ভূতূড়ে মানুষ
বখতিয়ার উদ্দিন
রবি ডুবার সাথে সাথে পাড়ার মানুষেরা দিনের সমস্ত কাজ সেরে খেয়ে – দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তাদের জীবনটা রাতের আঁধারের মতো সারা জীবন আঁধারে ঢাকা থাকে। তারা জীবনের ক্ষুদ্র ব্যাপার নিয়ে অস্থির হয়ে মরে আবার জীবনে বৃহৎ কিছু হারিয়ে যায় তার কোন খেয়াল থাকে না। রাস্তা থেকে শুরু করে দুই পাশে নয় টি করে মোট আটার টি ছোট ছোট দুই চালার কুঁড়ে ঘর। আর পাড়ার শেষ মাথায় মুরব্বী আমিনের বাপের ঘর। সবার ঘর ছন বা নাড়ার ছাউনি আর আমিনের বাপের ঘরটি টিনের চাউনি।
একটু আগে রাতের ভয়া বহ আঁধারের মতো দুই সারির মাঝে এক তুমুল ঝগড়া বয়ে গেল।
খেলতে গিয়ে মালাকার মায়ের ছোট ছেলে আর ফরিদের মায়ের ছোট ছেলের ভুল বুঝা বুঝির সূত্র ধরে বড়দের মধ্যে এক ভূতূড়ে ঝগড়া হলো।
উভয়ে ছয় বছরের শিশু। রাস্তার পাশে আরো কয়েক জন শিশু বসে বসে আপন মনে খেলা করছিল। খেলার মাঝে ফরিদের মায়ের ছেলে মালেকার মায়ের ছেলেকে হারাতে না পেরে কান্না শুরু করে দেয়। খেলায় তাল গোল পাকিয়ে বসে।একটু পর কান্না থেমে গেলে তারা আবার আপন মনে খেলতে বসে। কিন্তু মাঝ খানে কে যেন ফরিদের মাকে খবর দেয়, মালেকার মায়ের ছেলে তার ছেলেকে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। ফরিদের মা খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে রেগেমেগে মালেকার মায়ের দরজার সামনে গিয়ে গালাগাল দিতে শুরু করে। কঠোর গালাগাল করার পরও যখনই কারো সাড়া পায় নি তখন ঘটনা স্থলে গিয়ে নিজের ছেলেকে কোলে নিয়ে মালেকার মায়ের ছেলেকে একটি দুটি ঘুষি মেরে ঘরে ফিরে আসবে তখন কোথায় থেকে মালেকার মা দৌড়ে এসে ফরিদের মায়ের চুল টেনে ধরে। তখন সঙ্গে সঙ্গে ফরিদের মা ও মাগো বলে নিজ শিশু সহ মাটিতে লুঠিয়ে পড়ে। তারপর দুই জন মিলে অনেক ক্ষণ হাতাহাতি, মারামারি, ঘুষাঘুষি করে।
ঝগড়া তুমুল পর্যায়ে চলে যায়। ঘটনা দুই জন থেকে সম্পূর্ণ পাড়াতে ছড়িয়ে পড়ে। দুই সারির লোক দুই জনের পক্ষে যোগ দিয়েছে। আবার অনেকে মধ্যস্থলে ভূমিকা নিয়েছে। তবে মালেকার মায়ের চেয়ে ফরিদের মায়ের পক্ষে লোক বেশি ছিল। কারণ ফরিদের মায়ের প্রচুর সুদের টাকা এবং লেনদেন রয়েছে বলে সবাই ধারণা করে। অনেকে ফরিদের মায়ের কাছে টাকা ধার বাবদ ঋণী রয়েছে। মালেকার মায়ের পক্ষের ধারণা, ধার শোধের সময় মওকুফের জন্য একটু আন্তরিক হয়েছে অনেকে। তবে মারের ছুটে কে পক্ষ নিয়েছে আর কে বিপক্ষ নিয়েছে তা ফরিদের মা আর মালেকার মায়ের কোন খিয়াল নেই।
এই পাড়ায় মাগরিবের সময় এক অরাজক ঘটনা ঘটে গেল। অনেকে আহত হয়েছে কিন্তু কেউ নিহত হয়নি। অনেকের শরীর ফেঁটে রক্ত বের হয়েছে। অনেকে ক্লান্ত হয়ে দাওয়ায় বসে পড়েছে। অনেকে আমিনের বাপের কাছে বিচার নিয়ে গেছে।
ঘটনা একটু শীতল হলে আমিনের বাপ দরজা খোলে ঘর থেকে বের হয়। আমিনের বাপ দরজায় দাঁড়িয়ে চুপ হয়ে সামনে তাকিয়ে থাকে। মুখে কোন কথা নেই। যারা বিচার নিয়ে এসেছে তাদের মুখেও কোন কথা নেই। আমিনের বাপের মুখের উপর কথা বলবে এ রকম সাহস কারো কাছে নেই। সবাই তাকে যেমন সম্মান করে তেমনি ভয়ও করে। সবাই মনে করে তিনি এক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এবং তার অনেক অলৌকিক সম্পদ রয়েছে। সবার জীবনের চেয়ে তার জীবন একেবারে ব্যতিক্রমধর্মী। তিনি ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে সহজ সরল জীবন যাপন করেন।
আমিনের বাপ অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।মুখে সাদা দাঁড়ি,গায়ে পড়া সাদা পাঞ্জাবি। তারাও আমিনের বাপের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর আমিনের বাপ কোন কিছুর উত্তর না দিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে যায়। বাহিরে দুই পক্ষের লোকেরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তারাও যার যার মতো করে ঘরে ফিরে যায়। আমিনের বাপের এমন আচরণে তারা মনে করে বিচার হয়ে গেছে।
এভাবে তারা এই পাড়ায় বছরের পর বছর বাস করে আসছে।ভূতুড়ের মতো সকাল বিকাল কারণে অকারণে ঝগড়া করে থাকে। সব ক্ষেত্রে তারা একটু হুশহীন হলেও আমিনের বাপ তাদের পাশে থাকে।
আরো পড়ুন এবং আপনার লেখা নিয়মিত প্রকাশ করুন, আমাদের সেরা দুটি অনলাইন প্লাটফর্ম অনুমতি ও দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য। আপনাদের নিয়মিত দিতে পারেন দৈনিক চিরকুটে সাহিত্যে এবং প্রতি সপ্তাহে অনুমতি সাইটে আপনাদের লেখা প্রকাশ করতে পারবেন।
★ অনুমতি