মৃত্যুর পরোয়ানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ

মৃত্যুর পরোয়ানা কলমে আহমাদুল্লাহ আশরাফ

মৃত্যুর পরোয়ানা
আহমাদুল্লাহ আশরাফ

 

মৃত্যু এক নিশ্চিত বিষয়। যার স্বীকারক্তি ছোট বড়ো হিন্দু মুসলিম সবার মুখে ও মনে।কোন উপায়েই রেহাই নেই তা থেকে।কত মানুষ আগমণ করেছিল পৃথিবীর বুকে।একে একে সবাই-ই চলে গেছে পরপারে। নিয়ে যেতে পারেনি কেউ দুনিয়ার তুচ্ছ কিছুও।সামান্য খড়কুটোও দেওয়া হয়নি তাদের।রিক্তহস্তেই হয়েছিল জন্ম আবার রিক্তহস্তেই মৃত্যু।

মানুষ মানুষকে কত ভালোবাসে।খরচাদি, লালন-পালন থেকে শুরু করে নিজের জানটাও দিয়ে দিতে চায়।সামান্য প্রেম ভালোবাসার জন্যে। মায়ের জন্য সন্তান। সন্তানের জন্য বাবা।বন্ধুর জন্য বন্ধু। প্রতিবেশীর জন্য প্রতিবেশী। কী নিদারুণ আনন্দ কাজ করে তখন মনের গহিনে।জান দিতে পারলেই বুজি জীবনের সুখ।

কখনো ভেবেছি,এ প্রেম ভালোবাসা শুধুই ক্ষনস্থায়ী। যার অস্থায়ীত্ব দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। সামান্য স্বার্থের জন্য অস্বীকার করে বসে ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধন।কখনো টাকা পয়সার মতো তুচ্ছ জিনিসও ফাটল তৈরি করে দেয়।শত আপনকেও অপরিচিত বানিয়ে ফেলে দুদণ্ড সময়ে।তল্লাটকে তল্লাটে বেঁধে যায় খুনখারাবি অন্যায় অবিচার।

অথচ;সকল আপনের বড় আপন মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা। যিনি সৃষ্টি না করলে আমাদের অস্তিত্বে আসা হতো না।হতো না দেখা পৃথিবীর সবুজ শ্যামল মনোরম দৃশ্য। নদীনালা গাছপালা ও পাখিদের গুঞ্জরন। কিছুই শোনা হতো না।অতথ;তাকে নিয়ে আমাদের কোন ফিকির নেই।মৃত্যুর দিকে প্রতিনিয়ত ধাপিত হচ্ছি। এখনো চেনা হলো না সেই স্রষ্টাকে।সেই মহা মহীয়ান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লাকে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ব্যাতিত কারো জানা নেই কার কখন মৃত্যু এসে যায়।চলে যেতে হয় অন্ধকার কবরে।এরশাদ হয়েছে—কুল্লু নাফসিন যাইকাতুল মাউত।অর্থাৎ:—প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করিতে হবে।সূরা আলি ইমরান—১৮৫
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে—আয়নামা তাকুনু ইউদরিক্কুমুল মাউতু ওয়ালাউ কুনতুম ফিবুরূজিম মুশায়্যাদাহ।অর্থাৎ:—তোমরা যেখানেই থাকোনা কেন মৃত্যু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদিও থাকো তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের মাঝে।সূরা নিসা—৭৮

কতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছি মৃত্যুর জন্য! কী করেছি আখিরাতের লক্ষ্যে। রবকে সন্তুষ্ট করার জন্য কতবার বর্ষণ করেছি নোনা অশ্রু।রীতিমতোই মসজিদের মাইকে ঘোষণা হচ্ছে ফুলান ইবনে ফুলান ইনতিকাল করেছেন সকাল বা বিকেলে।সামান্য জন্যও এই পাষাণ হৃদয়টা নরম হয় না।যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার ভয়ে পাথরও থর্ থর্ করে কাঁপে।অচথ;এই লক্ষ্যেই কি তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন!

আরো পড়ুনঃ  মন্তব্যের টুকরো পাথর

হঠাৎ যদি চলে আসে মৃত্যুর ডাক।বন্ধ হয়ে যায় নিঃশ্বাস। ছেড়ে যেতে হয় দুনিয়ার মায়াবী রূপ। তখন যদি থাকি গুনাহে রত কিন্বা অন্যায় কাজে লিপ্ত। যদি উড়ে যায় ইমান নামক পখিটা।কী হবে আমার! তখন কি উচ্চারণ করতে পারবো তাওহীদের কালিমা—লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ! এসবই অজানা।তবে কী করে করছি এতো নাচগান আমোদফূর্তি।বেহায়াপনার পিছনে ছুটে শেষ করে দিচ্ছি জীবন।নারী মদ সুদ ও জুয়ার মাধ্যমে উপার্জন করছি হারাম সম্পদ।যেখানে হালালের মাঝেই রয়েছে সুখ-শান্তি।মনের তৃপ্তি। হতাশা নিরাশার লেশমাত্রও নেই যে পথে।সে পথে চলার চেষ্টা কখনো করেছি?তবে; কী করে করি বলো জান্নাতের কামনা।

মৃত্যুর ফেরেশতা যখন আসিবে পরোয়ানা নিয়ে। জীবিত নাম কেটে মৃত্যুর নাম রাখবে।লোকেরা তখন নাম বদলে ডাকবে আমায় লাশ বলে। রাশি রাশি সম্পদ, সবই পড়ে রবে।আপন সন্তানরাও আমায় রাখতে চাইবে না এক মুহুর্ত।কয়েক ঘন্টার মাঝেই গোসল দিয়ে, কাফন পরিয়ে শুইয়ে দিবে অন্ধকার কবরে।যেখানে বাতি নেই।সাথী নেই।পোকামাকড়ের ঘর।একাকীত্বের জীবন।চোখ থাকতেও তখন আমি অন্ধ হয়ে যাবো।মুনকার নকীর সোয়াল করিবে আমায়।পারিলে জান্নাত।না-পারিলে জাহান্নাম। কী ভয়াবহ পরিস্থিতি।

 

প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে:

  • প্রতিনিয়ত স্মরণ করুন মৃত্যুকে।
  • সকাল বিকেল কবরস্থানে গিয়ে ভাবুন মৃত্যুর কথা।
  • আল্লাহর বাতলিয়ে দেওয়া বিধানাবলি মেনে চলুন।
  • নিম্রশ্রেণির ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুন বলে যে,আল্লাহ আমাকে কত ভালো রেখেছেন। ওর মতোও তো বানাতে পারতেন।
  • গরিব দুঃখীদের পাশে দাঁড়ান,তাদের উপকার করুন।
  • প্রতি মুহুর্তেই উত্তম মৃত্যুর ফরিয়াদ করুন মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার নিকট।

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।মৃত্যুর পূর্বেই মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

~ ত্রিশাল ময়মনসিংহ
শিক্ষার্থী:যাদুরচর মাদ্রাসা।
হেমায়েতপুর,সাভার, ঢাকা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *