ইয়াকিন রাখি যে আপনি খুব ভালো আছেন।অবশ্যই ভালো আছেন।
আর আমি? আমি ভালো নেই,আমরা কেউই ভালো নেই। আমরা দুঃখ কষ্টে নিপতিত এক দূর্ভাগা জাতিতে পরিণত হয়েছি। আমরা জ্ঞান- বিজ্ঞানে পিছিয়ে পরা এক অবহেলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছি। আমাদের কোনো পথপ্রদর্শক, পথপরিচায়ক নেই। যারা ছিল তাদের পদচিহ্ন আমরা হারিয়ে ফেলেছি, পথভ্রষ্ট হয়ে পরেছি।
আপনাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা দ্বীনকে আমরা পদদলিত করে তথাকথিত কিছু সভ্য জাতির সভ্যতার কাছে মাথা নুইয়েছি! অথচ আপনিই বলুন, আমরা কি সভ্য ছিলাম না? আপনার প্রাণাধিক প্রিয় রাসূলে আকরাম(স.) কি সভ্য ছিলেন না? তাহলে কেন তাঁরই উম্মাত হয়ে আমরা আজ হাওলাতি সভ্যতার পেছনে ছুটছি এভাবে???
আজ শহরের চাকচিক্যের ভিড়ে আপনার খেজুর পাতার মাসনদকে বড্ড মনে পড়ে! মনে পড়ে নিষ্ঠার আদলে গঠিত সেই খেলাফতের কথা, যাতে শাহজাদা, ধনী-গরিব, কালো -সাদা সবাইকে মাপা হতো এক নিরিখে ।আল্লাহর আইন বাস্তবায়নে আপনি ছিলেন অনন্য, অনুপম। আপনার হাত ধরেই আমরা শিখেছি আল্লাহর বিধান সর্বভূমিতে বাস্তবায়নের এক সৎদায়িত্ব। শহরে-বাজারে সুদঘুষের অবাধ লেনদেন দেখে, হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে যায়! আহ, আজ যদি একজন খালিফা থাকতো! আল্লাহর জমিনে এই বেদ্বীনি কর্মকাণ্ড রুখতে এগিয়ে আসত!
কিন্তু না! দিনশেষে মনে পড়ে, আপনাদের সোনালি দিন সেই কবেই গত হয়েছে। দ্বীন ইসলামের ঝাণ্ডা আঁকড়ে ধরে রাখার মতো এখন কেউ নেই। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।
মাঝরাতে শহরের কোনো অখ্যাত বস্তি থেকে যখন মায়েদের অস্ফুট কান্নার ধ্বনি ভেসে আসে, যখন ক্ষুধার জ্বালায় কাতর শিশুর আর্তনাদ কানে এসে পীড়া দেয়, তখন মনে পড়ে আপনার কথা! কবি ফররুখ আহমদ হয়তো এজন্যই সকাতরে ব্যগ্রচিত্তে বলে উঠেছিলেন –
” আজকে উমার-পন্থি দিকে দিকে প্রয়োজন “
“পিঠে বোঝা নিয়ে পাড়ি দেবে যারা প্রান্তর প্রাণপণ”
আপনি কি আর কখনোই ফিরবেন না হে উমার ফারুক? সত্যমিথ্যে যে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। আজ যে আপনার খুব প্রয়োজন। আমরা যে আপনার যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে উঠতে পারলাম না হে মহামানব!
আমাদের পুরুষেরা আজ খেলাধুলা-ক্যারিয়ার-নারী নিয়ে ব্যস্ত। কোমর দোলানো নাচের কথিত বিনোদন কিংবা লোক হাসানোর সস্তা তামাশায় তারা মত্ত হয়ে আছে।
রাস্তাঘাটে হায়েনার চোখ গিলে গিলে খাচ্ছে আমার বোনদের। উইঘুর-কাশ্মীরে গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে আমার মায়েরা-মেয়েরা। কোথায় গেলে পানাহ মিলবে? আমাদের তো কোনো অভিভাবক নেই, যোগ্য শাসক নেই, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেউ নেই। তাইতো আপনার মতো বলিষ্ঠ একজোড়া হাতের অপেক্ষায় চেয়ে আছি,আপনার তেজোদ্দীপ্ত ধ্বনি শুনব বলে কান পেতে আছি।
ফিলিস্তিনের মানচিত্র আজ ইহুদীদের করতলে।সজ্জিত গাজা আজ ধুধু-মরুভুমি,আপনার বিজিত ভূমি আজ অভিশপ্তদের কবলে ,আমরা নিরুপায় আমরা অযোগ্য আমরা স্বার্থপর আমরা ভুলে গেছি মুসলিম জাতি সবাই একটি শরীরের ন্যায়। আমাদের থেকে একতা আজ বিস্মিত। ভুলতে বসেছি রাসূল (স.)আগমনের গুরু উদ্দেশ্য ।
কোথায় গেল আপনার বিজিত সেই রোম আর পারস্য?! আমরা পারিনি আপনার আমানত রক্ষা করতে। আমাদের গৃহকলহ, পরস্পরের বিচ্ছিন্নতা সেগুলো ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে ।তাই আজ আমরা অবহেলিত, উপেক্ষিত,অপমানিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত।
আমরা আপনার নিকটে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিলাম যদি কোন ইসলাম বিরোধী পরাশক্তি ইসলামকে নিষ্পেষিত করে ভূমির গহ্বরে নিক্ষেপ করতে চায় ,তাহলে আমরা নিজের জীবনকে বাজি রেখে, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে তাদের কে পরাভূত করব। কিন্তু আমরা ভুলে গেছি সেই অঙ্গীকারের কথা। তাইতো মুসলিম আজ দিকে, দিকে নির্যাতিত, নিপিড়িত। নারীদের ইজ্জত আজ রাস্তার কুকুরের খাদ্যে পরিণত হয়েছে ।
শেষরাতে জায়নামাজে বসে আমাদের অতৃপ্ত, তৃষ্ণার্ত রূহ আজ কেঁদে ওঠে, হয়তো চিৎকার করে বলে উঠে,
হে প্রভু, রাসূল দেবে না বলছিলে। একবারও তো বলনি, উমার দেবে না! তোমার কাছে কাঙালের মতো ভিক্ষে চাই হে রহমান…. ফিরিয়ে দাও। একজন উমার ইবনুল খাত্তাবকে এই জমিনে আর একটিবারের জন্য ফিরিয়ে দাও…!
রব্বে কারিমের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আপনার শানশওকত আরও বাড়িয়ে দেন, আমরা যেন আপনার আর্দশ বুকে ধারণ করতে পারি, যেন জান্নাতের সুরভিত গুলবাগে আপনার প্রতিবেশী হতে পারি।
শিক্ষার্থী: জুম্মাপাড়া মাদ্রাসা, রংপুর