মেহুলের শেষ চিঠি

মেহুলের শেষ চিঠি
কলমে রওনক জাহান বৈশাখী

 

প্রিয় আমি,
আমার আমিটা না! নিজের ভীষণ প্রিয় ছিলাম। বারবার আয়না দেখতাম, নাচতাম গাইতাম আরো কত কি… বছর কয়েক আগে ও না আমি কি সুখী মানুষ ছিলাম সবকিছু এত তাড়াতাড়ি বদলে না গেলে ও হতো। নিজের সাথে এখন আর মানিয়ে নিতে পারিনা। কেন দীর্ঘশ্বাস গুলো এত বুকভারি হয়? আমারও কাউকে জরিয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে হয়, কেন তোমরা আমাকে ভালোবাসলে না? কেনই বা কি এমন ক্ষতি হতো! এত ব্যস্ততা কেন তোমাদের?

সবার তো প্রিয় বলতে কিছু থাকে আমার এক আমি ছাড়া আর কি বা আছে। কোথাও শুনেছিলাম ‘আমার কাউকে ছাড়া লাগে না, সবাই আমাকে ছেড়ে যায়’ আমার ও ঠিক তেমন। মায়েরা তো সন্তান অসুস্থ নাকি মন খারাপ সব বুঝে, কই আমার মা তো কিছুই বুঝলো না। কত বলেছি মা দেখো তো জ্বর আছে নাকি , মা আমার না মাথা ব্যথা করছে। প্রতি উত্তরে কি পেয়েছিলাম জানো! ‘মাথা থাকলেই তো ব্যাথা করবে’ এত অসুস্থ অসুস্থ করো না তো। টাকা দিচ্ছি ডাক্তার দেখিয়ে নাও। এখন ব্যস্ত আছি যাও। আর বাবা তার কথা তো বাদই দিলাম, সে তো মহাব্যস্ত। তোমাদের না কখনো সময় হলো না আমার জন্য। আচ্ছা আমি না থাকলে কি ও একই রকম ব্যস্ততা থাকবে একটু ও কি অনুশোচনা হবে না?

মেয়ে তুমি কি জানো আগে কত রাগ অধৈর্য ছিলে! যেই আমি টা না একটু নখের আঁচড় লাগলে কেঁদে কি অবস্থা করতাম আর এখন তীব্র জ্বর মাথাব্যথা নিয়ে নিশ্চুপ শুয়ে থাকি। এখন আর হুটহাট রেস্টুরেন্টে খেতে মন চায় না, বেঁচে থাকার তাগিদে কিছু হলেই চলে। ঔষধ তো নিত্যদিনের সঙ্গী।

কিছু দিন আগে নিজের টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার তো কিছুতেই আমার কাছে রিপোর্ট দিবে না যদিও পরে দিয়েছে। আমার মাত্র ১৩ দিন সময় আছে। যাক ভালোই হলো সিলিংয়ে ঝোলার মতো কাজ তো করা লাগবে না আবার “মেহুল” নামক বোঝা ও মুক্তি পাবে। পৃথিবীটা যে বড্ড স্বার্থপর। এই সার্থপর পৃথিবীতে রেখে গেলাম আমার কিছু অপূর্ণ স্বপ্ন। আমি ও বাঁচতে চেয়েছিলাম একজন সাধারণ মানুষ হয়ে , তা আর হলো কই!

আরো পড়ুনঃ  বউয়ের কাছে ভালোবাসার চিঠি ২০২৪

ইতি আমিই

 

চিঠিটার উপর গড়িয়ে পড়ল দুফোঁটা জল জাহানারা বেগমের হাত এখন ও কাঁপতেছে । নিজেদের ব্যস্ততার জন্য মেয়েটার দিকে খেয়াল দিতে পারেনি । যার অপরাধবোধে ভুগছেন এখন। যদি না টাকার পিছনে না ছুটতেন তাহলে এটা না ও হতে পারতো। ঐ যে কথায় আছে না, “মানুষ থাকতে মূল্য দেয় না” এখানে ঠিক তেমন।

আরো চিঠি পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *