এ কেমন মা
কলমে নিপানুর বিনতে নুরনবী
ঠিকানাঃ ইসলামপুর, জামালপুর।
আজ এই স্পেশাল দিনেও তুই অন্ধকার ঘরে বসে আছিস? ঘরে লাইট দিতে দিতে আইয়ুব তার ছেলে রায়হান কে বলল। বিদ্যুতের আলো রায়হানের উপর পরতেই আইয়ুব চমকে যায়। রায়হানের দু চোখ ফুলে গেছে আর পানি ছলছল করছে। আইয়ুব ছেলের এই অবস্থার কারণ জানতে চাইলেন। কিন্তু রায়হান কিছু বলছে না। তার যেন চোখে শ্রাবণের বারিধারা বইছে। বাবার কথা সে কর্নপাত করলো না। নিরবে কেঁদেই যাচ্ছে। আইয়ুব বললেন, কি হয়েছে বলবি তো আমায়? আর আজ তোর কষ্ট পাওয়ার দিন না। আজ তোর আনন্দের দিন, তুই আজ প্রাণ খুলে হাস আনন্দ কর, উল্লাস কর, আজ যে তুই কুড়ি বছরে পা দিবি। এই দিনটির জন্য কত অপেক্ষা করেছি। আজ সে অপেক্ষার শেষ হলো। বাবার এসব কথা শুনে ছেলে বলল, বাবা কিভাবে আজ আমার আনন্দের দিন, হাসিখুশির দিন? কিভাবে বাবা বলো কিভাবে? যে দিন টায় আমার মা আমাকে ছেড়ে ওই দূর নীলিমায় চলে গেছে সেই দিন কে বলছো আমার জন্য আনন্দের দিন? হাসিখুশির দিন? না বাবা এ হয় না! কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে রায়হান বলে ফেলল। আইয়ুব ছেলের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন। যে ছেলে কখনো তার মায়ের কথা একটি বারের জন্য বলেনি, সে ছেলে কিনা আজ মায়ের মৃত্যু তারিখ নিয়ে ভাবছে। কিভাবে জানল যে, তার মা মৃত্যুবরণ করেছে। আইয়ুব ছেলের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তখন রায়হান তার বাবা কে বলল, বাবা কি ভাবছো? আমি কিভাবে জানলাম মা মৃত্যুবরণ করেছে? তোমার ডায়েরিতেই তো মায়ের মৃত্যুর কথা লেখা আছে।
-না! তোমার মা মৃত্যুবরণ করেনি। সে শুধু আমাদের কাছে মৃত্যুবরণ করেছে!
রায়হান বাবার কথা শুনে চমকে ওঠে বলে, এসব কি বলছো বাবা?
-হ্যাঁ রে আমি ঠিকই বলছি। আমি তোর মা কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিলো। হঠাৎ তুই তোর মায়ের গর্ভে আসলি। কিন্তু এটা তোর মা মেনে নিতে পারেনি। অনেক চেষ্টা করেছে তোকে নষ্ট করার। কিন্তু আমি এটা চাইনি। তাই আমি আমার চাকরি ছেড়ে দিয়ে দশ মাস তোর মায়ের সাথে থেকে তার যত্ন নিয়েছি খেয়াল রেখেছি, যাতে তোর কোনো ক্ষতি করতে না পারে। আমার কেয়ারিং আর ভালবাসায় তোর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু যেদিন তুই পৃথিবীর আলোয় আলোকিত হ’লি, সেদিনই সে হসপিটালের বেডে তোকে রেখে চলে যায়। আমি তার চলে যাওয়ায় অনেক কষ্ট পাই। কিন্তু সে কষ্ট আমি দীর্ঘ করিনি। কারণ আমার কলিজা তো আমার কাছে আছে এটা ভেবে। এরপর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি তোকে মানুষের মত মানুষ করব তোর মায়ের আচ ছাড়াই। আর তোর কুড়ি বছর বয়সে তার সামনে দাঁড়াবো তোকে নিয়ে।
কথা গুলো শুনে রায়হান নিস্তেজ আর নিস্তব্ধ হয়ে যায়। সে ভাবে “এ কেমন মা”। এর চেয়ে তো ভালো হতো যদি মা মৃত্যুবরণ করতো!