গল্প জীবন সংগ্রামে রুপকথা! লেখিকা নিশীতা সুলতানা শিল্পী, তৃতীয় পর্ব

গল্পঃ জীবন সংগ্রামে রুপকথা!
লেখিকা নিশীতা সুলতানা শিল্পী
তৃতীয় পর্ব

একদিন ভাই এবং মামু মিলে ঘর তুলবে ঠিক করেছে। হুম ঠিক তাই হয়েছে, মামুর দিক-নির্দেশনা ছাড়া হয়তো সম্পুর্ন হতো না। সেই ছোট্ট ঘরটা আজ বিশাল বড় করে করা হয়েছে। সংসারে এখন অভাব নেই, নেই টানাপোড়া। এমনও একটা সময় গিয়েছে, না খেয়ে কাটিয়েছে,এমন ও সময় গিয়েছে তাদের মানুষের কটুকথা শুনেছে। এখন রুপকথার ভাই ব্যবসা করতেছে,দোকান নিয়ে ব্যস্ত, টাকা আয়ের কৌশল জানে নিঃসন্দেহে  হালাল উপার্জন। একটা সময় ছিল টাকার অভাবে মানুষের ধারে ধারে ঘুরেছে, টাকার অভাবে মায়ের চিকিৎসা ভালো ভাবে করতে পারে নি। আজ অসমাপ্ত কাজ গুলো সমাপ্ত করতে পারছে। এখন মায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরের বড় বড় ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছে। এখন সংসারে কিছুর অভাব নেই অভাববোধ করতে হয় না।

রুপকথাকে যখন কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয় তার মামু! তখন হঠাৎ করে তার ভাই রুপকথার সাথে কথা বলার ধরনটাই পাল্টে ফেলে বলতে গেলে কথা বলা বন্ধ করে দেয় প্রায় পাঁচ বছর।  কারণ ছিল, “মেয়ে মানুষকে এতো কেন পড়তে হবে এমনি হচ্ছে শ্যামলা তার উপর পড়ালেখা, কেন পড়তে হবে, ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে সমস্যায় পড়বে। তার মামু, আন্টিদের সাথে রাগারাগি করে রুপকথার ভাই। রুপকথার সাথে বসতো না, ঘৃণার চোখে তাঁকাতো। (যদিও এখনো মাঝে মাঝে এমন হয়).

যদিও বর্তমানে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু রুপকথা ভাইয়ের কথা বলা বা না বলা নিয়ে কষ্ট পেয়েও পায় নি। কারণ, সেই ছোট থেকে কখনোই এক টাকার জন্য ভাইয়ের কাছে যেতে হয় নি, পড়ালেখার খরচ এর জন্য তো দুরের কথা একটা কলম কেনার টাকার জন্য ও না। সব রুপকথার মামু নিয়েছেন দায়িত্ব আর সে টিউশনি করে প্রতিনিয়ত।  রুপকথার মা,মামু,আন্টিদের সাপোর্ট পেয়ে রুপকথা এখন সমাজের মধ্যে প্রথম স্থান পায়। রুপকথা এখন সে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে, চাকুরি করতে পারে,সাংবাদিকতার নিউজ তৈরি করতো, মানুষকে বিভিন্ন কাজ শেখাতে পারে,টিউশনি এখন তার নিত্যনতুন সঙ্গী।

আরো পড়ুনঃ  ছোটো বিড়াল কলমে হুমায়রা

তার সাথে সাথে মেয়েটা এখন ইসলামিক জ্ঞান অর্জনের পিছে হাটতেছে  পড়তেছে  বিভিন্ন হাদিস,ইসলামি ফরজ বিধান পর্দায় থাকতে চেস্টা করে সব সময়, বাড়ির মানুষদের নিয়ে শিখে এবং শেখাতে মগ্ন। যদিও মাদ্রাসার লাইনে নয় তবুও চেস্টায় মাতে সব সময়। কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে প্রায় চার বছর ধরে সে এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে থাকে প্রতিদিন। কিতাব পড়ে আমল করে।

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন, শিগ্রই তোমার রব তোমায় এতো দিবেন যে,তুমি খুশি হয়ে যাবে“।
     সূরাঃ দূহাঃ০৫
সুবহানাল্লাহ।
হুম তাই সত্যি হয়েছে আল্লাহ কাউকে নিরাশ করেন না।

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি।
সূরা আল-ইনশিরাহঃ ০৬।

আজও রুপকথা থেমে নেই। হুম বাড়িতে বসে রুপকথা এখন আয় করতে জানে।গায়ের রং নিয়ে এখনো দু-একটা কথা শুনে কিন্তু কারো কথায় এখন কান দেয় না সম্পুর্ণ আল্লাহর উপর বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে হাটি হাটি পা পা করে।
দুঃখ একটাই! তাঁর মা’কে আজও সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে পারছে না। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর থেকেই যে অসুস্থতার মোহে পড়ে ছিলো, সে থেকে আজও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পড়ে আছেন বিছানায়। তারা স্বাভাবিক করতে গিয়ে বার বার হোচট খেয়ে  থমকে যাচ্ছে। হুম! ভালো মন্দ সময় গুলো নিয়ে রুপকথা আজ হাটতেছে স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে।

দোয়া ও ভালোবাসা রইলো রুপকথার জন্য।

(সমাপ্ত)

নিয়মিত পড়ুন ও লেখুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *