সাহিত্য এবং সাহিত্যিকদের নিয়ে ভাবনা
বখতিয়ার উদ্দিনবর্তমানে নবীন সাহিত্যিকের সংখ্যা বেশি দেখা যায়।তারা যেমনি ভাবে সাহিত্য রচনা করে যাচ্ছেন তেমনি ভাবে সাহিত্য পাঠ করছেন খুব কম।তারা নিজেদের খুব উঁচু দরের সাহিত্যিক ভাবেন এবং ভাব নেন রবীন্দ্রনাথের মত।কিন্তু তাদের সাহিত্যের মান খুব নিম্ন স্তরে।তারা খুব কম খিয়াল করেন,সাহিত্যে হারিয়ে যাওয়ার সংখ্যা বেশি।লাখে এক জন বাঁচতে পারেন।
অনেকের মনের মাঝে বিষয়টি মনে নেওয়া সম্ভব নয়।হয়তো আমার যুক্তিতে বিষয়টি একটু মিথ্যে হয়ে যায়।সাহিত্যের বাজারে বর্তমানে যেমন অনেক সাহিত্যিকের পদচারণ দেখা যায় তেমনি এই পদচারণ যুগ যুগ ধরে ছিল এবং থাকবে।কোন কারণ ছাড়া কোন যুগে সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের পদচারণ থেমে যায় না।এই গতি চলতে থাকবে।কিন্তু যুগ বা পরিস্থিতিভেদে অনেক সাহিত্যিক থেমে যায়।অনেকের মান খারাপ বুঝতে পেরে থেমে যায়,অনেকে সংসারের পিছু টানের কারণে,অনেকে আর সাহসে ঠিকে থাকতে না পেরে থেমে যায়।আবার রাজা বা রাজ্যের কারণে সাহিত্য জিনিসটা থেমে থাকে।যেমন বাংলা সাহিত্যে ১২০০-১৩৫০ সাল পর্যন্ত ১৫০ বছর অন্ধকার যুগ বলে একটা সময় আছে।তখন রাজা রাজ্যের কারণে কোন সাহিত্য প্রকাশ পায়নি।তবে রচিত হয়েছে অনেক সাহিত্য।
অনেক সাহিত্যিক লিখছেন নিজেকে জাহির করার জন্য।অনেকে লিখছেন অর্থ উপার্জন করার জন্য।আবার অনেকে নিঃস্বার্থ ভাবে নীরবে নিভূর্তে মানব সেবায় নিয়োজিত থেকে দেশ,প্রকৃতি,সমাজ,পরিবার ও মানুষের কথা লিখে যাচ্ছেন সত্যের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য।তাদের কলম সব সময় সত্যের বাণী বহন করে থাকে।যে সাহিত্যিক যে রকম করে লিখে সেই তেমন ফল পেয়ে থাকে।
অনেক সাহিত্যিক দীর্ঘ দিন সাহিত্য সাধনা করার পর হঠাৎ কোন জায়গায় যদি বক্তব্য করার সুযোগ পায় তখন সেই সাহিত্যিক দাঁত বের করে হেসে বলেন,এতো বছর সাহিত্য সাধনা করে আমি কি পেয়েছি?আমার মনে হয় এই সব সাহিত্যিকগণ সারা জনম কিছু পাওয়ার জন্য সাহিত্য রচনা করে যান,মানব কল্যাণে কিছু দেওয়ার জন্য নয়।বা সত্যের বাণী তুলে ধরার জন্য নয়।কবিরা হলো প্রকৃতির শিক্ষক।তারা প্রকৃতির অনেক নিয়ম বুঝেন।তা যদি সততার মাখামাখি করে শিল্পগুণ মত বাজারে বের করে দিতে পারেন তাহলে সেই সাহিত্য তাকে অনেক কিছু দিবে।তবে নাহিত্যের ভূবণে কেউ যদি শুধু পাওয়ার জন্য প্রবেশ করে তাহলে তার সাহিত্য মরু ভূমির অনুর্বর বালির সাথে গণ্য হবে।
একটি দেশে সমসাময়িক যুগে নবীন-প্রবীণ মিলে এক লাখ এর অধিক সাহিত্যিক লেখালেখির সাথে জড়িত থাকেন।এই বিরাট সংখ্যা থেকে প্রতি বছর বই প্রকাশ করে চার হাজার সাহিত্যিক।আমি আগেও বলেছি,এই বিশাল সাহিত্যিকের পদচারণ থেকে কত জন সাহিত্যিক জাতীয় বা আর্ন্তজাতিক পর্যায় পদাচারণ করতে পারেন?সবার মনে শেষ ঠিকানাটা থাকে সত্যি কিন্তু খুব কম সংখ্যক সেই স্তরে পৌঁছাতে পারে।
সফলতা অর্জন করতে না পারলেও হতাশ হবার কিছু নেই।এক জন নবীন লেখক যখন লেখা শুরু করেন তখন তার কিছু থাকে না।একে বারে শূন্য থেকে শুরু করেন।তখন সেই চিত্তের মধ্যে খুব শান্তি উপভোগ করেন।এটাই তার প্রাথমিক প্রাপ্তি।নিজের লেখা নিজে বার বার পাঠ করেন এটা তার প্রশান্তি।এতে ধীরে ধীরে নিজের আত্না পরিশুদ্ধ করে সাহিত্য চর্চা করতে থাকলে অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব।ক্ষুদ্র সফলতা থেকে ধীরে ধীরে নিজ পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায় পর্যন্ত অবদান রাখতে সক্ষম হতে পারেন।বলতে গেলে,সাহিত্য জগতে প্রবেশ করে কেউ খালি হাতে ফিরে না।সেই একটা না একটা কিছু অর্জন করতে পারেন।
সাহিত্য সাধনা অনেক কঠিন কাজ।এতে লাগে মেধা,কৌশল,ধৈয্য, সময় আর পরিবেশ।এমন কি সারা জীবনটা কবর করে দিতে হয় সাহিত্যে প্রবেশ করলে।কত অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কত পাগল পাগল হয়ে যেতে হয়।একেবারে জগতের এক ভিন্ন মানুষ হয়ে যেতে হয়।বলতে গেলে হয়ে যেতে হয় না,হয়ে যায়।জাগতিক কত নিয়ম কানুন ভুলে যায় সাহিত্যিকেরা।এক পোশাকে কত দিন কাটিয়ে দেয় তা বলা খুব মুশকিল।
সাহিত্যিক যদি সাহিত্য চর্চা করতে করতে জীবনের বাড়তি অভিজ্ঞতা শিল্পগুণ সম্ভত সাহিত্য পাতায় ঝরায় তখন তা উৎকৃষ্ট সাহিত্য হয়ে উঠবে।অনেকে জীবনের কোন বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া মনের ভিতর থেকে জোর করে লিখতে থাকেন বা আজকের ঘটনা আজকে লিখে সাহিত্য বলে চালিয়ে দিতে চান।আজকের ঘটনা আজকে লিখলে তা সাহিত্য হবে না।বরং তা হবে প্রতিবেদন। তবে অনেকের প্রখর কল্পনা শক্তি আছে।যা দিয়ে অনেক বিষয় বাস্তব রূপে কল্পনা করতে পারেন।তাদের কল্পনা শিল্পমতে হলে সাহিত্য হয়েও উঠতে পারে।
আজকাল ফেইসবুক যুগে অনেকে লিখছেন।কিন্তু তাদের লেখার মান খুব কাঁচা।কাচাঁ হলেও তাদের হতাশ হবার কিছু নেই।একান্ত নিষ্ঠার ফলে তাদের লেখা একদিন অনেক পাকা হয়ে যেতে পারে।বড় বড় সাহিত্যিকের জীবনী কিন্তু এই রকম।বড় সাহিত্যিক যদিও বা হতে না পারে তাদের ফেইসবুকেরর বা লিটল ম্যাগের কাঁচা কবি হিসাবে স্বীকৃত থাকা প্রয়োজন।
সাহিত্য রচনা করার পাশাপাশি সমালোচনা করা শিখতে হবে।প্রথমে নিজের সাহিত্য নিজেকে সমালোচনা করতে জানতে হবে।পরে অন্যের সাহিত্য সমালোচনা করার ক্ষমতা অর্জন করবে।সমালোচনা হবে সবার স্বার্থের জন্য।শুধু নিজ স্বার্থের জন্য কারো গুণ আড়াল করা যাবে না।সমালোচনায় দোষের চেয়ে গুণ বেশি আলোচনা করা শ্রেয়।চারটি গুণ বলার পর একটি দোষ বলা ভাল।আর সমালোচনা হবে শিল্পগুণ সম্মত।বুঝতে হবে শিল্পগুণ কি?জানতে হবে কবিতার ছন্দ এবং শরীর।
সাহিত্য এবং সাহিত্যিকদের মাঝে আরো একটি জিনিস থাকা প্রয়োজন।তা হলো,বই ক্রয় এবং পাঠ করা।বইকে সম্মান করা।প্রকাশনা সংস্থাগুলোও সাহিত্যের জন্য আর এক বিশাল জগতে।বর্তমানে বাংলা একাডেমীর একুশে বই মেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার বই বিক্রয় হয়ে আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়।এটা কিন্তু সাহিত্য এবং সাহিত্যিকদের জন্য এক বিরাট সু-খবর।এই সু-পথ দিয়ে নির্মাণ হবে সাহিত্য এবং সাহিত্যিকদের জন্য নতুন নতুন ভাবনা।।