
সপ্তাহখানেক হলো বৈষম্যবেধ বইটি পড়েছি। কিন্তু রিভিউ লেখার সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। অবশেষে মনে একটু সাহস সঞ্চয় করে লিখতে বসেছি।
ছোটবেলায় আমরা অনেকেই গল্প করেছি কিংবা বড়দের মুখে শুনেছি— “আমার বাপ-দাদারা জমিদার ছিল। সেই আমলে যদি দাদায় ১ টাকা দিয়ে এই জমি বিক্রি না করত, তাহলে আজও আমরা জমিদার থাকতাম।” কখনো কি ভেবে দেখেছেন, জমিদারি চলে গেলে কেমন অনুভূতি হয়? বা ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর জন্য নিরলস পরিশ্রম করেও যদি তার ফল অন্য কেউ ভোগ করে, কেমন লাগে?
আরেকটি প্রশ্ন ভাবুন- যুদ্ধের সময় নিজের গ্রাম বাঁচাতে পাকবাহিনীর সঙ্গে আপস করলে সে কি রাজাকার হয়ে যায়? এরকম জটিল প্রশ্ন গল্পের মাঝে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে, যা পাঠককে ভাবায়।

বৈষম্যবেধ’ উপন্যাসটি পড়ার পর আমার মনের মধ্যে এক ধরনের ভারী অনুভূতি তৈরি হয়েছে, যা সহজেই মন থেকে সরাতে সক্ষম হই নাই। তিন প্রজন্মের জীবনসংগ্রাম, সময়ের পরিবর্তন এবং সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলানোর এক করুণ বাস্তবতা এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।
গল্পের কাঠামো ও বিশ্লেষণ
প্রকাশকের লেখা থেকে বইয়ের নাম বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, লেখক এখানে তিন প্রজন্মের বৈষম্যের গভীরতা— অর্থাৎ ‘বেধ’-কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ওসমান, তার বাবা রহমত এবং দাদা ইরাজ আলী—তিন প্রজন্মের জীবনের টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ও সময়ের পরিবর্তন নিপুণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গল্পের বুনন এতটাই চমৎকার যে, কখন সময় কেটে যায়, তা বুঝতেই পারা যায় না।
গল্পের কয়েকটি জায়গায় থমকে যেতে হয়। মনে হয়েছে, লেখক এতটা নির্মম হলেন কেন? যেমন, শরীফার মেয়ে বিলকিসের অপঘাতে মৃত্যু—এটা কি দরকার ছিল? কিন্তু বাস্তবতাও তো এমনই। আজও বিলকিসরা এমন করুণ পরিণতির শিকার হয়। কিন্তু ওসমান হয়ে ফিরে আসে ক’জন?
ব্যক্তিগত অনুভূতি
পুরো বইয়ের কাহিনি বিশ্লেষণের ধরনটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।কাহিনি বিশ্লেষণের দিক থেকে পড়ে তৃপ্তি পাওয়া গেছে।তাছাড়া ভোরের শিশিরের বইয়ের বাইন্ডিং এবং প্রচ্ছদ বেশ আকর্ষণীয় লাগে।
ভালো লাগার কথা
আসলে আমার মতো মানুষদের কখনো ভালোবাসতে নেই। কেননা আমরা সৃষ্টিশীল মানুষ। সৃষ্টিশীল মানুষকে ভালোবাসা মানেই নিজের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের গলা টিপে মারা। কিন্তু নারী, সব সময় সৃষ্টিশীল মানুষকেই ভালোবাসে। যখন মানুষটার প্রেমে পড়ে তখন এতটাই আবেগে আপ্লুত থাকে যে, দুনিয়ার আর কিছুই তার চোখে পড়ে না। সে মনে করে, শুধু মানুষটাকেই না, সে তার সবকিছুকেই ভালোবাসে। ফলে একদিন সে ঐ সৃষ্টিশীল মানুষটির সাথে সংসার জীবনে পা বাড়ায়। এরপর যখন বাস্তবতা এসে তার সামনে দাঁড়ায় তখন দেখা যায়, এতদিন সে কেবল ঐ সৃষ্টিশীল মানুষটাকেই ভালোবেসেছে; তাঁর সৃষ্টিকে না। আর তার এই মনোভাব যখন সৃষ্টিশীল মানুষটি বুঝতে পারে তখন ঐ নারীর প্রতি তার মন বিষিয়ে ওঠে-সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে সে তখন তাঁর সৃষ্টিকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চায়; আর তাঁর ভালোবাসার মানুষটি ধীরে ধীরে মন থেকে অনেক-
অনেক দূরে সরে যায়…
বই : বৈষম্যবেধ
লেখক : ধ্রুপদ
ঘরানা : সামাজিক উপন্যাস
প্রকাশনী :ভোরের শিশির
মুদ্রিত মূল্য: ৯৬০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪১৬
রেটিং : ৯.৬/১০