জীবনের শেষ প্রহর (১ম পর্ব) কলমে আহমাদুল্লাহ আশরাফ

জীবনের শেষ প্রহর (১ম পর্ব)

জীবনের শেষ প্রহর (১ম পর্ব)
আহমাদুল্লাহ আশরাফ

বারান্দায় বিষন্ন মনে বসে আছে রাহাত। সূর্য প্রায় অস্তমিত।ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। মন ছুয়ে যাওয়ার মতোন। কিন্তু; রাহাতের কাছে এসবের সবই যেন নিছক কিছু। কোন প্রতিক্রিয়াই ফুটে ওঠেনি তার চেহারায়। মুখ বন্ধ করে সে-ই কখন থেকে বসে কী যেন ভাবছে শুধু। রোজ মায়ের কাছ থেকে টাকা উসুল করতে গিয়ে এরকম চুপটি মেরে বসে থাকে শুধু। মা খাদিজা সেইটা ভেবেই তাকে কিচ্ছু বলছেন না।

ছোট ভাই রাহিম খেলা শেষে বাড়ি ফিরেই দেখলো বড় ভাইয়ের মন খারাপ।মাকে বলল—মা,ভাইয়ার কী হয়েছে? এমন মন খারাপ করে বসে আছেন কেনো?না সূচক মাথা নাড়িয়ে বোঝালেন—তিনি জানেন না।রাহিমের শরীর থেকে ঘাম ঝরছে।আজ বুঝি সে অনেক খেলেছে।তা-ই ভিতরে অন্যরকম পুলক অনুভব করছে সে।ভাইয়ের এরকম মন খারাপ করে বসে থাকা দেখে যেনো নিমিষেই দুখেরা চলে এসেছে।পুলক নিয়েছে বিদায়।

আচ্ছা, ভাইয়া!তোমার কী হয়েছে? জিজ্ঞেস করলো রাহিম।কোন কথা নেই।আগের মতোই চুপ করে আছে রাহাত।এবার মা খাদিজা এসে জিজ্ঞেস করলেন—বাবা তোমার কী হয়েছে? এমন মন খারাপ করে বসে আছো কেনো?টাকা তো আজ দিয়েছিই তোমাকে।তাহলে কীসে তোমার এতো মন খারাপ হলো?

রাহাত এবার মুখ খুলল—না মা,আমার তেমন কিছু হয়নি।রাস্তায় দেখলাম—এক বাবা তার সন্তানকে হাতে ধরে আদর করে নিয়ে যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে বাবার কথা মনে পড়ে গেলো।বাবা থাকলে হয়তো তিনি আমাকেও আদর করতেন।মজা কিনে দিতেন।তার জন্যই আমার কাছে ভালো লাগছিলো না।ভিতরটাতে বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।এ বলে রাহাত কেঁদে ফেলল।কেঁদে দিলো ছোট ভাই রাহিমও।

মা খাদিজা কাঁদতে চেয়েও কাঁদলেন না।সন্তানদের স্বান্তনার বাণী শোনালেন। আর বললেন—যাও মাগরিবের সময় হয়েছে। মন খুলে—”রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা”বলে দোয়া করবে।মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা অনেক বড় দয়ালু।তিনি তোমার বাবাকে ইনশাআল্লাহ মাফ করে দিবেন।জান্নাতে তোমাদের সাথে একত্রিত করবেন।।

আরো পড়ুনঃ  অন্যরকম তুমি কলমে জান্নাতুল ফেরদৌস তারিন, পর্ব ৫ম

দু’সন্তানই অযু করে মসজিদে চলে গেলো…..!!!!

বাড়ির অদূরেই অবস্থিত মহল্লার মসজিদ।সোজা রাস্তা দিয়েই যেতে পারে রাহাতরা।কোন বন-জঙ্গলের কষ্ট সইতে হয় না তাদের।যদিও ভূত প্রেত ও ভীতির সামান্য বিষয়েই রাহাত ভয়ে কাঁপে।কিন্তু; সেদিন ভিন্নরকম ভয়ের সঞ্চার হচ্ছিল রাহাতের মনে।আশপাশটা পরিচিত হলেও—লাগছে অপরিচিত।যেন অজানা কোন জগতে এসে পড়লো সে।

হঠাৎ—করে এমন পরিবর্তন সত্যিই বিস্ময়কর।মা যখন বলছিলেন—মসজিদের কথা। মনের ভিতরে তখন অনুভব করেছিল—আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার ব্যথা।এতোদিন সে গুনাহের ছিদ্রহীন আঁধারে ছিল আজই উপলব্ধি করতে পেরেছে।তা-ই কোন ভূত প্রেত নয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার ভয়ই তার অন্তরে কাজ করছিল।বার বার মনে হচ্ছিল বাবার ও বাবার মৃত্যুর কথা। এভাবেই তো একদিন চলে যেতে হবে আমাকেও।পারি জমাতে হবে অন্ধকার কবরে।যেখানে সাথী নেই।বাতি নেই।একাকীত্বের ঘর।কী হবে তখন!!

এসব ভেবেই—তার জীবনে আসতে থাকে পরিবর্তন। তাওবার দোয়া পড়তে থাকে।নিজেকে বড় অপরাধী ও গুনাহগার ভেবে লজ্জিত হতে থাকে।ভাবতে ভাবতে অবশেষে মসজিদে চলে আসে।আযান শেষে সালাতের প্রস্তুতি চলছে।কাতার সোজা করা হচ্ছে। তারাও গিয়ে কাতারে দাঁড়ায় মুক্তমনে।খুশুখুজুর সাথেই আদায় করে মাগরিবের সালাত।

মনে পড়লো মায়ের কথা। বাবার জন্য যে দোয়া করতে বলেছেন সেই ভাবনায় আরো বিনীত হয়ে গেলো।রাহিমের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল—রবের দরবারে বাবার জন্য খাস করে দোয়া করতে।চলছে মোনাজাত ও আহাজারি।
“রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা” বলছে সামান্য জোরেই।বড় ভাইকে দেখে ছোট ভাই আরো কেঁদে ফেলল মোনাজাতে।এ যেনো মোনাজাতের অপুর্ব দৃশ্য।

হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে—সন্তানাদি যখন পিতামাতার জন্য কিংবা পিতামাতা সন্তানদের জন্য হাত তুললে আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না।পর্দা তুলে নিয়ে কবুল করে নেন তাদের নেক মাকসাদ।

কখনো কি রাহাত ও রাহিমের মতো দোয়া করা হয়েছে? পিতামাতার জন্য দু’ফোটা নোনা অশ্রু ঝরানো হয়েছে? যাদের মাধ্যমেই দেখা হলো এই দুনিয়া। ছোট থেকে যারা কষ্ট করে লালন পালন করে আসছেন। তারা কি সামান্য দোয়ারও হক রাখেন না? তারা কি চাইতে পারেন না—রাব্বির হামহুমা…বলে সন্তান মন খুলে দোয়া করবে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *