তগগশিক্ষক দিবস – ২০২২ইং
ফারহানা রহমান মিষ্টি
লেকচারার
ফুলছড়ি সরকারি কলেজ
শিক্ষক অর্থ-
শি- শিক্ষাদান
ক্ষ- ক্ষমাশীল
ক- কর্মঠ।
শিক্ষক দিবস ভালোলাগা, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার দিন।এটি এক দিনের জন্য নয়। প্রতি দিন প্রতি মূহুর্তেই আচরণ গুলো কে নতুন করে পালন, সংকল্প ও সংঘবদ্ধ নেওয়ার দিন। কেন বোঝা নয় সহজাত স্বভাব ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বহিঃপ্রকাশের স্বাভাবিক প্রতিজ্ঞা।
আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে ইউনেস্কোর মাধ্যমে সারা বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। । এই দিবস টি শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ পালন করে। এই দিবস টি পালনে Education interest (EI) এর সাহায্য ৪০১ টি সদস্য সংগঠন আন্তর্জাতিক ভাবে দিবস টি পালন করে এবং একটি বিষয় নির্ধারণ করে দেয় যা জনসচেতনতা ও শিক্ষকতা পেশার অবদানকে মনে করিয়ে দেয়। কথায় বলে জীবনে প্রথম যিনি পৃথিবীর আলো দেখান তিনি প্রথম গুরু যিনি প্রথমে হাত ধরে প্রতিনিয়ত সাহায্য করেন,জীবনের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে জীবন কে সহজ করে দেন শিক্ষক।গুরু ও শিক্ষকের পরম্পরার বিষয়েটি চলে আসছে সেই বৈদিক যুগ থেকে। শিক্ষক প্রতিটি শব্দ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার রীতিনীতি হলো শিক্ষক।শাস্ত্র অনুযায়ী বাবা মায়ের পরেই যদি কেউ থেকে থাকেন তিনি শিক্ষক।
করোনার কারণে গত বছর ১৭ মার্চ বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হওয়ার পর প্রায় ৫৪৪ দিন পর গত ১২ সেপ্টেম্বর খোলা হয়েছে। ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপকল্প প্রস্তুত করার জন্য শিক্ষকরাই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।শিক্ষকতার পেশার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আলোকিত টিচার্স গত মাসে শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য একটি সার্ভে করেছিল। সেখানে শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তারা কি তাদের পেশাকে নিরাপদ মনে করেন? ২৫ শতাংশ শিক্ষকই ইতিবাচক মন্তব্য করেননি। তাদের এই নেতিবাচক মন্তব্যের পেছনে যুক্তিগুলোরও আমাদের ভাবিয়ে তুলেছ। পত্রিকা থেকে জানতে পারি যে, করোনার সময়ে প্রায় ১০ হাজার কিন্ডার গার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেক শিক্ষক চাকরি হারিয়েছ। আমাদের এখনই সময় এসেছে, এই পেশার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
শিক্ষক দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পৃথিবী প্রতি সেকেন্ডে বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের ও বদলাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একজন শিক্ষক আজকেই আগামী দশকের সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গুরুত্ব দিতে হবে। আলোকিত টিচার্স গত মাসে জরিপে শিক্ষকদের একটি প্রশ্ন করেছিল, শিক্ষকেরা তাদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন মনে করেন কিনা? ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষকই মনে করেন তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের দরকার। করোনার মতো যেকোনো মহামারি মোকাবিলায় শিক্ষকদের আগে থেকে প্রস্তুত রাখতে হবে, এর জন্য প্রশিক্ষণ খুব দরকার। করোনার সময়ও কিভাবে শিক্ষাকে পুনরুদ্ধার করা যায় তা নিয়ে সম্যক জ্ঞান রাখতে জ্ঞান রাখতে হবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উপাদান হলো শিক্ষার্থী। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো শিক্ষক। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অভিভাবকের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক সফলতা পেতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। অভিভাবকদের শিক্ষকদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস, আন্তরিকতা ও আস্থার জায়গা তৈরী করতে হবে।
শিক্ষকতা হোক আনন্দদায় শিক্ষা আনন্দদায়ক হোক এটা সবার প্রত্যাশা। কিন্তু শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করার জন্য আমরা সবসময় শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করি। আমাদের শিক্ষাক্রমেও শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের চাপ কমানোর জন্য নানান পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া।শিক্ষকতায় স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। ফলে শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। যেমন: বছর শেষে ‘সেরা শিক্ষক’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই বছর সরকারের এ টু আই ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ‘সংকটে নেতৃত্বে’ শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করেছে। এছাড়া আলোকিত টিচার্স ‘টিচার্স ইনোভেটরস-২০২১’ এর মাধ্যমে শিক্ষকদের উদ্ভাবনগুলোর স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সারা বাংলাদেশের সব শিক্ষকদের থেকে আসা ইনোভেশনগুলোর মধ্যে সেরা তিনজনকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষকদের উদ্ভাবন এবং কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা হচ্ছে।
সমাজের মহাকাশের মাঝে নীহারিকা হয়ে অবস্থান করছে শিক্ষক সমাজ। যে নীহারিকা জন্ম দেয় হাজার নক্ষত্ররাজির। শিক্ষক দের আলেক রশ্মি থেকে উতস থেকে জন্ম হয় আগামীর সচেতনতা এককগুলি।যাদের সমারোহে ভরে উঠে গোটা সমাজ।গোটা বিশ্ব।
আর্দশ শিক্ষাক হওয়া একটি কষ্ট সাধ্য বিষয়। অনেকের ধারণা শিক্ষকতা একটি সহজ পেশা।আসলে এটি সবচেয়ে কঠিন। একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে. যা পড়াবে, তার প্রস্তুতি নিতে হয়,ছাত্রদের সর্ম্পকে চিন্তা করতে হয়,গবেষণা করতে হয়,লেখা লেখি করতে হয়। শিক্ষকতা শুধু পেশা নয় এটা আমার ব্রত। সকল শিক্ষক সমাজেরও ব্রত তাই হোক।