আদরের বাবা আমার | ১ম পর্ব | লেখক আহমাদুল্লাহ আশরাফ

আদরের বাবা আমার | ১ম পর্ব | লেখক আহমাদুল্লাহ আশরাফ

আদরের বাবা আমার
আহমাদুল্লাহ আশরাফ

চল দোস্ত!
একটু কবরস্থানের দিকে যাই।এই পড়ন্ত বিকেলে বাবাকে খুব মনে পড়ছে।বাবার স্মৃতিগুলো একে একে ভেসে ওঠছে চোখের সামনে। একবার শাসন আরেকবার জীবনের আদর দিয়ে বাবা আমায় খুশি করতেন।কোথাও গেলে আমায় আঙ্গুল ধরে নিয়ে যেতেন।মজা কিনে দিতেন।বাসায় এসে আমরা দু’ভাইবোন পাড়া পাড়ি করে খেতাম।

সেই দিনগুলো আজ হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে গেছে বাবার সেই আদর।খোকা বলে ডাক দেওয়ার মতো মানুষ আর নেই।নেই সেইরকম চেহারার কোন মানুষও।বিধাতার কী আজব সৃষ্টি। কারো চেহারার সাথে কারো চেহারাই মিলে না।সবারই চালচলন ভিন্ন রকমের।

রাশেদ বলল;
;চল তাহলে রবিন।আচ্ছা, বলতো তোর বাবা ইনতিকাল করেছেন কত বছর হলো?
রবিন একটু চুপ থেকে মনে মনে হিসেব করে নিলো।

:—পাঁচ বছর হলো।২০১৯সালে তিনি ইনতিকাল করেছেন।
;কিভাবে? কী হয়েছিল?
:আর বলিস না!রোড এক্সিডেন্টে।
;রবিন,দুঃখ করিস না।তোর বাবা সুখে থাকবেন আশাকরি। কারণ;হাদিসে আছে—এক্সিডেন্টে বা হঠাৎ কোন বিপদে পড়ে যারা ইনতিকাল করেন,তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করেন।
:বন্ধু রাশেদ,তুই বেশি বেশি দোয়া করিস আমার বাবার জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমার বাবাকে মাফ করে দেন।
;আমীন।

রবিনদের বাসার উত্তরপাশে কবরস্থান।
বাঁশঝাড়, গাছগাছালিতে কবরস্থানের চারপাশ ঘেরাও করা।নিবির নিস্তব্ধ এক জায়গায় শুয়ে আছেন রবিনের বাবা।দুনিয়ার এতো মায়া মোহাব্বত ধন সম্পদ সবই ছেড়ে তিনি আজ একাকী।

রবিন আর রাশেদ দুই বন্ধু কবরস্থানে এসে।
সালাম দিলো—
“আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর”
রাশেদ বলল—
রবিন বন্ধু, তুই হাত তুল।তোর বাবার জন্য তুই দোয়া করলে তাড়াতাড়ি কবুল করবেন আল্লাহ।

রবিন নিস্তব্ধ। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবার কবরটার দিকে।গন্ডগোল বেয়ে পড়ছে নোনা অশ্রু। শিশু বাচ্চার মতোন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে সে।আসলে বাবা সন্তানের সম্পর্ক ভিন্ন রকম সম্পর্ক।যে সম্পর্কের কোন তুলনা হয় না।

:হুমম। রাশেদ। দরূদ শরীফ পড়্।আর শোন মন খুলে বাবার জন্য দোয়া করবি।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমার বাবাকে মাফ করে দেন।

আরো পড়ুনঃ  অন্যরকম তুমি কলমে জান্নাতুল ফেরদৌস তারিন, পর্ব ০১

;হুমম। অবশ্যই।তুই হাত তুল্!

ঐদিকে বাড়িতে ছোট বোন বৃষ্টি। ভাইয়ের জন্য বড়ই পেরেশান।মাকে বলছে—
আম্মু,
রবিন ভাইয়া কোথায়?
সূর্য ডুবে গিয়ে অন্ধকারে পৃথিবী ঢেকে যাচ্ছে। পাখপাখালিরা চলে গেছে আপন নীড়ে।শিশু কিশোররাও খেলাধুলা থামিয়ে বাড়ির পথে চলে গেছে।
আম্মু,
ভাইয়া তো প্রতিদিনই মাগরিবের আগেই বাসায় উপস্থিত থাকেন। আজ কেনো এলো না মা,

মা হামিদা চিন্তায় পড়ে গেলেন। কোন জবাব দিলেন না বৃষ্টির কথার।ভাবলেন—ঠিকই তো রবিন প্রতিদিন এ সময় বাসায় থাকে। আজ কেনো এলো না? মা পেরেশান। কী থেকে কী করবেন বুঝতে পারছেন না।কারণ;রবিন ভীতুর ডিম।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই তার মনে ভয় কাজ করছে বেশি। এটা মা হামিদা ও বোন বৃষ্টি ভালো করেই জানে।

মা হামিদা বেগম ভিতর থেকে দরজার কাছে দাঁড়ালেন। কেউ গেলে তাকে রবিন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে।কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন রাস্তার দিকে। অবশেষে একজন আসলো।তিনি হলেন—পাশের বাড়ির লিটন মিয়া।

হামিদা বেগম ডাক দিয়ে বললেন—
ভাইজান, আমার ছেলে রবিনকে দেখলেন?এখনো বাসায় ফিরলো না। কোনো জায়গায় দেখেছেন?
লিটন মিয়া:—
জ্বী। দেখেছি। রবিন আর রাশেদকে দেখলাম ওরা কবরস্থান থেকে মসজিদের দিকে যাচ্ছে।

হামিদা বেগম এবার স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন।স্বামীর মতো যদি একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ফেলেন। তবে কাকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখবেন।এতো এতো সম্পদ কার জন্য জমা করলেন। তবে যে তার দুঃখের সীমা থাকবে না। তাছাড়া একজন মায়ের সন্তানকে নিয়ে যে আশা ভরসা তা কেবল মায়েরাই বুঝেন।

────চলবে ইনশাআল্লাহ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *