বই: কুহক কুতূহল বইয়ের রিভিউ রিভিউ: শাহানা চৈতি

কুহক কুতূহল বইয়ের রিভিউ

কুহক কুতূহল বইয়ের রিভিউ

 

কুহক কুতূহল বইয়ের রিভিউ
কুহক কুতূহল বইয়ের ছবি

 

পারিবারিক প্রসঙ্গ

বইটা পড়তে গিয়ে বারবার একজনের চেহারা ভাসছে।যিনি দূরসম্পর্কের মামা , শুনেছি তিনি এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তবে তার এই পদমর্যাদায় তেমন কোনো লাভ নেই, তিনি কেবল খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকেন। তার এই পরিস্থিতিকে অনেকে বিদ্রুপ করলেও তিনি গর্বের সঙ্গে বেঁচে আছেন। তার জীবন দর্শন মাঝে মাঝে ভাবায়—আসলেই সম্পদ মানে কী? অর্থ, নাকি আত্মমর্যাদা? ঠিক এই ভাবনাগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে বইটির কাহিনিতে, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের বাস্তব জীবন চিত্র ফুটে উঠেছে।

 

উপন্যাসের মূল ভাবনা

গল্পের মূল সুর বাস্তব জীবনের নানান পরিবারের বৈচিত্র্যময় অবস্থার প্রতিচিত্র তুলে ধরা। এখানে এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জীবন থেকে শুরু করে বস্তির ছেলের সংগ্রাম, মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ, আদর্শবাদী চরিত্রের দ্বন্দ্ব এবং সুবিধাবাদীদের অবস্থান—সবকিছুই একসূত্রে গাঁথা হয়েছে।

 

 

সারসংক্ষেপ

বস্তির ছেলে কবির সারাদিন কাগজ কুড়িয়েও ঠিকমতো খেতে পারে না। ক্ষুধার কষ্ট সে জানে, কিন্তু আত্মসম্মান হারিয়ে ভিক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। শেষমেশ বুলবুলের মায়ের অনুরোধে সোমাদের বাড়িতে কাজ নেয়, তবে আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়েই সেখান থেকে বেরিয়ে আসে, সঙ্গে নিয়ে চলে ক্ষুধা। একসময় সে কবির শেঠ হয়ে ওঠে, তখন তার জীবনে নতুন এক ক্ষুধার জন্ম হয়—কিন্তু এই ক্ষুধার শেষ কোথায়, সে নিজেও জানে না।

 

সোমার বাবা ছিলেন একজন সৎ মানুষ, যিনি কখনো ঘুষ গ্রহণ করেননি। কিন্তু দাদার চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে বাধ্য হয়ে আপস করতে হয়। সোমার ফুফাতো ভাই আসাদ যুক্তিবাদী, সবকিছুর ব্যাখ্যা দিতে চায়, তবে ভালোবাসা ও মৃত্যুর বিষয় সে ব্যাখ্যা করতে পারে না। অন্যদিকে, শরিফ তার দাদার মৃত্যুর দিনেই মিতুকে বিয়ে করে, তবে মিতুর চোখে এই পরিবারটি যথেষ্ট ভালো।

 

ইমন সোমার প্রেমিক, যার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হলেও পরবর্তীতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বাবার এই নৈতিক স্খলন ইমন মেনে নিতে পারে না এবং তাকে ঘৃণা করে।

আরো পড়ুনঃ  কবি ও লেখক রুহুল কাদেরের প্রকাশিত বই

 

 

পাঠ্য প্রতিক্রিয়া

হুমায়ূন আহমেদের বই বেশি পড়ার কারণে আসাদ চরিত্রটিকে খানিকটা মিসির আলি ও হিমুর সংমিশ্রণ বলে মনে হয়েছে। সামাজিক উপন্যাস হিসেবে গল্পের প্রবাহ ভালো ছিল, তবে ইমনের বাবার দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো চরিত্র থাকলে উপন্যাসটি আরও সমৃদ্ধ হতো।

 

 

ব্যক্তিগত মতামত

উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে কিছু জায়গায় অসুবিধা হয়েছে। এক চরিত্রের আলোচনা শেষ না হতেই নতুন চরিত্রের সংযোজন হওয়ায় বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে।সংলাপ বিশ্লেষণ আরেকটু সুসংগঠিত হলে পাঠের অভিজ্ঞতা আরো উন্নত হতে পারত।সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, লেখক ধ্রুপদ যখন মাত্র ক্লাস সিক্সে পড়ছিল, তখনই এই বইটি লেখা! সেই বয়সের তুলনায় লেখার মান চমৎকার, যা সত্যিই বিস্ময়কর। গল্পের বুনন, চরিত্র চিত্রণ এবং কাহিনির গভীরতা এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, পড়তে পড়তে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি।

 

১০১ নম্বর পৃষ্ঠায় সোমা ও মিতার সংলাপে কিছু ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে। নামের ত্রুটির কারণে পাঠে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তবে বিরামচিহ্ন ব্যবহারে কোনো অসংগতি চোখে পড়েনি, যা বেশ প্রশংসনীয়। ভোরের শিশির প্রকাশনীর বইয়ের বাইন্ডিংও বরাবরই দারুণ।বাইন্ডিং হিসেবে ১০/১০।

 

 

বই: কুহুক কুতূহল

লেখক: ধ্রুপদ

ঘরানা: সামাজিক উপন্যাস 

প্রকাশনী: ভোরের শিশির 

মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০ টাকা

পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৭৬

রিভিউয়ার: চৈতি শাহানা

1 thought on “কুহক কুতূহল বইয়ের রিভিউ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *