জীবন সংসার কলমে- আরিফা সুলতানা

জীবন সংসার
কলমে- আরিফা সুলতানা

বালিশে মুখ গুঁজে অবিরামভাবে কেঁদে চলেছে সাইমা।আজ তার জন্মদিন। কিন্তু যেখানে তার নিজের জীবনটাই আজ বিষাক্ত মনে হচ্ছে সেখানে তার জন্মদিন নিয়ে কোন খুশি কিংবা আনন্দই হওয়ার কথা নয়।সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা সাইমা।কিন্তু শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিক দিক দিয়ে যেন দিন দিন ভেঙে পড়ছে মেয়েটি।বাবা মায়ের অমতে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো ভালোবাসার মানুষকে।হয়ত ভেবেছিলো ভালোবাসার মানুষটা তাকে সেই সুখটা দিতে পারবে যেটা সে সবসময় চেয়ে এসেছ।তার বাবা মা তাকে দিতে চেয়েছে।কিন্তু আদৌও কি তা হয়?
বাবা মায়ের দেখেশুনে বিয়ে দেওয়া আর নিজের পছন্দে বিয়ে করা আর কখনো এক হয়?
এক্ষেত্রেও হয়ত তাই হয়েছে।মেয়েটি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা অথচ তার স্বামী তথা ভালোবাসার মানুষটি আজ তিন মাস যাবৎ বেকার হয়ে ঘরে বসে আছে।সারাদিন মোবাইল টেপা আর পান খাওয়া ছাড়া যেন তার আর কোন কাজই নেই।স্ত্রীর মুখপানেও হয়ত একটু ভালোবাসার দৃষ্টি নিয়ে থাকায় না।সারাদিন মোবাইল আর পান নিয়ে পরে থাকার পর রাত তিনটা বা চারটার দিকে হয়ত মনে পরে তার একটা বউ আছে।হয়ত শারীরিক চাহিদার কারণেই মনে পড়ে।না হলে তাও পড়তো না।বছরে কয়েকমাস বেকার ঘরে বসে না থাকলে যেন তার শান্তি হয় না।এদিকে বাসা ভাড়া বাকি পাঁচ/ছয় মাসের,আবারও ছেলের মাদ্রাসার বেতন বাকি চার/পাঁচ মাসের।তার উপর সাইমার এই অবস্থা।এই সময় যে নিজের একটু যত্ন নিবে,ভালো মন্দ খাবে সে উপায় কী আছে?না তার স্বামী নামক ভালোবাসার মানুষটা সেটা খেয়াল করেছে।যদি খেয়াল করতই তাহলে কী এভাবে চাকরি ছেড়ে ঘরে বসে থাকতে পারতো? হয়ত না! তার উপর রয়েছে হাজারো ঋণের বোঝা! এর কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়া ওর কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়া যেন ওর একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জীবনটা যেন একটা লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে সাইমার! একটা আফসোস হয়ে দাঁড়িয়েছে! একটা একটা নিশ্বাস যেন জীবনের এক একটা ব্যর্থতাকে প্রকাশ করছে।

আরো পড়ুনঃ  যৌতুকের জন্য অভিশপ্ত জীবনের গল্প

সাইমা কাঁদতে কাঁদতেই জীবনে পার হওয়া বারোটি বছরের হিসাব করছে আজ।বিবাহিত জীবনের এই বারো বছরে কি পেলো মেয়েটি।শুধু মাত্র দুই সন্তানের জননী ছাড়া।আর কয়দিন পরে হয়ত তিন সন্তানের জননী হবে!অথচ এখনোও শাশুড়বাড়িতে এক টুকরো জায়গা পায় নি মেয়েটি।কিসের আশায় এতগুলো বছর পার করলো সে?কার আশায় মেয়েটি ঘর ছেড়েছিলো?বাবা মায়ের উপর ভরসা না রেখে নিজের পছন্দকে ভরসা করেছিলো?
আজ যেন সব ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ছে।যখন জীবনের হিসাবের খাতা খুললো সেখানে শুধু শূন্যতা ছাড়া কিছুই দেখছে না সাইমা।

 

আর এই শূন্যতায় সাইমাকে ভেতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে।জীবন নামক মঞ্চ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাচ্ছে।
আবার পর মুহুর্তেই মনে হচ্ছে সে যদি না থাকে তার সন্তানের কি হবে?
আদৌও এতসব প্রশ্নের উত্তর কী সাইমার আছে?
হয়ত নেই!
শুধুই এই জীবন সংসার নামক জেলখানায় সারাজীবন এভাবেই তাকে আফসোস করে জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে।ভালো হয়ত আর থাকা হবে না!
প্রতিটা মানুষ একটা বয়সে এসে কোন না কোন ভুল করে।আর সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে বাবা মাকে ভরসা না করা…তাদের উপর বিশ্বাস না রেখে নিজের উপর বিশ্বাস করা।কিন্তু সবসময় যে নিজের সিদ্ধান্ত গুলো সঠিক হয় না এটা আমরা বুঝতে পারি না।আর এভাবেই শেষ হয়ে যায় একটি সুন্দর সাজানো গুছানো জীবন!

 

আরো পড়ুন এবং লেখুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *