বান্ধবীকে নিয়ে লেখা গল্প

বান্ধবী অর্পিতা
মোঃ রহমান উদ্দিন

আবছার স্যারের কোচিংয়ে আমার প্রথম দিন অর্পিতার সাথে দেখা। তাকে দেখে আমি প্রথমেই হিন্দু ভেবেছিলাম। পরবর্তীতে যখন তার পুরো নাম জানতে পারলাম তখন বুঝলাম যে সে একজন বড়ুয়া। প্রথমে প্রথমে সে আমার সাথে কথা বলতো না। পরবর্তীতে একটু একটু কথা বলতে বলতে তার সাথে একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক হয়ে যায়। আবছার স্যার আমাদেরকে ইংরেজি পড়াতেন। আমি একটু ইংরেজি ভালো জানতাম তাই স্যার আসার আগে আমি অর্পিতাকে অল্প অল্প ইংরেজি পড়াতাম। তার সাথে আমার বন্ধুর রিয়েল আর শাহেদকেও পড়াতাম। তবে শাহেদ ছিল ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে , আমাদের জুনিয়র। ফলে অর্পিতার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। সে পড়ালেখায় অনেক ভালো ছিল। কিন্তু তার একটি খারাপ অভ্যাস ছিল। সেটা হল একসাথে তিন চারটা ছেলের সাথে প্রেম করা। ফলে সে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আমি আর আমার বন্ধু রিয়েল তাকে জাতির ক্রাশ বলে ডাকতাম।

কিছুদিন পর চলে আসলো এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার সেন্টারে তার সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয় এবং যতবার দেখা হয়েছিল ততবার জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে। সে বলতো পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে সে আমাকে বলে আমি ‘এ’ পেয়েছি। আমিও বিশ্বাস করে নিলাম। তার কয়েক মাস পর অনার্সের ভর্তির আবেদন শুরু হল। আমি আর রিয়েল ভর্তি পরীক্ষার জন্য পাবলিকে আবেদন করি। পাশাপাশি ন্যাশনালে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে আবেদন করি। আমরা রাঙ্গামাটি কলেজে আবেদন করেছি এটা শুনে অর্পিতাও দুইদিন পরে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে আবেদন করে। তবে এটা আমাকে বলে নাই। যখন প্রথম মেধা তালিকা দিল তখন অর্পিতা মেসেঞ্জারে আমাকে মেসেজ দিয়ে বলে আমার রেজাল্টটা দেখ আমিও রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে আবেদন করেছি। রেজাল্ট দেখতে গিয়ে দেখি তার কোন সাবজেক্ট আসেনি । আমি তার থেকে এসএসসি আর এইচএসসির রোল নাম্বার এবং রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নিয়ে তার এসএসসি আর এসএসসির রেজাল্টটা দেখি । দেখতে পেলাম সে এসএসসি আর এইচএসসিতে কোনরকম পাস করেছে । তারপর আমি তাকে বললাম, তোমাকে এত অল্প জিপিএ নিয়ে রাঙ্গামাটি কলেজে আবেদন করতে কে বলেছে ? সে উত্তরে আমাকে বলল , তোমার সাথে পড়ার আমার খুব ইচ্ছা তাই আমিও একই কলেজে আবেদন করেছি । দ্বিতীয় , তৃতীয় মেধা তালিকা দেওয়ার পরেও তার কোন সাবজেক্ট আসেনি।

আরো পড়ুনঃ  বর্ষার জলছবি | বর্ষা নিয়ে গদ্য

আরো পড়ুনঃ- ৭টি স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ ও চিকিৎসা

অনার্সের প্রথম রিলিজস্লিপের আবেদনের দিন আমি কলেজে ক্লাস করতে গিয়েছিলাম । ক্লাস শেষ করে চলে আসার সময় হঠাৎ দেখি অর্পিতা রাঙ্গামাটি কলেজে এবং আমার দিকে এগিয়ে আসতেছে । আসার পর সে আমাকে বলল , আমি মনে মনে আল্লাহকে বলতেছি আল্লাহ রহমানের সাথে যেন দেখা হয় । আমার ভাগ্য ভালো তোমাকে পেয়ে গেলাম । কেন এসেছ জিজ্ঞেস করলে সে আমাকে বলে আমি রিলিজস্লিপে আবেদন করতে পারতেছি না তাই কলেজের অফিসে আসলাম । আমি তাকে নিয়ে অফিসে গেলাম । গিয়ে দেখি তার আবেদনটা সঠিকভাবে হয়নি । দুঃখভরা আক্রান্ত মন নিয়ে বেচেরি অর্পিতা অফিস থেকে বের হয়ে যায় এবং আমাকে বলে আমার আর অনার্সে পড়া হবে না । আমি তাকে বললাম অনার্সে হয় নাই তো কি হইছে ডিগ্রি তো আছে । তুমি ভালো করে পড়ালেখা করলে ডিগ্রি করেও ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবে । তারপর উঠে গেলাম দুইজনই বাসে । গাড়িতে অর্পিতা আমাকে বলল , ডিগ্রির আবেদন শুরু হলে আমাকে বলিও । আমি বললাম , আচ্ছা ঠিক আছে তোমার আবেদনটা আমি আমার বন্ধু রিয়েলকে দিয়ে করাবো । বেশ কিছুক্ষণ পর বাস রাউজানে এসে পৌঁছালে সে বাস থেকে নেমে আমাকে বলে, ঠিক আছে পরে দেখা হবে এই বলে বাড়িতে চলে গেল । পরবর্তীতে ডিগ্রির ভর্তির আবেদন শুরু হলে তার আবেদনটা রিয়েলকে দিয়ে করায় । কোনরকম ডিগ্রিতে চান্স পেয়ে যায় ।

একদিন রাতে মেসেজ দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল তুমি কেমন আছো । বলেছিলাম আমি ভালো নাই অসুস্থ । আমাকে ওষুধ খেতে বললে ,আমি বলি আমার ওষুধ কেনার মত টাকা নেই । সে আমাকে বলল, তোমার টাকা নাই তো কি হইছে আমি তো আছি , তোমার বিকাশ নাম্বারটা দাও । আমি মনে করেছিলাম সে আমার সাথে মজা করতেছে । আমি বললাম আমি জীবনে কোন মেয়ে থেকে কোন কিছু নিই নাই । আর তুমি আমাকে টাকা দিলে সেগুলো কখনো পাবে না , কারণ আমি টাকা ইনকাম করি না । সে আমাকে বলল , তোমাকে টাকাগুলো আর দিতে হবে না আমি দু’ তিনটা টিউশন করি । যাইহোক আমি বিকাশ নাম্বার দিই নাই।

আরো পড়ুনঃ  একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প | একজন আসল মুক্তি যোদ্ধা

আরো পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

পরদিন সকালে আমি কলেজে ক্লাস করার জন্য রাউজানে যায় । আমার মন ভালো না থাকার কারণে রাউজান থেকে আর রাঙ্গামাটিতে ক্লাস করতে যাইনি । হঠাৎ দেখি অর্পিতা আমাকে আবারও মেসেজ দিয়েছে এবং বলে আমাকে তোমার বিকাশ নাম্বারটা দাও আমি দোকানে এসেছি । বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে আমি আমার বিকাশ নাম্বারটা দিলাম । দু ‘মিনিট পরে দেখি সে সত্যি সত্যি আমাকে চার শত টাকা পাঠিয়ে দেয় এবং বলে এই টাকা গুলো একজন থেকে ধার নিয়েছি তোমার জন্য । সে আরো বলে তোমার জন্য টাকা পাঠাতে গিয়ে আমার লাভ হয়েছে ,আমি আরেকটা নতুন টিউশন পেয়ে গেলাম । পরবর্তীতে আমি টাকা গুলো দিয়ে দিতে চাইলে সে আর নিতে চাই না । আমি জোর করে টাকাগুলো দিয়ে দিই । তাই সে রাগ করে আমার সাথে প্রায় এক মাস কথা বলেনি ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *