সাহিত্যচর্চা নিয়ে কিছু কথা
আহমাদুল্লাহ আশরাফ
সাহিত্যচর্চার সূচনা হয়েছে ভাষার সূচনা থেকেই। অভিজাত মানুষগুলো দিকে দিকে রচনা করেছেন ভাষার বৈচিত্রতা। বিভিন্ন নিয়মকানুন আবিষ্কার করে ভাষাকে করেছেন শ্রুতিমধুর রুচিসম্মত। কথার ঢংয়ে এনেছেন নানান পরিবর্তন। লিখনির রূপ দিয়েছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে। ফলে—সেই রীতি ও বাচনভঙ্গি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।কখনো কেউ ভাষাকে প্রকাশ করেছেন ছন্দবদ্ধাকারে।কেউ আবার গল্পাকারে।কেউ আবার দেখিয়েছেন বিভিন্ন কাহিনিকে ভাষার আদলে সাজিয়ে। সবমিলিয়ে সবাই-ই ভাষাকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার সাধনা করে আসছে। সেই থেকেই সাহিত্যচর্চা নিয়ে মানুষের মনে সৃষ্টি হয় প্রবল আগ্রহ উদ্দীপনা।
প্রতিটি ভাষারই রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা।যেগুলো যদিও ভাষার পরেই আবিষ্কৃত। তথাপি সেগুলোর গুরুত্ব কম করে দেখার সুযোগ নেই।কারণ; সেইসব নীতিমালা ভাষার উপর গবেষণা করেই তৈরি করা হয়েছে। সাথে সাথে কোন ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করতে হলে, সেই ভাষার ভাষাবিদ ও বড় বড় ব্যক্তিদের রীতিনীতি মেনে চলা ভাষা সুন্দর হওয়ার জন্য যথেষ্ট সহায়ক। ফলে—তাদের পড়তে হবে।দেখতে হবে তারা কোন বিষয় কীভাবে কোন পদ্ধতিতে ফুটিয়ে তুলেন। কীভাবে সামান্য কাহিনীকে চমকপ্রদ করে উপস্থাপন করেন।
তবে আমরা যারা মুসলিম। সাহিত্য নিয়ে কম বা বেশি করে চর্চা করার চেষ্টা করছি। তাদের সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি যে,আমি যাদের বই পড়ছি।যার নিয়ম মেনে লিখতে চেষ্টা করছি। তার মন মেজাজ কেমন! যদি বিধর্মী হয়, তবে সেটাও মাথায় রেখে তার বই পড়তে হবে। শুধুমাত্র তার উপস্থাপননীতিকে খুঁজে বের করতে হবে। গ্রহণ করতে হবে তার বাক্য চয়ন, শব্দ চয়ন। কখনো নেওয়া যাবে না তার ভ্রান্ত আকিদা বিশ্বাস। কোন কৌশলেই যেন আমি তার পথে চলে না যাই সেইজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।আমাকে ভাবতে হবে—সে বিধর্মী। আমি মুসলিম। আমার সবই হবে ইসলামানুযায়ী। ইসলামই আমার চলার পথিকৃৎ। নতোবা এ সাহিত্যচর্চাই আমাকে হালাকের পথে নিয়ে যাবে। খোদার নাফরমানি শেখাবে।দেখাবে দুনিয়ার মোহ ক্ষমতা। যা কোন মুসলিমের কাছে কখনোই কাম্য নয়।
তোমাকে নারী নিয়েই লিখতে হবে!লেখার আদ্যোপান্ত নারীত্বকেই কি ফুটিয়ে তুলতে হবে।নতোবা সাহিত্য হবে না!!হবে না ভাষার সঠিক মূল্যায়ন!!এটাই কি তবে তোমাকে অশ্লীলতা শেখাবে না!নিয়ে যাবে না ব্যর্থতার দিকে। রঙিন চশমা পরিয়ে জমকালো আয়োজনের কল্পনা দেখাবে না!মনে রাখতে হবে—তুমি একজন মুসলিম। তুমি কবি হও,বাধা নেই।তবে মুসলিম কবি হও!লেখক হবে,কোন আপত্তি নেই।তুমি কোরআন হাদিস নিয়ে লিখো!মানুষের কাছে সেগুলো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলো।অযথা, নারীর বর্ণনা দিয়ে কী লাভ বলো!চুলের দীর্ঘতা বলে কী মজা পাও!যে মজা কখনো সুখের নয়।শুধুই হতাশা নিরাশার সমুদ্রে ডুবিয়ে যায়। দেখায় সুখের স্বপ্ন কিন্তু দুঃখ ছাড়া কপালে আর কিছুই ঝুটে না।
বলতে পারো—সাহিত্য তো ওদের হাতে।ওদের রীতিনীতি মেনে না চললে তো সাহিত্যই হবে না।মানুষ সেটাকে কখনোই মূল্যায়ন করবে না।মানুষ বলবে—এ কোন সাহিত্য হলো! সাহিত্যের নামে কী শিখছো এগুলো!ইত্যাদি নানান কথা বলতে পারে।এটা তাদের পঁচা দৃষ্টিভঙ্গি।তা-ই যাতা বলে নিজেকে প্রশান্ত করছে।আমি বলবো—তোমার কি মনে আছে রাসূলের সময়কার কথা।হাসসান ইবনে সাবেত রাযিয়াল্লাহু আনহুর কথা। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন কাফেররা কবিতার ভাষায় সাহিত্যের চমক দেখিয়ে গালিগালাজ করতো।তাদের প্রশংসা ও ইতিবৃত্ত শুনিয়ে নিজেদের বড় মনে করতো।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহিত্য দিয়ে আঘাত করতে থাকলো।তখন কি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান ইবনে সাবেতকে হকের পথে কাজে লাগাননি।সাহিত্য দিয়ে বাতিলের উচিত জবাব দেননি।
সেই সাহিত্যে কি আদৌও নারী ছিল! যৌবনের উত্তেজনা বর্ধক কিছু ছিল!তাহলে আমাদের সাহিত্যে নারী থাকবে কেনো!চোখের চাহনির বর্ণনা, দাঁতের বর্ণনা ইত্যাদি দিয়ে কেনো সাজানো হবে আমাদের সাহিত্যকে।আমাদেন মন মেজাজগুলো কেনো ধাপিত হবে ওদের দিকে।ওরা কি কখনো আমাদের দিকে ধাবমান হয়!আামাদের অনুসরণ করে কখনো!তাহলে আমরা মুসলিম হয়ে নির্লজ্জের মতো তাদের পিছু ছুটবো কেনো!অথচ; হাদিসে এরশাদ হয়েছে—মান তাশাব্বাহা বি ক্বওমিন ফাহুওয়া মিনহুম।অর্থাৎ—যারা যাদের সাদৃশ্য অনুসরণ করে চলে, তারা তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।
লেখার বিষয় খোঁজে পাও না?কীভাবে সাহিত্য শিখবে ইসলামিক মাইন্ডকে সামনে রেখে জানো না? কী লিখবে কাকে নিয়ে লিখবে?এসব বিষয় মাথায় আসছে না? মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা এরশাদ করেছেন—ক্বুল লাউ কানাল বাহরু মিদাদাল লিকালিমাতি রাব্বি।লানাফিদাল বাহরু ক্বাবলা আন তানফাদা কালিমাতু রাব্বি।ওয়ালাউ জি’না বিমিছলিহি মাদাদা।অর্থাৎ—(সারসংক্ষেপ)আল্লাহর কালিমা তথা প্রশংসা লেখার জন্য যদি সমুদ্রকে কালি বানানো হয়,তবুও সমুদ্র ফুরিয়ে যাবে।কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা শেষ হবে না।—সূরা কাহফ।।
তুমি কোরআন নিয়ে লিখো।আল্লাহর নিয়ামতকে একটা লেখায় সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলো।রাসূলকে নিয়ে লিখো।তাকে দেখার কামনা বাসনাকে কাব্যকথায় সাজিয়ে ব্যক্ত করো।প্রতিটি হাদিসের তর্জমা সাহিত্য দিয়ে সুন্দর করে বোঝাও।ইত্যাদি নানান বিষয় রয়েছে ইসলামিক মাইন্ডের।তুমি একজন মুমিন হয়ে তাদের মানসিকতা লালন করবে কেনো।এটা কখনোই উচিত নয়।তোমাকে তোমার জীবন নিয়েই ভাবতে হবে।কোন দিকে ধাবমান হচ্ছো প্রতিনিয়ত। এটা মাথায় রেখে চলতে হবে।
কখনো সাহিত্য ও ইসলামকে আলাদা মনে করো না। সাহিত্য ইসলামিকও হতে পারে।হতে পারে কোরআন ও হাদিসের বাতলিয়ে দেওয়া মতাদর্শে। তা-ই সাহিত্যচর্চা করো তবে কোরআন ও হাদিসকে সামনে নিয়ে করো। দেখবে দিলে একরকম প্রশান্তি কাজ করবে।কখনো পেরেশানি আর হতাশা অন্তত তোমাকে তাড়িত করতে পারবে না। সফল জীবনের দেখা মিলবে এভাবেই। যদি সামান্য মন ও মাইন্ডকে চেঞ্জ করে ইসলামের দিকে নিয়ে যেতে পারো। তবেই পাবে সফলতা দুনিয়া ও আখিরাতের।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।আমাদের প্রতিটি কাজই যেন তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য করতে পারি সেই তাওফিক দান করুন। আমীন।
────সাহিত্যচর্চা নিয়ে কিছু কথা
────আহমাদুল্লাহ আশরাফ
────প্রাবন্ধিক ও গ্রন্থকীট