ঝড়-বাদলের দিনে
~ ইমদাদ উল্লাহ ফিরদাউস
চারিদিকে ঘুটঘুটে আঁধার। নিকষকালো। কোথাও নেই একটুও আলো। আকাশজুড়ে বিরাজমান মেঘেদের একচ্ছত্র রাজ। ক্ষুধার্ত সিংহের মতো দেয়ার মৃদু গর্জন মনে ভীতির সঞ্চার করছে। চলছে তুমুল-ভারী বর্ষণ। ঝুম বৃষ্টির ঝুমুর-ঝুম সুরে মনে হচ্ছে, যেন ষোড়শী কোনো তনয়া নুপুর পায়ে নৃত্য করছে মনের সুখে, লাফিয়ে চলেছে পরমানন্দে। আসমানও ঠিক তেমনি মেতে উঠেছে তার নৃত্যতালে।
বইছে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া। দমকা বাতাসের ঝাপটায় গাছগুলোর ডালপালা আর পত্রপল্লব দুলছে তুমুলভাবে। সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা-উঁচু নারিকেল ও আ্যাকাশিয়া গাছগুলো পড়ি পড়ি করেও পড়ছে না। মুহূর্তকয়েক পরপর শোনা যায় সজোরে বাজ পড়ার বিকট শব্দ। ঘন্টাদুয়েক যাবৎ নেই বিদ্যুৎও। সাথে চমকাচ্ছে আলোকোজ্জ্বল বিজলি-রশ্মি। তার তড়িৎ আলোয় দিবালোকের ন্যায় আলোকিত হয়ে উঠছে চারিপাশ। যেন আকাশের ওপর থেকে কেউ একজন টর্চ হাতে বারংবার তা অন-অফ করে ভেলকি দেখাচ্ছে।
বৃষ্টির রিমঝিম ছন্দ চারপাশের পরিবেশকে করে তুলেছে হিমশীতল ও প্রাণময়। হৃদয় হয়ে উঠেছে সজীব ও প্রশান্তিময়। তবে এ অনুকূল পরিবেশ ও বৈরী আবহাওয়া অতটাও স্বস্তির নয়। পুকুর পুরে পানি বেয়ে চলে এসেছে উঠোনের দিকে।…
গাঁয়ের দীর্ঘ-সরু পথ ধরে ছাতা হাতে হেঁটে যাচ্ছে এক প্রৌঢ় চাচা, সাথে তার বাহুডোরে আগলে রাখা বালকবয়েসি এক কিশোর। মুষলধার বৃষ্টির দরুণ এই মেঠোপথ পরিণত হয়েছে কাদাময়-পিচ্ছিল ও চলন-দুঃসাধ্য এক ভয়ানক পথে। যেন কেউ তাতে ঢেলে দিয়েছে সাবান-ফেনা। আর পথচারীদের পদছাপ ওসবকে করে তুলেছে আরো ফেনিল। তার সাথে জুড়েছে ভীষণ আঁধার। সব মিলিয়ে পথ-চলাচল হয়ে পড়েছে বেশ দুরূহ।
রাস্তার ওপাশ থেকে ধীরগতির একটি মোটরযান এদিকটায় আসায় ক্ষীণ আলোর দেখা মিলল। সে আলোয় কিছুটা পথ দেখে নিল সেই পথচারী। তারপর সে ফের এগোতে শুরু করল।