মো. হাসিবুর রশীদের সেরা ১টি কবিতা ও ২টি গল্প

“ফেলে আসা সময়” শিরোনামে লেখাটি কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্য পুরস্কার -২০২৩ এ প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছে।

ফেলে আসা সময়
মো. হাসিবুর রশীদ

ফেলে আসা সময় ভেবে হাসা যায়, কাঁদা যায়। কিন্তু সেটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করাটা নির্বোধের কাজ। যে সময়টা চলে গিয়েছে সেটা ফিরে আসার জন্য যায় নি। সময় আমাদের গুলতিতে ঢুকিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আর আমরা শহরের ব্যস্ততায় ভনভন করে ঘুরতে থাকি। এটাই জীবন।

জীবন কখনো গুলতিতে ঢুকাবে, কখনো বালতিতে, কখনো কুয়াশায়, কখনো তপ্ত রোদে। জীবন সুন্দর।

শৈশব শৈশবে সুন্দর, যৌবন যৌবনে।

ভালো থাকার পাশাপাশি খারাপটা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ মানিয়ে নেয়া ছাড়া তো উপায় নাই। সময়ের সাক্ষ্যটা আমরা চাইলেও পার হতে হবে, না চাইলেও।

তোমার শৈশব চলে যাচ্ছে তোমায় ছেড়ে
তারে পিছু ডেকো না
বিদায় জানাও হাত নাড়িয়ে।

মনে মনে কত স্মৃতি?
স্মৃতির দিনগুলো হয়ে যাক
পাখা ছাড়া পাখি।

শৈশবের সীমাহীন দুষ্টুমি
দেখো হাতের রেখা
হেড স্যারের বেতানি।

ষোলো: আজকে আমার জন্মদিন
হাসিবুর রশীদ

ক্ষণিকের এই জীবনের পনেরোটি বসন্ত পার হয়ে গেল। অম্লান হয়ে রয়েছে যে কত সহস্র মুরগির ডাক শোনা ভোর। স্মৃতির সেই লাল ডায়েরিতে মিশে আছে কত শত শব্দ। আমার জীবনের সময়ের অসংখ্য সরল সমীক্ষায় করা সময়, ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে। ভোরে বের হওয়া পাখি ঠিক শেষ বিকেলে নীড়ে ফিরে। ফেরা হয় না শুধু আমার। তটিনীর সেই দৃশ্য। তবুও আমার মতো হাজারো যুবকের ফেরা হয় না ভ্রান্তির সেই মায়জালে। মিথ্যে কিছু মায়ার বন্ধন ছিঁড়ে আসতে কষ্ট হয় দ্বীনে।

তবুও যে ফিরতে হবে রবের দরবারে। বুকে যতই চিন চিন করুক না কেন, রবের অবাধ্য হওয়া চলবে না। গভীর রাতের ঘনঘটা আঁধারে হারিয়ে যাওয়া যুবকদের দ্বীনের দাওয়াহ’র অঙ্গনে ভূমিকা রাখা জরুরী।

আরো পড়ুনঃ  রত্না কলমে আল মাহমুদ মিলন

মাঝে মধ্যে ভীষণ কষ্ট পায়। বুকের ভেতরের আসমানে ঠাঁই পায় দুঃখের সেই কালো মেষটি। আকাশছোঁয়া হিমালয়টি যেন বুকের উপর ভর করে থাকে। তখন এই জগৎ সংসারটি বিষন্ন লাগে

প্রযুক্তির অভাবনীয় উদ্ভাবনীর ফলে আমাদের দৈনন্দিন সমস্যাগুলো সমাধানে নিত্য নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। ডিপ্রেশনে থাকলে আমরা কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনি। প্রিয় কবির প্রিয়তমাকে হারিয়ে লেখা বিরহের কবিতা পড়ি। আর যারা এসবের মধ্যে নেই, তারা সিগারেটে পিনিক খুঁজে বেড়ায়। অনেক মাদকে ভুলে থাকতে চাই যন্ত্রণা।

এই সবই আমার গত পনেরো বছরে দেখা অভিজ্ঞতা। যে মানুষটা নিজের কাজে খুব ধীরস্থির এবং চিন্তা ভাবনা করে সম্পূর্ণ করে। আবার সে মানুষটিই সালাতে অনীহা করে।

আমার ক্ষুদ্র জীবনের পনেরোটি বছর অতিক্রম করা শেষ। সামনের বছরগুলো বড্ড চ্যালেঞ্জের।

নতুন করে আমাদের আবার জ্বলে উঠতে হবে। নিজেকে আরো একবার ঝালিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। চারদিকে হারামের ছয়লাব। পাশের লোকগুলোর হারাম সম্পর্ক দেখে নিজেকে এসব থেকে দূরে রাখা বড় কষ্টের। তবুও নিজেকে এই ভ্রান্তির মায়াজাল থেকে। মিথ্যে মোহচ্ছন্ন মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে আমাকে পাড়ি দিতে হবে অনন্তের পথে। জীবনের সময় ফুরিয়ে যাবার আগেই চিনতে হবে পথটি। সূর্যাস্তের পূর্বেই জীবনের নৌকাটি ভেড়াতে হবে কূলে।

এই রঙিন কর্পোরেট দুনিয়া একদিন সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।

 

 

 

প্রেমের মরা জলে ডুবে না…
হাসিবুর রশীদ

 

আমাদের এই ১৩- ১৭ বছর বয়সীদের জন্য একটা বিরাট চ্যানলেঞ্জ হলো – বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আর্কষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। চারিদিকে হারামের ছয়লাব। বন্ধুদেরকে হারাম রিলেশনের অলিতে-গলিতে দেখে নিজেকে সামলে রাখা বড়ই কষ্টের ব্যাপার। বিশেষ করে হাইস্কুল লাইফে ব্যাপারটা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। দেখা যায়, পাশে থাকা ব্যক্তি বিপরীত লিঙ্গের সাথে সারাক্ষণ মোবাইলে চ্যাটে মজে থাকে, ফুটুর ফুটুর করে। এই সব দৃশ্য দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা একজন টিনেজারের পক্ষে বড়ই কষ্টের বটে। তবুও এই কষ্টটা আমাদের মেনে নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ  ফিরবে কি ! কলমে নুসরাহ বিনতে আলতাফ

হে ভাইয়াপু, এই বয়সেই যদি অশান্ত ফিতনার স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দাও। তাহলে নিজের ক্যারিয়ার শেষ। সময় হলে আল্লাহ কোনো এক সবুজ সকালে এই অপূর্ণতাকে পূর্ণ করার জন্য চক্ষু শীতলকারী কাউকে তোমার করে দিবে। সে পর্যন্ত তোমাকে পবিত্র রাখতে হবে। আমিও একজন টিনেজার, যার কারণে এসব সিচুয়েশন আমাকেও নাড়া দেয়।

একটা সুন্দর স্টুডেন্ট লাইফকে নষ্ট করার জন্য বিপরীত লিঙ্গের এই মিথ্যে মোহ-ই যথেষ্ট। যেটাকে তোমরা নাম দিয়েছ রিলেশন। অধিকাংশ রিলেশনশিপেই অভিমানী ঝগড়া, রাগ, মন কষাকষি, ভুল বুঝাবুঝি, সন্দেহের কর্দমাক্ত মাটি লাইফের আনন্দটাকে নষ্ট করে দেয়। পড়ালেখার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে।

 

নিয়মিত পড়ুন এবং লেখুন চিরকুটে সাহিত্য 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *