
নরখাদক
আতিয়া মাহজাবিন
পাথর ছুঁড়ে মারে যারা রক্তাক্ত এক মানবজনে,
তাদের চোখে আগুন জ্বলে, তৃষ্ণা শুধুই হিংস্র বনে।
নৃত্য করে লাশের উপর— উল্লাসে ভরা হায়নার দল,
আর চারপাশে থেমে দাঁড়ায় শত জনতা, নির্বাক, নিস্পল!
তাদের চোখে বিস্ময় নেই, হৃদয়ে নেই ব্যথার রেখা,
কারো ঠোঁটে প্রতিবাদ নেই, নেই যে কোনো লহুর শিখা !
আমি দেখি টিভি স্ক্রিনে, ভাবি— “এটা তো অভিনয়!”
বাস্তবে এমন হয় না তো! কোথায় বিচারের কঠিন ভয়?
ভাবি, “নিশ্চয় ক্যামেরা আছে, সেট বানানো কৃত্রিম দৃশ্য!”
অভিনয় ছাড়া কী করে ঘটে এমন নিষ্ঠুরতম সত্য ?
কিন্তু বাস্তব বাজে কানে— “হ্যাঁ, সত্যিই সে খুন হয়েছে।”
পাথরে পাথরে থেঁতলে খুন, সভ্যতার শরীরে দগদগে চেঁচে!
নরখাদক নামক দল —হায়! তারা তো মানুষ ছিল!
কীভাবে তারা দাঁড়িয়ে রইল? কীভাবে চুপসে গিল?
রক্ত ঝরছে! শির ছিঁড়ছে! শরীর থেঁতলে থেঁতলে দগদগ!
আর জনতা? তারা ক্যামেরা ধরে, লাইক চায়—ছবিটা লাগসই রগরগ!
বলো তবে, এই সমাজে মানুষ বাঁচে? নাকি মুখোশ পরে শকুন হাঁটে?
মানবতার নামগন্ধ নেই— লাশের উপর যেই হায়না নাচে।
বিবেক কি আজ কোণঠাসা? সত্য কি আজ নিঃশেষ?
অভিনয়ের চেয়ে ভয়ংকর আজ যে বাস্তবেরই প্রতিশেষ।
তাই তো বলি, হে সমাজ, ভেঙে পড়ো, জ্বলে ওঠো জ্বালায়,
না হলে এই পথেই একদিন তুমিও লাশ হবে হায়!
পাথর ছোঁড়া ঐ হাতগুলি ছুঁয়ে যাবে কপালে তোর,
আর তখন তুইও খুঁজে পাবি—একজন কবির বিদ্রোহী চোর!
জেগে ওঠো, হে কলম! তুমি এখন কাঁদবে না—
রক্তে রঞ্জিত এই রাতের প্রতিশোধ হবে না স্তব্ধ সুরে গাঁথা।
বজ্রের ভাষায় লিখে রাখো, ইতিহাসের গায়ে খোদাই করে—
‘এই সমাজ একদিন চুপ ছিলো, তাই হায়নারা শিকারে মেতে পড়ে!
তবে সেই অন্ধ যুগের গন্ধ মাড়িয়ে আজও শহীদের খুন ভাসে,
জালিম তুই ধ্বংস হ, ন্যায় বিচারের ত্রাসে!’