ঘূর্ণিঝড়ের কথা
মোজাম্মেল হক
বলছিলাম এমন এক ঝড়ের কথা, যেটি কিনা সায়রে প্রচন্ড ঘূর্ণি সৃষ্টি করে। নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্টি হয় এই অবস্থার। বিভিন্ন দেশে ঘূর্ণিঝড়কে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেউ এর নাম টাইফুন দিয়েছে, আবার কেউ এর নাম হারিকেন দিয়েছে। তবে অঞ্চলভেদে কিংবা রাষ্ট্রভেদে যে কোন নামই দেওয়া হোক না কেন, ঘূর্ণিঝড় কিন্তু একই। ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পূর্ব থেকেই বিধ্বংসী ছিল, আজও সেটি বিদ্যমান রয়েছে। এর কারণে উপকূলবর্তী মনুষ্যের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কেউ কেউ আবার এর প্রভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকার। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার উঠে পড়ে। এ যেন এক সর্বোচ্চ প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামী জীবনযাপন ও লড়াই। ঠিক যেমন প্রাকৃতিক নির্বাচনের মত। প্রকৃতিতে যে প্রাণী শক্তিশালী ও প্রকৃতির সাথে অভিযোজন করতে সক্ষম সেই প্রাণীই প্রকৃতি কর্তৃক নির্বাচিত হয় এবং তার পরবর্তী বংশধর রেখে যায় মৃত্যুর পূর্বে। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া সেখানে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় প্রাণীদের ক্ষেত্রে তখন। ঠিক তেমনি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উপকূলবর্তী ইনসানদের জীবনও প্রতিকূল পরিবেশের সাথে বেঁচে থাকার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। সেগুলাে তৎপরতা চালায় বিরূপ প্রকৃতির বিরুদ্ধে। বিরূপ প্রকৃতির আভাস সে পায় বহু পূর্বেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম একদিনের নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সে প্রতি মুহূর্তেই মুখোমুখি হচ্ছে। প্রতিবারই সে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছ থেকে নতুন নতুন শিক্ষা নিচ্ছে ও নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা নিজের অন্তরাত্মায় সঞ্চার করছে এবং নিত্যনতুন চিন্তা-ভাবনায় নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য প্রতিবারই সেটি বাস্তবায়ন করছে ও ফলস্বরূপ এর সুফল ভোগ করছে। মানুষের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনার ফলে পূর্বে সিডর ও আইলায় আমাদের এই মাতৃভূমির যে বিশাল ক্ষতি হয়েছিল সেরকম ক্ষতির ঘটনা বর্তমানে আমাদের এই মাতৃভূমিতে খুব কমই শোনা গিয়েছে। যেসব ঘূর্ণিঝড় এ পর্যন্ত আমাদের এই মাতৃভূমির দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী উপকূলে আঘাত এনেছে সেসব ঘটনায় ২০০৭ ও ২০০৯ সালে সংঘটিত সিডর ও আইলা ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিশাল ক্ষয়ক্ষতির খবর শোনা যায়নি। প্রতিবছরই তীব্র তাপদাহে যেমন জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, তার চেয়ে বোধহয় বেশি বিপর্যস্ত হয় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মনুষ্যদের জীবন। কারণ তাদের ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বহুমুখী সংকটে পতিত হতে হয়। যেটি সাধারণ তাপদাহে সাধারণত দেখা যায় না। শুধুমাত্র সাধারণ তাপদাহে হিট স্ট্রোক দেখা গেলেও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে উপকূলবর্তী এলাকায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের ও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। আবার কিছু দুর্যোগ রয়েছে যেগুলো কিনা ঘূর্ণিঝড়ের মতো পূর্ব থেকে এর আগাম সংকেত পাওয়া যায় না। বরঞ্চ সেগুলো পূর্বসতর্কতা প্রদান ব্যতীতই আগন্তুকের মতো হাজির হয় আমাদের নিকট। তবে সে আগন্তুকের মতো আমাদের নিকট অজানা বা অচেনা নয়। বরং সর্বকালেই সে সংঘটিত হয়েছে এবং নিজের কুখ্যাত পরিচিতি লাভ করেছে।