পাখির জীবন কলমে: নারগিস খাতুন

পাখির জীবন
নারগিস খাতুন

মা ওমা খুব জল তেষ্টা পেয়েছে একটু জল খাবো। দাওয়না আনিয়ে ওই পাশের বাড়ি থেকে, ওরা কত জল নষ্ট করে চলেছে প্রত্যেকদিন আর আমি একটু জল পাছি না খেতে। গলা যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। দাড়াও বাচ্চা আমি দেখছি কি ভাবে জল আনা যায়। ওরা তো আমাদের দেখলেই জল না দিয়েই তাড়িয়ে দেয় অবশেষে উড়ে চলে আসতে হয় এই ছোট বাসায়, অথচ ওরা কত জল নষ্ট করে চলেছে।
ওমা ওরা তো কত ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে আমাদের কি একটুও দেবে না দুই দিন ধরে তো কিছুই খায়নি। শরীর যে আর চলেনা, ওই সুন্দর খোলা আকাশে যে মন খুলে উড়ে বেরাবো সেটাও পারছি না মা। একটু খাবার এনে দাও না মা। আকাশে এখন উড়তে ভয় করে মা ওই মানুষগুলো আকাশে ধোঁয়া ছড়ায় নিশ্বাস নিতে যে খুব কষ্ট হয়। মা তুমি কান্না করছো।
না না বাচ্চা আমি কান্না করিনি।
এই রোদ্রের আমার সব ভাই বোনকে তুমি তোমার ডানা দিয়ে ছায়া করে রেখে দাও আমার কষ্ট না হয় সেই জন্য। কিন্তু মা তোমার যে কষ্ট হয় রোদ্রের তোমার শরীর যে উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছে মা।
না বাচ্চা আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না, তুমি একটু ঘুমাও তোমার ভাই বোন দুটি ঘুমিয়ে আছে। আমি খাবারের সন্ধানে যায়। দেখি তোমাদের জন্য কি খাবার আনতে পারি।
মা চলনা আমরা এখান থেকে উড়ে অনেক দূরে চলে যায় যেখানে কোনো মানুষ সুন্দর আকাশে বিষাক্ত ধোঁয়া দেবে না। যেখানে আমরা অনেক খাবার খেতে পারবো।
তাই হবে বাচ্চা, আগে তোমার ভাই বোন উড়তে শিখে যাবে, তারপরেই এই জায়গা থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবো তোমাদের। এখন তুমি ঘুমাও আমি খবরের সন্ধানে গেলাম।

আরো পড়ুনঃ  বৃষ্টি নিয়ে লেখালেখি | সত্যিই বৃষ্টি

ও বাচ্চারা তোমরা ঘুম থেকে উঠো আমি তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। কয় মা খাবার নিয়ে এসেছ, মা খুব খিদে পেয়েছে। নাও সবাই খেয়ে নাও। মা তুমি খাবেনা, তুমিও আমাদের সাথে এক সাথে খাবার খেয়ে নাও। না বাচ্চারা আমি খেয়েছি তুমি খেয়ে নাও। জানি মা তুমি মিথ্যা বলছো একসাথে সবাই মিলে, যে খাবার আছে তাই খেয়ে নেবো। রাত হয়েছে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যাবো সবাই।

ওমা ওমা দেখো বোন আর ভাই কিছুই বলছে না নড়াচড়াও করছে না কেনো মা। বাচ্চা তোর বোন ও ভাই আর এই পৃথিবীতে নেই কাল জল জল করছিল আমি দিতে পারিনি, সূর্যের তাপ ওদের নরম শরীর গরম হয়ে গিয়ে মারা গিয়েছে বাচ্চা। কান্না করোনা বাচ্চা আমার। মা চলো এই দেশ ছেড়ে আমরা বহু দূরে চলে যায় যেখানে আমরা খুব ভালোভাবে থাকতে পারবো। যেখানে আমাদের জলের, খাবারের কোনো অভাব হবে না, যেখানে থাকবে সবুজে ঘেরা চতুর্দিক। যেখানে আমার ভাই বোনের নরম শরীর রোদ্রের তাপে মারা যেতে না হয় সেই জায়গা। আচ্ছা বাচ্চা চলে আমি তোমাকে ওই গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাব, সেখানে নতুন করে বাসা বানাবো।

 

       মুর্শিদাবাদ   ভারতবর্ষ

       

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *