ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ পদ্ধতি
বখতিয়ার উদ্দিন
ইসলামী ব্যাংকগুলো ক্রয় বিক্রয় পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে থাকে।ইসলামী ব্যাংকের মূল কথা হলো, ঋণ বা সুদ নয়, আসুন বিনিয়োগ বা ব্যবসা করি।
সুদ হারাম আর ব্যবসা হালাল।এই নীতিতে শরীয়াহ মতে বাংলাদেশে ১৯৮৩ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকিং কায্যক্রম চালু হয়েছে ।গ্রাহক তাদের আর্জিত টাকা ঘরে অলস বসে না রেখে ব্যাংকে মুদারাবা আর আল ওয়াদা পদ্ধতি জমা রাখে।এই পদ্ধতিতে অনেক ধরণের প্রকল্প রয়েছে। যেমন,মাসিক কিস্তি,হজ্ব,মোহর,কৃষি, ইন্ডাস্ট্রি, স্টুডেন্ট, মাসিক পেনশন,স্থায়ী জমা ইত্যাদি পদ্ধতিতে ইসলামী ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ করে।
ঘরে অপ্রোজনীয় টাকা রাখলে যেকোনো সময়ে চুরি – ডাকাতি বা পোকা খেয়ে ফেলার শংকা থাকে।তাই টাকা ব্যাংকে রাখলে নিরাপদ।সঞ্চয় করার ইচ্ছে থাকলে আরো সঞ্চয় করার মনমানসিকতা তৈরি হয়।সেই অনুযায়ী জীবনকে কাজে লাগিয়ে ভালো উপর্জনও করা যায়।গ্রাহকের যখন ইচ্ছে সঞ্চয়কৃত টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারে।
ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের টাকা অলস বসিয়ে না রেখে আরেক পক্ষকে বিনিয়োগ দেয়।বিনিয়োগ গ্রাহক সেই অর্থ ব্যবসায় লাগিয়ে মুনাফা অর্জন করে তার নিদিষ্ট অংশ ব্যাংকে প্রদান করে।ব্যাংক সেই লাভের অংশ প্রয়োজনীয় খরচ বহন করে বাকি টাকা আমানতকারীদের নিকট প্রদান করে।
সুদের কারণে অর্থনীতির বাজার দিন দিন মন্দার মুখে পতিত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন।তাই প্রচলিত সুদ ভিত্তিক লেনদেন পরিহার করে দিন দিন মানুষ ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতিতে দাবিত হচ্ছে। নিজদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মধ্যে দিয়ে নিজেরা উপকরিত হচ্ছে তেমনি অনেক বেকার ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ নিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন।
জীবনে চলতে গেলে অর্থের দরকার। অর্থ ছাড়া জীবন অচল।একটি দেশে অনেকের অর্থ আছে আবার অনেকের অর্থ নেই। এই ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা থেকে সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় গতিশীল করার জন্য দেশে ব্যাংকের দরকার।ইসলামী ব্যাংক হালাল উপায়ে অর্থকে রুলিন করে।এতে যাদের মেধা ও শ্রম দেওয়ার শক্তি আছে কিন্তু অর্থ নেই তারা ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ নিয়ে ব্যবসা করতে পারে।
ব্যাংক দেশের জনগণের টাকা আমানত হিসাবে এই শর্তে রাখে যে, আমানতের অর্থ অন্য পক্ষকে ব্যবসা করার জন্য বিনিয়োগ করবে। সেই বিনিয়োগ থেকে নিদিষ্ট একটি লাভ ব্যাংক গ্রহণ করে। সেই লাভের
অর্থ থেকে একটি অংশ গ্রাহকদের বিতরণ করা হয়।
ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকের কাছে শরীয়াহ সম্মত ভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে থাকে। সেই বিনিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ইসলামী ব্যাংকগুলো সাধারণত আটটি পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে থাকে।
তা হলো:-
১.মুদারাবা Mudaraba ( অর্থ যোগান দেয় আমানতকারী আর সেই অর্থ ব্যবসায়ী নিয়ে ব্যবসা করে)
২.বাই মুরাবাহা Bai – Murabaha : ( Sale on agreed profit) লাভের আশায় মাল বিক্রি করে।
৩.বাই মুয়াজ্জাল Bai – Muajjal ( Sale on Credit) লাভের আশায় বাকিতে মাল বিক্রি।
৪.বাই সালাম Bai – Salam ( Advanced payment)অগ্রিম মাল ক্রয়।
৫.মুশারাকা Musharaka (Partnership)
৬.বাই ইস্তিসিনা Bai Istisana’s ( price is paid in advance at the time of the contract and the object of sale is manufactured and delivered later) কোন কিছু তৈরি করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে অর্থ যোগান দেয়।
৭.বাই আশ সারাফ Bai as Sarf ( Baying and selling currency)ভিন্ন জাতের মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়
৮. HPSM (Higher purchase under shirkatul Milk)ভাড়া পদ্ধতি বা অংশীদারিত্বমূলক পদ্ধতি
আমরা এবার ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ পদ্ধতি গুলো সংক্ষেপে বিস্তারিত জেনে নিতে পারি।
১.মুদারাবা Mudaraba:- ( অর্থ যোগান দেয় আমানতকারী আর সেই অর্থ ব্যবসায়ী নিয়ে ব্যবসা করে)।বিনিয়োগে মুদারাবা হচ্ছে পুঁজির মালিক ও উদ্যোক্তার সমন্বয়ে গঠিত এক ধরনের বিনিয়োগ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দুটি পক্ষ থাকে। এক পক্ষ পুঁজি সরবরাহ করে এবং অপর পক্ষ মেধা, যোগ্যতা ও শ্রম দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। এতে ব্যাংক সাহেব আল মাল হিসাবে মূলধন যোগান দেয় আর গ্রাহক মুদারিব হিসাবে ব্যবসা পরিচালনা করে।
২.বাই মুরাবাহা Bai – Murabaha :- ( Sale on agreed profit) লাভের আশায় মাল বিক্রি করে। বাই মুরাবাহা এমন একটি বিনিয়োগ চুক্তি, যার অধীনে ব্যাংক গ্রাহকের অনুরোধে নিদিষ্ট মাল ক্রয় করে ক্রয়মূল্যের সাথে নিদিষ্ট লাভ যোগ করে তা সেই গ্রাহকের কাছে বিক্রয় করে।গ্রাহক চুক্তির শর্তানুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করে মাল নিতে বাধ্য থাকেন।
বাই মুরাবাহা চুক্তিতে তিনটি পক্ষ থাকে।ব্যাংক,বিক্রিতা(যার কাছ থেকে ব্যাংক মাল ক্রয় করে),গ্রাহক(যার কাছে ব্যাংক মাল বিক্রি করে)।
পণ্যের নীট মূল্যের সাথে লাভ যোগ করে বিক্রি করা হয়।ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে সহায়ক আমনত নিয়ে পণ্য বিক্রি করে।
৩.বাই – মুয়াজ্জাল Bai – Muajjal ( Sale on Credit):- লাভের আশায় বাকিতে মাল বিক্রি করে।বাই- মুয়াজ্জাল এমন একটি বিনিয়োগ পদ্ধতি যেখানে ব্যাংক মুনাফা অর্জনের জন্য গ্রাহকের নিকট বাকিতে মাল বিক্রি করে। এখানে ব্যাংক মাল ক্রয় করে নিজের অধীনে রাখে নির্ধারিত মূল্যে গ্রাহকের কাছে বাকিতে মাল বিক্রি করে। সাধারণত কৃষি, শিল্প, ভোগ্য পণ্য ক্রয় করে গ্রাহকের কাছে বাকিতে বিক্রি করে আর গ্রাহক নিদিষ্ট সময়ে মূল্য পরিশোধ করে মালিকানা নিশ্চিত করে।এতে ব্যাংক মালের প্রকৃত মূল্য গোপন রাখতে পারে।
৪.বাই সালাম Bai – Salam:- ( Advanced payment)অগ্রিম মাল ক্রয়।এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ব্যাংক গ্রাহকের নিকট আগাম মাল ক্রয় করে।এতে ব্যাংক ক্রেতা আর গ্রাহক বিক্রেতা।এই পদ্ধতি ব্যাংক সাধারণত কৃষি শিল্প পণ্য আগাম ক্রয় করে।ব্যাংক এবং গ্রাহকের সম্মতিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হয়।চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নিদিষ্ট সময়ে গ্রাহক ব্যাংকের নিকট মাল সরবরাহ করে। গ্রাহক ব্যাংকের নিকট পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে আগাম নেওয়া দাম ফেরত দিবেন।
৫.মুশারাকা Musharaka (Partnership) :-মুশারাকা বলতে এমন একটি অংশীদার কারবারকে বুঝায়,যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কারবার পরিচালনা করে লাভ ক্ষতিতে অংশগ্রহণ করে। কারবারে লাভ হলে অংশীদারগণ পূর্ব নির্ধারিত হারে ভাগ করে নেন কিন্তু ক্ষতি হলে নিজ নিজ পুঁজির হারে বহন করে।
গ্রাহক এবং ব্যাংক উভয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারে। উভয়ের পুঁজি সমান বা কম-বেশি হতে পারে। সকল অংশীদারগণ কারবার পরিচালনা করতে পারে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গ্রাহক এবং ব্যাংকের মধ্যে মুনাফা বন্টন করে।
৬.বাই ইস্তিসিনা Bai Istisana’s 🙁 price is paid in advance at the time of the contract and the object of sale is manufactured and delivered later) কোন কিছু তৈরি করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে অর্থ যোগান দেয়। এটি মূলত হলো ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে একটি চুক্তি। এই পদ্ধতিতে ক্রেতার নির্দেশে বিক্রেতা কোন বস্তু তৈরি করে তা নিদিষ্ট দামে নিদিষ্ট সময়ে সরবরাহ করার অঙ্গিকার করেন।এই পদ্ধতিতে পণ্যের স্পষ্ট ও সু নিদিষ্ট বিবরণ থাকতে হবে। চুক্তিতে সম্মত দাম উল্লেখ করতে হবে। পণ্য কখন,কোথায়, কার খরচে সরবরাহ করবে তার বিবরণ থাকতে হবে।চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর আংশিক বা সম্পূর্ণ পরিশোধ হওয়ার পর কোন পক্ষ একক ভাবে চুক্তি বাতিল করতে পারে না। কোন পক্ষ চুক্তিভঙ্গ করলে অপর পক্ষ ক্ষতিপূরণ আরোপ করতে পারবে।
৭.বাই আশ সারাফ Bai as Sarf ( Baying and selling currency) ভিন্ন জাতের মুদ্রা ক্রয় – বিক্রয়:-বাই আশ – সারাফ আরবি শব্দ। বাই অর্থ ক্রয় – বিক্রয়। আশ – সারাফ অর্থ মুদ্রা ক্রয় বিক্রি করা।এতে এক দেশের মুদ্রা অন্য দেশে ক্রয় – বিক্রয় করা যায়। ইসলামী শরীয়তে এক ধরণের মুদ্রার পরিবর্তে অন্য ধরণের মুদ্রা ক্রয়- বিক্রয় জায়েজ।
এই পরিবর্তন গ্রাহক ব্যাংকের মাধ্যমে করতে পারবেন।
বাই আশ সারাফ Foreign Documentary Bill ( FDB) এর ক্ষেত্রে গ্রাহক এবং ব্যাংকের সাথে প্রত্যেকটি বিলের জন্য আলাদা আলাদাভাবে একটি চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।এখানে গ্রাহক প্রথম পক্ষ হিসাবে আখ্যায়িত হবে এবং ব্যাংক দ্বিতীয় পক্ষ হিসাবে আখ্যায়িত হবে।
গ্রাহক ব্যাংকের নিকট তার নিদিষ্ট Export L/C এর বিপরীতে নিদিষ্ট বৈদেশিক মুদ্রামানের Export Document উপস্থাপন করে তার প্রয়োজন পূরণের নিমিত্তে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়ের জন্য আবেদন করে থাকে।আর ব্যাংক তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করে।
৮. HPSM (Higher purchase under shirkatul Milk) অংশীদারিত্বমূলক পদ্ধতি বা ভাড়া পদ্ধতি :-এই পদ্ধতিতে ব্যাংক ও গ্রাহক কোন সম্পদের মালিকানা যৌথভাবে অর্জন করে। সম্পদের একাংশের মালিক হন গ্রাহক আর অবশিষ্ট অংশের মালিক হন ব্যাংক।সংশ্লিষ্ট সম্পদে ব্যাংক যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে সে পরিমাণ সম্পদের মালিক ব্যাংক।এরপর ব্যাংক তার মালিকানাধীন অংশটুকু গ্রাহকের কাছে ভাড়া দেওয়ার এবং কিস্তিতে বিক্রি করার চুক্তি করে।শরীয়াহর দৃষ্টিতে ভাড়াটিয়ার কাছে সংশ্লিষ্ট সম্পদ বিক্রি করার কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বিক্রি এককালীন বা কিস্তিতে হলেও কোন অসুবিধা নেই। ইসলামী ব্যাংক গাড়ি, বাড়ি,জাহাজ,শিল্পকারখানা খাতে এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে থাকে।এতে সম্পদ ভাড়ার উপযোগী না হওয়ার আগ পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হয় না।
ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের এই সব পদ্ধতিতে বৈধ – অবৈধ হওয়ার অনেক নিয়ম কানুন রয়েছে। কোন কারণে শরীয়াহ লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা খিয়াল রাখতে হবে।তবে সংক্ষেপে এতো টুকু জানলে ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা কিভাবে হয় তা আমরা জানতে পারি।তবে অনেক গ্রাহক ব্যবসা করার শর্তে বিনিয়োগ নিয়ে ভিন্ন খাতে ব্যায় করে ইসলামী ব্যাংকিং এর সাথে প্রতারণা করে।
অর্থ থাকলে জীবনে অনেক কিছু করা যায়। মনে শক্তি থাকে,জীবনে চলার সাহস থাকে।সহজে যেকোন বিপদ দূর করা যায়।তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে অর্থের একটি শক্তি গঠন করতে পারলে মনে সাহস থাকে।যেকোন সময় অর্থ ব্যবহার করে বিপদ দূর করা যায়। আর সময় ও শ্রম ব্যবহার করে অর্থকে যথাযথ ব্যবহার বা ব্যবসা করে দারিদ্র্যতা বা অর্থনৈতিক লাভবান হয়ে পারিবারিক, সামাজিক,রাষ্ট্রীয় জীবনে উন্নায়ন ঘটানো যায়।
ব্যাংকে ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকে দিন দিন বিশাল অর্থে বা মূলধনে পরিণত হয়। এই অর্থ বিভিন্ন প্রয়োজনে গ্রাহকেরা ঋণ বা বিনিয়োগ হিসাবে গ্রহণ করে অনেক উপকারিত হয়।দেশের বড় বড় শিল্পকারখানা ব্যাংকের টাকা দিয়ে পরিচালিত হয়।দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করার জন্য ব্যাংকের টাকা দিয়ে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করে দেশে খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করে। মূলত দেশের সাধারণ মানুষের টাকা সুন্দর ভাবে রুলিন করে সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে।
ঋণের চাহিদার কারণে ইসলামী শরীয়াহ বা সুদমুক্ত পরিবেশের জন্য ইসলামী ব্যাংক কোরান,সুন্নাহ, ইসমাহ,কিয়াস ভিত্তিতে শরীয়াহ বোর্ড কিছু নিয়ম কানুন বেঁধে দিয়ে ইসলামী ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে।বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিং সফলতার জন্য আরো নতুন নতুন নিয়ম উদ্বোধন হচ্ছে।সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক পিলসি বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিনিয়োগ স্কিম -স্বপ্নযাত্রা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিনিয়োগ স্কিম নামে আরো দুইটি বিনিয়োগ পদ্ধতি চালু করেছে।
মূলত ঋণ নয়, বিনিয়োগ হলো ইসলামী শরীয়াহর মূলমন্ত্র।ঋণ হলো, যে বিপদে আছে তাকে আরো বিপদে ঠেলে দেওয়া। অসহায়ের উপর বোঝা তুলে দেওয়া। ঋণ দিয়ে অতিরিক্ত এক টাকা নেওয়া সুদ।সুদ হারাম।আর কঠিন পাপ।ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে আর সুদকে করা হয়েছে হারাম।
ঋণ দিয়ে এক টাকা, তিন হাজার টাকা বা পাঁচ শত টাকা অতিরিক্ত নেওয়া সুদ বা হারাম।
এতো সুদ খেয়ে টাকা জমানো কি লাভ!বর্তমান বাজারে যে জিনিস ১০ টাকা তা তিন বছর পর ৩০ টাকা হচ্ছে।এই সব দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি সুদের কারণে হচ্ছে। তবে ঋণের পরিবর্তে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। বিনিয়োগ করে উভয় পক্ষ লাভের চেষ্টা করবে।মাল ক্রয় বিক্রয় করবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে টাকা দিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া সুদ।আর বিনিয়োগ করে মালামাল বা জিনিসপত্র ক্রয় করে দিয়ে তা বিক্রি করলে ব্যবসা।আমরা সবাই সুদ থেকে দূরে থেকে ব্যবসা করতে পারি।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে প্রচুর আমানত হয়েছে।অর্থগুলো অলস বসে থাকা ইসলামে সমর্থন করে না।তাই আমরা নানান প্রয়োজনে বিনিয়োগ নিয়ে লাভবান বা জীবনকে গতিশীল করতে পারি।আমরা চাইলে ব্যাংকে লেনদেন করে সমাজে সচেতন ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারি। চাইলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে ব্যক্তি জীবন, পরিবার, সমাজকে সাজাতে পারি।জীবনকে সহজ করতে পারি। ধর্মীয় রীতিনীতি অনুশীলন করতে পারি।সবার মেধা আর সময় আছে। তবে বেশি মূলধন নেই। তারা ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ নিয়ে জীবনের দারিদ্র্যতা দূর করে উন্নতি ঘটাতে পারে।
আগে বলেছি ব্যাংক হলো, একটি দেশের অর্থের চালিকা শক্তি। ব্যাংক দেশের সাধারণ মানুষের টাকা আমানত হিসাবে গ্রহণ করে, তাদের টাকা দিয়ে দেশে শিল্পকারখানা তৈরি, দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ সহ দেশের বেকারত্ব দূর করে দেশ উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।আর এই ভূমিকা ইসলামী শরীয়াহ বা ব্যবসার মাধ্যমে পরিচালিত হলে দেশ আরো সুন্দর হয়।
তাই আবার সুর মিলিয়ে বলতে হয়, ঋণ বা সুদ নয়, আসুন বিনিয়োগ বা ব্যবসা করি।
সমাপ্ত।