বৃষ্টি ভেজা স্বপ্ন
রাফিয়া নিসা
কলেজ শেষে বাসায় ফেরার জন্য বের হতে হঠাৎ এত জোরে বৃষ্টি শুরু হল! এখন আর বাড়ি যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয় যদি যেতে চাই তবে এই বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। হঠাৎ চোখ পরল ছাতা হাতে অসম্ভব সুন্দর একজোড়া মানুষ মানুষীর দিকে। খুবই আকর্ষণীয় লাগছে তাদের দুজনকে। বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণে তারা আর বেশিক্ষণ ছাতা নিয়ে হাঁটতে পারল না ।মেয়েটি এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। ছেলেটি মেয়েটিকে রেখে ছুটে গেল চায়ের দোকানে, হাতে দুই কাপ চা নিয়ে এসে মেয়েটিকে বলল এই নাও। তোমার জন্য গরম চা। মেয়েটি বলল,চা ! চা কেন? ছেলেটি বলল এই বৃষ্টির দিনে প্রিয় মানুষের সাথে এক কাপ চা খাবার অনুভূতি কত সুখদায়ক সেটাই বোঝানোর জন্য। মেয়েটি হেসে হেসে বলতে লাগলো “যাক তবে আরও একটি স্মৃতি তৈরি হচ্ছে আমাদের”।
আমি মুগ্ধ হয়ে তাদের দেখছি ,আর ভাবছি ইস্ আমার জীবনেও এমন কেউ কবে আসবে?? যেদিন আসবে সেদিনটা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় মুহূর্ত সেদিন আপনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে। হয়তো অনেক মেঘলা থাকবে দিনটা, চারিদিকে ঝড়ো হাওয়া। মাঝে মাঝে মেঘের গর্জন ও হালকা কাঠ গোলাপের গন্ধ বাতাসে ভেসে যাবে।
এই বৃষ্টির মতো একদিন খুব ঝুম বৃষ্টি নামবে। চারদিকে বাতাস বয়ে যাবে। ভিজে শীতল হয়ে যাবে আমাদের শরীর। ওগো ,নীলাঞ্জন তারপর আপনি আর আমি নির্জন রাস্তা দিয়ে হাত ধরে হেঁটে যাবো। কোনো ছাউনি থাকবে না, জ্বর আসার ভয় থাকবে না, ভিজতে বারণ থাকবে না। ভেজা গাছগুলোতে বাতাসের দোলায় ইলশেগুঁড়ো বৃষ্টি হবে। মেঘের আচমকা গর্জনে আঁকড়ে ধরবো আপনার বাহু। অতঃপর নির্জন রাস্তা পেরিয়ে যখন ব্যস্ত রাস্তায় আসবো …!! বৃষ্টি ভেজা গাড়ি গুলোর সাই সাই গতিতে চলবে আর আমরা নিঃশব্দে ধীর গতিতে হেঁটে চলবো কোলাহল পেরিয়ে, অব্যক্ত আবেগ নিয়ে।
সবাই আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকাবে আর বলবে,
এরা পা!গ!ল নাকি! “!!!!
যে যাই বলুক আমরা থামবো না সেদিন।
আমরা জানবো এখানে আর কেউ নেই; আপনি, আমি আর ঝুম বৃষ্টি……আমি আপনার দিকে তাকাবো ভিষণ আবেগ নিয়ে, আপনার মায়াবি চোখ দুটো দেখবো মন ভরে। অশান্ত হৃদয়কে স্তব্ধ করার জন্য বলবো এই মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে সারাটা জীবন পার করে দেওয়া যাবে নিশ্চিন্তে। অতঃপর আপনি যখন আমার দিকে তাকাবেন!
মুচকি একটা হাসি দিয়ে, আপনার বাহুতে লজ্জা ভরা মুখটা লুকিয়ে বলবো ,তাকিয়ে আছেন কেনো এভাবে?
আপনি ধীর গতিতে আমার বৃষ্টি ভেজা এলো চুল কান থেকে সরিয়ে, ভেজা ঠোঁটে ফিসফিস করে বলবেন, বৃষ্টি ভেজা আমার প্রিয়তমাকে কতটা মায়াবী লাগছে সেটাই নয়ন ভরে দেখছি । আপনার স্পর্শের শেষ লগ্নে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আপনার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণে নিজেকে হারিয়ে ফেলবো অজানায়, অনুভব করব আসলে ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকা পৃথিবীর অধিক সুন্দরতম মুহূর্ত।
এই মুহূর্তগুলো শুধু একান্তই নিজের কাছে যত্ন করতে হয়। অপেক্ষায় আছি আমি আপনার এবং কল্পনার এই সুন্দর দিনটির জন্য। এই যা বৃষ্টি থেমে গেল !! আর আমার ভাবনাও । পাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি আর ছেলেটি চলে গেছে, রাস্তার শেষ মোড় পর্যন্ত তাদের কোন অস্তিত্ব নেই। ভাবনার জগতে এতটাই বিভোর ছিলাম যে কে পাশ থেকে চলে গেল কে পাশে এসে দাঁড়ালো কিছুই খেয়াল করলাম না। এবার গুটি গুটি পায়ে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিলাম। বাসায় ফিরে দেখি মা খাবার সাজিয়ে বসে আছে। আমার বাবা নেই ,তাই মা-ই আমার সব চেয়ে বেশি আপন আর আমিও মায়ের আপন। মা কখনো আমাকে রেখে খেতে বসে না। অতঃপর হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে মায়ের সাথে আহার কার্য শেষ করে বারান্দায় বসে আছি, এমন সময় মা আসলো, মা এসেই আমার হাতে একটা ছবি ধরিয়ে দিল বলল ,”দেখতো কেমন লাগে”? ছবিটা একটা ছেলের ছিল অসম্ভব সুদর্শন একজন পুরুষ। আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ ছিলেন তিনি। মায়ের সাথে সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে বললাম,
-হ্যাঁ মা, ভালোই!!
-তাহলে তাদেরকে আসতে বলি (মা)
-মানে কি! কাদের আসতে বলবে তুমি??
-তোর হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের।
-ধুর আম্মু কি যে বল!
-এত লজ্জা পেতে হবে না কালকে সুন্দর করে সেজেগুজে থাকিস ওরা তোকে দেখতে আসবে।
আমি তো মহা খুশি ছেলেও পছন্দ হয়েছে আর বিয়ে করা শখ আমার অনেক আগে থেকেই। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখি আমার একটা ছোট্ট সংসার হবে।যেখানে হাসি, কান্না, ভালোবাসা, আবেগ সব কিছু থাকবে অফুরন্ত। অবশেষ কালকের দিনটি চলে আসলো, খুব সুন্দর করে নিজেকে সাজালাম। নিজেকে আয়নায় দেখে বারবার মনে হচ্ছে “আরে ইয়ে অপ্সরা কাহা সে আয়া”। ছেলেপক্ষ আসলো , মা তাদের সাথে কথা বলছে। এমন সময় আমাকে আমার খালাতো বোন নিহারিকা ডেকে বলল ,”আপু তোকে খালামনি ডাকছে আমি তোকে নিয়ে যেতে এসেছি”আমি বললাম,
-এখনই যেতে হবে?
-হ্যাঁ আপু !! এখনই যেতে হবে কেন তোমার কি লজ্জা করছে নাকি?
-ধ্যাত কি যে বলিস চল যাচ্ছি।
-হ্যাঁ চলুন মহারানী।
মাথা নিচু করে ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়ালাম গিয়েই সবাইকে সালাম দিলাম। তবে এত আস্তে বললাম যে আমার গলার আওয়াজ কারো কানে মালুম হলো না। মা বললো এই যে আমার মেয়ে স্তব্ধা।
-স্তব্ধা সবাইকে সালাম দেও মা।
-জি আসসালামু আলাইকুম।
আচমকা ছেলের মা বলে উঠলো এত বড় মেয়ে কি এখনো আদব কায়দা শেখাননি? আপনি বললেন তারপর যে সালাম দিল?
মা বলল, আসলে অনেক লোক দেখেছেতো এই জন্য হয়তো একটু লজ্জা পাচ্ছে বোধ হয়।ছেলের মা বলল এখনই এই অবস্থা বিয়ের পর না জানি কি হয়।
আমি রীতিমতো তাদের কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি ।মনে মনে ভাবলাম ,কি আছে আমার কপালে? তারপর একের পর এক প্রশ্ন আর উত্তরের খেলা শুরু হল। প্রশ্ন উত্তরের খেলা শেষে ছেলের মা বলল মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।
মা বলল, আলহামদুলিল্লাহ । তাহলে ছেলে মেয়ে একটু আলাদা কথা বলুক ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে। ছেলের মা বলল হ্যাঁ বলতেই পারে , নিবিড় যা বাবা স্তব্ধার সাথে কথা বলে নে। নিবিড় বলে উঠলো না মা আমি যাব না। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম ভাবলাম তার কি আমাকে পছন্দ হয়নি? আমি কি দেখতে এতটাই কুচ্ছিত?
তার মা তাকে ধমক দিয়ে বলল যা কথা বলে আয়।
তার মায়ের কথা রাখতে সে আমার সাথে কথা বলতে বলতে আসলো।
-জী !আমি নিবিড় ।
-হ্যাঁ !জানি তো।
-কেমন আছেন আপনি?
-জি ভালো।
-আচ্ছা আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি আমায় কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না!যেমন,আমি কেমন আছি?
-হ্যাঁ আপনি কেমন আছেন?
-এভাবে কথা বলছেন কেন ? রেগে আছেন মনে হচ্ছে?
-ঠিক রেগে নেই ।তবে আপনি আমার সাথে কথা বলার জন্য আসতে চাইছিলেন না কেন?
আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়নি! (সংকোচ নিয়ে বলি)
-আসলে ব্যাপারটা এমন নয় আমি মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারি না কথা আটকে ,যায় গলা শুকিয়ে যায় আর…….
– থাকার বলতে হবে না বুঝেছি।
কেন যেন তার কথা শুনে অনেক হাসি পাচ্ছে আর মনে হচ্ছে ছেলেটা হয়তো অনেক সহজ সরল একদম আমার মনের মতো। তাকে প্রথম দেখায় আমার অনেক ভালো লেগে গেল ,মনে হয় তার জন্য আমি সারা বিশ্বের সাথে যুদ্ধ করতে পারব ,তাকে আমি ভীষণভাবে চাই। তার সাথেই আমি বৃদ্ধ হতে চাই। পরক্ষণেই একটি ঘোরের ভিতর ডুবে গেলাম। পাশ থেকে কে যেন ডাকছে,
স্তব্ধা।
ওই স্তব্ধা আর কত ঘুমাবি এবার ওঠ। ঘুম ভেঙে উঠে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। হতভম্ব হয়ে হয়ে নিজের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললাম ইস্ যাহ এতক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখলাম। এটা না হলেও পারতো আমার সাথে। তবে যাই হোক স্বপ্ন হলেও এমন একটা দিন নিশ্চয়ই আসবে।
(সমাপ্ত)
লেখক পরিচিতিঃ কবি রাফিয়া নিসা ২৩ মে ২০০৫ সালে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো: নাজমুল হুদা রিপন ও মাতা খাইরুন নাহার লিজা। তিনি ২০২২ সালে গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। বর্তমানে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে অধ্যয়নরত। দশম শ্রেনিতে থাকা কালিন প্রথম লেখালেখি শুরু করেন।