লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের রকমফের
ইমদাদ উল্লাহ ফিরদাউস
গোধূলিলগ্ন পেরিয়ে এখন বিষন্ন সন্ধ্যা নেমেছে এখানটায়।
কমলা রঙের সূর্যটা তার সবটুকু বিকিরণ গুটিয়ে নিয়ে মিশে গেছে পশ্চিমে দিগন্তের নীলাভ দরিয়ায়। মানে সে অস্তমিত হয়ে গেছে। সেইসাথে গত হয়ে গেছে একটি আস্ত দিন। অতিক্রান্ত হয়ে গেল একটা দিবস। সূর্যের প্রতিনিয়ত এই উদয়-অস্ত আমাদের নীরবে মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির একটি শাশ্বত নিয়ম, তা হল, আমাদের যেমন জন্ম আছে, তেমনি আছে মৃত্যুও। একদিন যেভাবে চারপাশ আলোকিত করে আমরা এসেছিলাম এ ভূপৃষ্ঠে ।তেমনি একদিন চারিধার অন্ধকার করে চলে যাব একই ভূমির গহ্বরে। ঠিক সূর্যের মতো করে।…
ওদিকে পূবের আসমান হতে উদিত হচ্ছে শাওয়ালের পূর্ণ গোলাকার চাঁদ। সে কিছুক্ষণ পরই মিষ্টি আলো ছড়াবে পৃথিবীর বুকে। তার মৃদু আলোয় হরেকরকমের ফলগুলোতে ধরবে পাক। দূরে কোনো কোনো বাড়ির উঠোনে এই আলোর নিচে শীতলপাটি বিছিয়ে দুজনার জম্পেশ চন্দ্রবিলাস জমে উঠবে।…
নানারঙা পাখিরা সব আধারমুখে দলবদ্ধ হয়ে ফিরছে আপন নীড়ে। ওদের ছানাগুলো অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে মায়েদের ফেরার পথে। তাই ওরা ডানা মেলে উড়ে চলেছে আপন গন্তব্যপানে দুর্বার গতিতে।…
উপকণ্ঠের ওখানটায় গুলিস্তানের বৈচিত্র্যময় ফুলগুলো সব ঝিমিয়ে পড়েছে। বেলিফুল শুধু জেগে আছে; সে রাতে ঘুমায় না। পুষ্পকাননের চারিপাশ তার মতমাতানো গন্ধে মৌ মৌ করছে। বাগিচার পাশ দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারীদের নাকে ভেসে আসছে তার সৌরভ।
সারি সারি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা শিমুল গাছগুলোর ডালপালাও নুইয়ে পড়েছে। ঝিরঝির বাতাসে পত্র-পল্লব তার মৃদু দোল খাচ্ছে। ওগুলোও সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়েছে যেন।…
এদিকে মাগরিবের আযান হচ্ছে। কর্মব্যাস্ত বিশ্বাসী মানুষেরা কাজকর্ম ফেলে তড়িৎ গতিতে মাসজিদের
দিকে ধাবিত হচ্ছে। ওরা খোঁজে ফিরছে রিয্কের রব যিনি
তাঁর সন্তোষ। এদের চাই না পার্থিব কোনো প্রাপ্তি-অর্জন।
চাই না দুনিয়ার কোনো সুখ-আহ্লাদ।
তবে দুুনিয়ার সন্তান যারা ওদের সে ফুরসত নেই;
আপন কাজকর্মে ওরা বেজায় মশগুল।সারাদিনের কাজগুলো ধীরে ধীরে গুছিয়ে আনছে। আছে বাড়ি ফেরার তাড়া। বাকি আছে আরো কিছু সদাইপাতি কেনা।
ওদের নেই ওসব সালাত-ইবাদাতের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ।
ওসবকে গোনার মধ্যেই ধরে না যেন; পার্শ্ববিষয়।…
এদিকে দূরে একটা বড়সড় বাদাম-গাছ। ছায়াও তার বেশ প্রসারিত। তার পাশেই ল্যাম্পপোস্টে মৃদু আলো জ্বলছে। তার নিচেই একটি কাঠের ব্যাঞ্চের ওপর আমি একলা পথিক ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে আনমনে বসে আছি। তাকিয়ে দেখছি নগর-জীবনের এ বৈচিত্র্যসব। দেখছি, পার্থিব জীবনের তরে বিভিন্ন শ্রেণীর নানান আয়োজনের এ রকমফের। এসবের আমি এক দর্শকই কেবল।
একলা বসে আনমনে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছি এই
শশব্যস্ত শহুরেদের অবস্হা,
কেউ খুঁজে ফিরছে তাঁর সন্তোষলাভের উপায়,
কেউ বা আবার দেদারসে তাঁর কঠিন শাস্তি করছে কামাই।
আর ভাবছি আমি, রব-প্রদত্ত এ ক্ষণস্জায়ী জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে আর গন্তব্য নিয়ে। জীবনপথের গন্তব্য ও দীর্ঘ এ সফরের মানযিল নিয়ে।…