ভালোবাসা হয় ভালোবাসায় কলমে পাথর মৃর্ধা

ভালোবাসা হয় ভালোবাসায়

ভালোবাসা হয় ভালোবাসায়
কলমে পাথর মৃর্ধা

রিমঝিম ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে, আজ পহেলা ফাল্গুন, ভার্সিটিতে একটি অনুষ্ঠান আছে, রিমঝিম খুব ভালো গান গায়, তাই ভরে উঠে গোসল সেরে চুল শুকাতে ছাদে উঠেছে, আজ বসন্তের প্রথম দিন ফুরফুরে হাওয়া, জুই চামিলী ফুলের মিষ্টি সুভাষ বাতাসে ভেসে আসছে, আপন মনের রিমঝিম গেয়ে ওঠে,
আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে ,এত বাঁশি বাজে এত পাখির গান গায়,
আহা আজি এ বসন্তে,

শাহানা বেগম: রিমির মা নাস্তা খাওয়ার জন্য মেয়েকে ডাকতে যাচ্ছিল হঠাৎ গান শুনে থমকে দাঁড়ালেন, রিয়াজ আহমেদ: রিমির বাবা একজন ব্যবসায়ী প্রতিদিনের মতো আজও নাস্তার টেবিলে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। খবরের কাগজ থেকে মুখ উঠিয়ে শাহানা বেগমকে: বললেন আহা কতদিন পর মেয়েটি গান গাইছে, কতদিন পর মেয়ের কন্ঠে গান শুনতে পেলাম, পড়ালেখার চাপে মেয়েটি তো গান গাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে,
শাহানা বেগম ব্যস্ত হয়ে বললেন আর বলতে হবে না এবার মেয়ে বিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর, পড়ালেখা তো প্রায় শেষ হতে চলেছে আর পরীক্ষাও সামনে, এবার বলে কি মেয়ের মেয়ের গুনোগান না গেয়ে পাত্র দেখায় মন দাও,

রিয়াজ সাহেব: হেসে বললেন শোনো-আমাদের ওই একমাত্র মেয়ে বিয়ে দিলেই পরের বাড়ি চলে যাবে যে কটা দিন ও আমাদের কাছে আছে ওকে ওর মতো চলতে দাও।

শাহানা বেগম: তাহলে আর কি মেয়েকে যত পারো আলাদ দাও,
আমি যাচ্ছি তোমার আদরের মেয়েকে ডাকতে নাস্তা খাওয়ার জন্য বলে শাহানা বেগম চলে গেলেন মেয়েকে ডাকতে,

রিমঝিম বলে শাহানা বেগম মেয়েকে ডাক দিতে রিমি নিচে নেমে এলো,
মা, নাস্তা দিতে রিমি বলে ওঠে মা আমি কি ছোট এত নাস্তা কেন দিচ্ছো, আমি শুধু একটা পরোটা খাব আর কিছু না, মা ধমকের সুরে বলে চুপ করে খেয়ে নাও যা দিয়েছি, প্রতিদিন তোমার খাবারের সময় বাহানা শুরু হয়, রিমি আহ্লাদের সুরে বলে বাবা আমাকে কিছু বলো,
আমার খাবারের সময় নেই সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে,
বাবা, হেসে বলে ওকে ওর মতো খেতে দাও মা রাগ করে বলে
তোমাদের বাবা মেয়েকে আমি কিছুই বলবো না তোমরা যা ইচ্ছে তাই করো বলে রান্না ঘরে চলে গেলেন সাহানা বেগম।
রিমি নাস্তা শেষ করে রুমে চলে গেলো,
নীল রংয়ের একটি শাড়ি পরল, চোখে কাজল দিল, হাতে নীল চুড়ি খোপায় দিলো নীল অপরাজিতা ফুল,
ভারি সুন্দর লাগছে মনে হয় স্বর্গের অপ্সরা,
হাতে বই আর কাঁদে ব্যাগ, দরজার কাছে এসে মাকে ডাক দিয়ে বললো মা আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি বলে ভার্সিটির দিকে রওনা হলো।

রিয়া সাহেব ও অফিসে চলে গেলেন,
বাড়িতে শাহানা বেগম একা, তার হাতে সময় নেই অনেক কাজ পড়ে আছে সে দরজা লাগিয়ে আবার রান্নার ঘরের কাজে মন দেন।

 

রিমি পাড়ার মোড়ে দাঁড়ালো রিক্সার জন্য, চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে কয়েকজন যুবক আর আড্ডা দিচ্ছিল হঠাৎ রিমির চোখে পড়লো একজনের দিকে দেখল একটি ছেলে রিমি দিকে তাকিয়ে আছে
অস্বস্তি লাগছে রিমির,
কোন রিক্সাও পাচ্ছে না,
ছেলেটির গায়ে সাদা শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পালিশ করা সাদা সু, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, কালো সানগ্লাসটা কপালের উপরে তোলা, দেখতে দারুণ লাগছে
ছেলেটিকে রিমি খুব ভালো করে চেনে এলাকা বখাটে,
ওর নাম বিশাল অনেকবার রিমিকে প্রেম নিবেদন করেছে অনেক ভয় দেখিয়েছে রাস্তায় অনেক বার হেনস্থা করেছে
রিমি কিছুই বলেনি,
বড়লোক বাবার একমাত্র বখে যাওয়া ছেলে।
পড়ালেখায় গেজুয়েট পাস
ব্যবসা চাকরি কোন কিছুই তার ভালো লাগে না তার ভালো লাগে পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া,
রিমি একদম পছন্দ করেনা রিমি খুব ভয় পায় বিশালকে,
ওকে দেখলেই রিমির হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়, বুকের ভেতরটা ভয়ে লাফাতে থাকে।
অবশ্য দিনের বেলা রাস্তায় অনেক মানুষ আছে ও চাইলেও কিছু বলতে পারবে না,
তবুও কেমন জানি বুকের ভেতরটা করছে, বারবার কেন
ওর চোখে চোখ পড়ছে,
চাইলে অন্য দিকে চোখ ফেরাতে পারছি না এটা কি ভয় না অন্য কিছু, এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিমি ভাবছে হঠাৎ ওর ভাবনার ছেদ পরে রিক্সার বেলে সংবিৎ ফিরে পেল,
দেখে রিকশা দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে,
রিক্সাওয়ালা ছেলেটি বলছে উঠেন আপা,
রিমি বললো উঠেন মানে
রিকশাওয়ালা ছেলেটি বলল কেন আপনি তো কলেজে যাবেন ,
রিমি বললে আমি তো তোমায় ডাকিনি তুমি জানলে কেমন করে আমি কোথায় যাব
এমন সময় বিশাল এসে বলে ওঠো রিক্সাএনেছি রিমি কিছু বলতে যাবে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারল না, এটা প্রতিদিনের রুটিন রিমি যে রিক্সা ঠিক করবে ওই রিকশায় উঠা যাবে না ওর ঠিক করা রিক্সায় উঠতে হবে কিছু বলাও যাবে না ও বেশি কথা বলা পছন্দ করেনা এটা ওর ডায়লগ অথচ চায়ের দোকানে বসে আড্ডায় মশগুল থাকে সবচেয়ে বেশি কথা ঐ বলে।
বিশাল বলে কি হলো ওঠো তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আর এত সেজেছো কেন রাস্তায় অনেক লোক তোমাকে দেখছে এটা আমার পছন্দ না তুমি শুধু আমার বলে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের মাঝে রাখল দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল এই ব্যাটা যা ওকে নামিয়ে বসে থাকবি যতক্ষণ ও বের না হবে।
রিক্সাওয়ালা ছেলেটি বলল জি আচ্ছা বলে রিক্সা চলে গেল
রিমি পেছনে ফিরে দেখলে বিশাল দাঁড়িয়ে আছে,
রিমির পিছনে ফিরে আর তাকালো না ওকে রিক্সাওয়ালার ভার্সিটির সামনে নামিয়ে বলল আপা আপনি জান আমি এখানে বসে থাকবো আপনার জন্য রিমি বললো এই খবরদার এখানে দাঁড়ালে ভার্সিটির ছাত্রদের দিয়ে তোমার রিক্সা আটকিয়ে রাখবো,
যদি এখানে থাকো, এক্ষুনি চলে যাও,আপা আমি চলে গেলে বিশাল ভাই আমাকে মারবে রিমি বলে তুমি চলে যাও আমি কাউকে কিছু বলবো না এই নাও তোমার ভাড়া রিকশাওয়ালা ছেলেটি বলে যে আমার তো ভাড়া দিয়ে দিছে ভাইজান,
ও আচ্ছা তুমি যাও।

সারাদিন ভার্সিটিতে ভালো কাটলো রিমির অনেক হইচই করল গান-বাজনা হলো এখন বাড়ি ফেরার পালা সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো গেটের বাইরে আসলো দেখে চারিদিকে অন্ধকার তুমুল বাতাস শুরু হয়েছে কোন রিক্সা গাড়ি কিছুই দেখা যাচ্ছে না মনে হয় খুব জোরে ঝড় হবে মনে মনে ভাবছে রিমি না রিক্সাটা ছাড়া ভুল হয়েছে ওকে বিকেলে আসতে বলতাম তাহলে এরকম বিপদে পড়তে হত না এখন কি করবো বুঝতে পারছি না,
যদি কোন বিপদে পড়ি তাহলে কি হবে বাতাসের সাথে ধুলেও উঠছে কোন কিছু চোখে দেখছি না, মনে হয় রাত হয়ে গেছে রাস্তায় কোন লোকজন তেমন দেখছি না, কি করবো বুঝতেও পারছি না এমন সময় হর্ণের শব্দে দু চোখ বন্ধ করে ফেলে রিমি
হাত পা থর থর করে কাঁপছে
ভয়ে।
কে যেন ওর হাত ধরে বলো ভয়ের কিছু নেই আমি এসে গেছি চোখ খুলো রিমি চোখ খুলে দেখে বিশাল ওর বাইক নিয়ে এসেছে সাথে সাথে আকাশে এমন বিকট ভাবে বাজ পড়লো রিমি ভয়ে বিশালের বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝল থরথর করে কাঁপছে ও বিশাল কে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে বিশাল বুঝতে পারছে না কি করবে,
আকাশ ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামলো
দুজনে ভিজে সারা অনেকক্ষণ ধরে রাখল রিমি বিশাল কে,
এবার বিশাল মুচকি হেসে বলল এই যে ম্যাডাম আর কতক্ষণ এভাবে রাস্তায় জড়িয়ে ধরে থাকবেন, বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ ধরে, তাকিয়ে দেখে রিমি বিশালকে তখনও জড়িয়ে ধরে আছে, লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি সরে দাঁড়ালো আমতা আমতা করে বলতে লাগলো আসলে আমি ভয় পেয়ে গেছি।
হুম তা তো বুঝতে পারছি আপনি কি নিজেকে অনেক সাহসী মনে করেন,
মানে?
মানে রিক্সাওয়ালা ছেলেটিকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিলেন
কি ভাবছেন ও আমাকে কিছুই বলবে না, ও আমাকে সাথে সাথে যেয়ে সব বলেছে
আর তখন থেকে আমি এখানে
দাঁড়িয়ে আছি বুঝলেন ম্যাডাম
আমি বলছিনা তোমাকে ভালবাসি
তোমাকেই ভালোবাসি
রিমি- আমি আপনাকে ভালোবাসি না কেন বুঝেন না,
আমি বুঝিনা বুঝতে চাইও না
বলেই বিশাল বলে ওঠো
কোথায়
বাইকে
না আমি উঠবো না
তুমি ভালো করে জানো আমি বেশি কথা আমার ভালো লাগে না ।
কিছু বলতে যাবে বিশালকে,
বিশালের দিকে তাকিয়ে রিমি চুপ হয়ে যায় বিশালের মুখ খুব গম্ভীর
না ওকে এখন চটানো যাবে না,
কোন কথা না বাড়িয়ে বাইকে উঠে বসলো রিমি,
বিশাল গাড়ি স্টার্ট দেয়
রিমি চুপ করে বাইকে বসে আছে হঠাৎ ঝাকিতে রিমির বিশালের গায়ে এসে পড়ে বিশাল ধাক্কা খায় নিজেকে সামলে নেয়,
গাড়ি থামিয়ে রিমিকে বলে কেন আমাকে ধরলে তোমার জাত যাবে এক্ষুনিতে অ্যাক্সিডেন্ট করতাম, একটু আগেও তো এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছিলে
যে কখনো ছাড়বে না
রিমি কিছুই বলে না
আলতো করে বিশালের বুকে দু হাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল,
এ এক অন্যরকম অনুভূতি যেন রিমির শরীরের বয়ে গেল
এ কি এমন লাগছে কেন মনে হয় বুকের ভেতরে ঝড় বইছে রিমির হাত পা সব যেন পাথর হয়ে গেছে,
এতটুকু নড়তে পারছে না কেন জানো শক্ত হয়ে গেছে,
কখন যে বাড়ির সামনে এসে পড়েছে বলতেও পারবেনা বিশালের ডাক শুনে তাকালো
বিশাল বলছে এই যে ম্যাডাম বাড়ির সামনে চলে এসেছি এবার নামুন বিশালের কথায় লজ্জা পেল রিমি কিছু বলল না বাইক থেকে নেমে চলে গেল বাড়ির ভেতরে।

আরো পড়ুনঃ  বন্যা কলমে: নারগিস খাতুন

দুইদিন হয়ে গেছে রিমি ভার্সিটিতে যায়নি কারো সাথে
তেমন কথাও বলে না ঘরে বসেই থাকে, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না,
শাহনা বেগম তার স্বামীর সাথে কথা বলছিলেন
হ্যাঁ গো, মেয়েটির কি হল একদম চুপচাপ থাকে কথা বলে না
খায়না, ঘর থেকে বেরও হয় না,
কিছু বললেই বলে সামনে পরীক্ষা তাই পড়ছি,
রিয়াজ সাহেব :রিমির বাবা বললেন তাইতো সামনে পরীক্ষা ওকে ওর মত তৈরি হতে দাও
তুমি কিছু ভেবোনা সব ঠিক হয়ে যাবে, হঠাৎ বাহিরে অনেক হইচই শব্দ শোনা যাচ্ছে
রিমি বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো
কি হয়েছে দেখার জন্য
বিশাল একটি ছেলেকে মারধর করছে,
ছেলেটি বারবার বলছে আমাকে বাঁচাও
কেউ সাহস পাচ্ছে না সামনে যাবার সবাই তাকিয়ে দেখছে,
বিশাল প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে একটা ছুরি বের করে ছেলেটির পিঠে ঢুকিয়ে দিল
তাই দেখে রিমি বারান্দায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।

ডাক্তার এসে রিমিকে দেখে গেল
পুরো বেড রেস্ট একটু টেনশন করা যাবে না,
খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করতে হবে বলে ডাক্তার বিদায় নিলো,
কিছু ওষুধ লিখে দিল
রিমি কিছুতেই ভুলতে পারছে না
ছেলেটির আওয়াজ বাঁচাও বাঁচাও,
এতো নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে মানুষ ছিঃ ভাবতেই কেমন জানি লাগছে,
আরো ২-৩ দিন কেটে গেল বাসায় রিমির।
ভার্সিটিতে যাচ্ছেনা নোটও নেই যে পড়বে সামনে পরীক্ষা না আজ লতাদের বাসায় যেতেই হবে,
লতার কাছে নোট পাওয়া যাবে
লতার আর রিমি একসাথে ভার্সিটিতে পড়ে লতা রিমির ক্লাসমেট
রিমিদের বাড়ির পড়েই তিন চারটা বাড়ির পাশে লতাদের বাড়ি,
রিমি একটা কালো রংয়ের সালোয়ার কামিজ ও সাদা ওড়না পরল,
কাজল দিল ভারী সুন্দর লাগছে
মাকে বলল আমি লতাদের বাড়ি যাচ্ছি নোট আনতে
মা বারণ করলেন না যাক লতাদের বাড়ি থেকে ঘুরে এলে ওর মন ভালো লাগবে
তাই কিছু বললেন না শুধু বললেন তাড়াতাড়ি এসো
রিমি আচ্ছা মা বলে চলে গেল।

লতাদের বাড়িতে ঢুকতে দারোয়ান বললো আপামণি লনে বইসা আছে দারোয়ান রিমিকে চিনে তাই কথাগুলো বললো,
রিমি আচ্ছা বলে লনে চলে আসলো।
দেখলো লনে বসে লতা কার সাথে যেন কথা বলছে আর হাসছে
রিমির সামনে যেতে দেখল বিশাল বসে আছে আর লতা ওরি সাথে কথা বলছে,
রিমিকে দেখে লতা দাড়িয়ে
রিমিকে জড়িয়ে ধরে বললো
মেঘ না চাইতে বৃষ্টি কি ব্যাপার এত দিন পর আমার কথা মনে পড়লো,
রিমি আমতা আমতা করে বলতে লাগলো
মানে-
লতা বলল হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না পরিচয় করিয়ে দিই
আমার ফুফাতো ভাই বিশাল এই পাড়াতেই থাকে,
বিশাল ভাই আমার সব থেকে ক্লোজ ফ্রেন্ড আমার সবচেয়ে কাছের প্রিয় বান্ধবী রিমঝিম
আমরা একসাথে লেখাপড়া করি বিশাল না চেনার ভান করে বলল ও আচ্ছা,
রিমির দিকে তাকিয়ে বিশাল বলল কেমন আছো ভালো তো
রিমি উত্তরে-হুম
লতা বলল রিমি তুই বস আমি চায়ের
কথা বলে আসি বলে চলে গেলো,
কিছু বলার আগেই বিশাল পকেট থেকে একটি সিগারেট বের করে ধরালো
তারপর রিমির উদ্দেশ্যে বলল
কি হয়েছে তোমার ক’দিন ধরে ভার্সিটিতে যাচ্ছো না
চোখ মুখ ও কেমন ফ্যাকাশে,
তুমি কি অসুস্থ,
জবাবে বললো না আমি ঠিক আছি,
বিশাল আবারো বললো তাহলে এমন লাগছে কেন তোমায়
রিমি বিরক্ত সুরে বলল আমাকে কেন আপনি বিরক্ত করেন আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি
আপনাকে আমার ঘেন্না হয় বুঝেছেন,
আই হেড ইউ,
বিশাল কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেল
লতা এসে দেখে
রিমি বসে একা দুই চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে,
বারবার বিশালের মুখটা মনে পড়ছে কি করবে বুঝতে পারছে না,
লতা বলে কি হয়েছে
বিশাল ভাইয়া কোথায়,
আর তুই কেন কাঁদছিস,
রিমি উঃ বলে কিছু হয়নি এমনি
আমি আসি বলে রিমি খুব দ্রুত চলে গেল লতা কিছুই বুঝল না শুধু রিমির চলে যাওয়া দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইল।

রিমি নিয়মিত এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছি,
বিশালকে চায়ের দোকানে বা রাস্তায় কোথাও দেখতে পাচ্ছে না, কোথায় বিশাল তাহলে কি সত্যিই ও আর আমার সামনে আসবে না, আমার তো খুশি হওয়ার কথা
প্রতিদিনের ঝামেলা পোহাতে হবে না, তাহলে এত খারাপ লাগছে কেন? এত কষ্ট হচ্ছে কেন? কোন কিছু ভালো লাগছে না, রিমির ভীষণ কান্না পাচ্ছে
রিমি লতাকে ফোন করে
এ কথা ও কথা বলতে থাকে
অনেকক্ষণ কথা বলার পর রিমি লতাকে বলে আচ্ছা তোর সেই ফুফাতো ভাই বিশালের খবর কি?
লতা বলে আর বলিস না
কারো কোন কথা শোনে না
কয়দিন ধরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছি
মানে?
মানে আর কি?
ফুপা ব্যবসার কাজে বাহিরে আছে আর ফুপী মামার কাছে গেছে ঘুরে আসার জন্য
এদিকে বাড়ি খালি
এখন সব ঝামেলা আমাকে পোড়াতে হচ্ছে,
বলিস কি? জি হ্যাঁ
ইয়ে লতা একটি কথা বলবো
কিছু মনে করবি না তো
আরে কি মনে করবো তুই হলি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বল কি বলবি ?
না আমি যদি তোর সাথে তোর ভাইয়াকে দেখতে যাই
আরে কি বলিস তুই
যাবি তাহলে কাল ভার্সিটি যাওয়ার আগে ওকে দেখে যাবো
তুই ৯ঃ০০ টায় বের হয়ে রাস্তার মাথায় দাঁড়াস
ওখান থেকে দুজনে একসাথে যাব ঠিক আছে
আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিল

রিমি সকাল ৯ টার আগে এসে দাড়িয়ে আছে, লতা আসতেই বলল চল সামনের বাড়িটায় বিশালের বাড়ির সামনে অনেক বড় লন, লনে অনেক ফুল গাছ লাগানো আছে, গোলাপ জুঁই রজনীগন্ধা ফুল ফুটে আছে, গেটে দারোয়ান
দারোয়ান লতাকে দেখে বলল আপা মনি কেমন আছেন,
লতা বলল ভালো আছি,
সত্যি বড়লোক বাপের ছেলে বলেই এমন হয়েছে,
ততক্ষণে বিশালের ঘরের সামনে এসে পড়েছে ওরা,
দেখে
বিশাল শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে,
ঘরে চারপাশের দিকে রিমি তাকালো এটা কি ঘর না অন্য কিছু সারা ঘরে বই ছড়িয়ে আছে সিগারেটের টুকরো বিয়ারের ক্যান জামা কাপড় ছড়িয়ে আছে এত নোংরা ঘরে কেউ থাকতে পারে,
লতা বলে দেখ তোকে একটা চিরিয়াখানা নিয়ে এসেছি বলতে বলতে বিশালের সামনে দাঁড়ালো
বিশাল তাকিয়ে দেখে ওর সামনে রিমি দাড়িয়ে আছে এতোটুকু অবাক হলো না বলল তুমি এখানে কেন এসেছ আর কি বলার জন্য এবার লতা বুঝতে পারল,
বলল আচ্ছা আমি তোমার জন্য স্যুপ নিয়ে আসছি তোমরা কথা বলো বলে ভিতর চলে গেল,
বিশাল বলল চুপ করে আছো কেন?
বল আরো কিছু বলার
থাকলে?
যখন বাড়ি বয়ে এসেছ তাহলে বলো তোমার মনে যা আছে আমি তো খারাপ রংবাজ বখাটে আমার মত বাজে ছেলের জন্য বাড়িতে আসা লাগে, রাস্তায় অপমান করতে
যার জন্য এত ঘেন্না জমা করে রেখেছো,
এবার রিমঝিম ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো বিশাল ভেবে পেল না তার আগেই রিমি বিশালের বুকে
লুটিয়ে পড়ল,
আরে কি হচ্ছে?
বাচ্চা মেয়েদের মত কাঁদছো কেন?
বিশাল দেখল রিমি দু হাত দিয়ে বিশালকে জড়িয়ে ধরে আছে বিশাল ওর দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল বুকের মাঝে,
এই প্রথম কোন মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে কেমন যেন একটানা শিহরণ খেলে উঠল শরীরে, কি অদ্ভুত মনে হয় হাজার হাজার বছর এমনি ধরে রাখি,
একে কি প্রেম বলে
না ভালোবাসা
দুজনের কোন খেয়াল নেই
একজন জানো অন্য জনের সাথে হারিয়ে গেছে স্বপ্নের পৃথিবীতে,
অনেকক্ষণ পর লতা ঘরে ঢুকে কাশি দিয়ে বলে মান অভিমানের পালা কি শেষ হয়েছে্,
বিশাল রিমিকে ছেড়ে দিয়ে বলে
তোকে কে এখানে আসতে বলেছে
কাবাব মে হাড্ডি
লতা বলে এই যে তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে এই হাড্ডি সাথে করে নিয়ে এসেছে বুঝলে।

আরো পড়ুনঃ  আলো-আঁধার কলমে ইমরান

বেশিদিন বিশাল রিমির ব্যাপারটা গোপন রইল না
রিমির বাবা-মা জেনে গেল,
রিমিকে বলল বিশালকে ভুলে যেতে,
ভুলে যাও এটাই তোমার জন্য ভালো হবে, রিমি কিছুই বললো না শুধু বললো বুলার হলে অনেক আগেই ভুলে যেতাম
আমাকে দয়া করে জোর করো না
আমি কিছুতেই ওকে ভুলতে পারবো না বলেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল, পরের দিন বিশালদের বাড়িতে গেল রিমি
বিশালের মা বারান্দায় বসে ছিল রিমিকে দেখে বলল কেমন আছো মা,
জি ভালো, আপনি ভালো আছেন তো
বিশালের মা বলল আগে ভালো ছিলাম না যেদিন থেকে তুমি আমার ছেলের জীবনে এসেছো আমার ছেলের জীবনটা বদলে দিয়েছো সত্যি তোমার কাছে আমার ঋণ রয়ে গেল এখন আমি অনেক ভালো আছি রাতে ঘুমাতে পারি,
যাও মা বিশাল ওর ঘরে আছে।
রিমি বিশালের ঘরে যায় দেখে বিশাল একটি ইজি চেয়ারে বসে আছে বই পড়ছে রিমি দেখে ঘরের সব জিনিস অগোছালো রিমি বলে এটা কি কোন গাধার ঘর,
বিশাল তাকিয়ে বলে এই আমাকে গাধা বলবে না,
তাহলে এমন কেন অগোছালো,
হুম তুমি এসে গুছিয়ে রাখো তা হলেই তো হয়, বলেই রিমিকে জড়িয়ে ধরে,
এ্যাই আমাকে ছাড়ো
না ছাড়বো না,
ছাড়বেনা খালাম্মাকে ডাকবো,
ডাকো আমি ভয় পাই না,
তাই,
দুষ্ট কোথাকার,
এভাবে কেটে যায় বিশাল আর রিমির সময়।

সন্ধ্যায় রিমি পড়ছে দুদিন বাদে ওর পরীক্ষা, এমন সময় গোলাগুলি শব্দে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো, কিসের আওয়াজ কি হয়েছে বাহিরে দেখার জন্য
মারামারি হচ্ছে কিন্তু রিমিকে কথা দিয়েছে বিশাল আর মারামারি করবে না তাহলে,
এমন সময় কে যেন বলছে বিশাল ভাইয়ের বুকে গুলি লেগেছে অ্যাম্বুলেন্সে খবর দাও এটা শুনেই
অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
জ্ঞান ফিরতেই হাসপাতালে বার বার বিশাল বিশাল বলে ডাকতে থাকে কেউ কিছুই বলে না
কদিন পর সুস্থ হয়ে রিমি বিশালদের বাড়ি যায় বিশালের খবর জানার জন্য,
কি খবর শুনলো রিমি
বিশাল আর পৃথিবীতে নেই এটা বিশ্বাস করা যায় না,
রিমি বললো তোমরা আমাকে মিথ্যে বলছো আমাকে একা ফেলে বিশাল কোথাও যেতে পারে না আমাকে বিশালের কাছে যেতে দেও,
আমি বিশাল এর কাছে যাব বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে, এটাই সত্যি মৃত্যুর কাছে সবাই হার মানে,বিশালের ভালোবাসা অমর হয়ে রিমির কাছে থাকবে,

ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে রিমি,
একটু একটু করে ভুলতে থাকি বিশালকে,
সত্যি কি ভুলা যায় প্রথম দেখা প্রথম ভালোলাগা তারপর ভালোবাসা জানি ভুলা যায় না জীবন বড় বৈচিত্র্যময়।
কখন কার জীবন কেমন হয় কেউ জানে না, রিমি ও জানতোনা তাইতো সময়ের সাথে সাথে রিমির বিয়ে হয়ে যায় এক ব্যবসায়ীর সাথে সংসার জীবনে এখন ভালো আছে রিমি,
ভালো বর ভালো ঘর তবু যেন মনটা জুড়ে
আছে শুধু বিশাল
আর তার স্মৃতি,
রিমির বর সব জেনেশুনে রিমিকে বিয়ে করেছে বাসর ঘরে রিমিকে বলেছে আমি হাজার চেষ্টা বা ভালোবাসা দিও তোমার মন থেকে বিশাল কে মুছে দিতে পারব না আর আমি সে চেষ্টাও করবো না
তুমি যেদিন মন থেকে আমাকে গ্রহণ করবে সেদিন আমি তোমাকে তোমার মর্যাদা দেব ভেবনা আমি অন্য পাঁচজনের মতো তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো,
তুমি নিশ্চিন্তে থাকো
আমি সোফায় ঘুমাবো
তুমি খাটে ঘুমাও এইভাবে কেটে গেল দুটি বছর।

রিমি শাহেদের প্রতি একটু একটু করে ভালোলাগা শুরু হতে লাগলো
কেমন যেন সাহেদের জন্য রিমির একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে এই মানুষটি আজ দুটি বছর হয়ে গেছে একদিনের জন্য রিমির সাথে এমন কোন আচরণ করেনি, না সাহেদকে নিজ থেকে বলবে ও সাহেদকে ভালোবাসে আজ ওদের বিবাহ বার্ষিকী তাই মার্কেটে গেল সাহিদের জন্য
গিফট কিনতে।
মার্কেটে ঢুকতেই দেখে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে বিশাল নেমে যাচ্ছে তাই দেখে মার্কেটের মধ্যে রিমি বিশাল বিশাল বলে ডাকতে থাকে,
কিন্তু বিশাল সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায়
রিমি বিশালের পিছু পিছু ছুটে আসে তার আগে বিশাল তার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় মার্কেট থেকে রিমিও পিছু নেয়
অবশেষে বিশাল কে খুঁজে পায় রিমি
বিশাল বলে রিমি বিশালের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমি জানতাম তুমি বেঁচে আছো বলে কাঁদতে থাকে, বিশাল কি করবে বুঝতে পারে না, রিমিকে শান্ত করে তারপর রিমিকে নিয়ে একটি পার্কে গিয়ে বসে বিশাল, কিন্তু রিমি কিছুতে বিশালকে ছাড়ছে না বলছে তুমি আগে বলো এতদিন কোথায় ছিলে তুমি, বিশাল বললো আগে আমাকে কথা দাও আমি যা বলবো তুমি তা শুনবে তা না হলে আমি চিরদিনের জন্য তোমার চোখের সামনে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাব
রিমি বললো বিশাল এভাবে বলল না
আমি অনেক দুঃখের পর তোমাকে পেয়েছি আমি কোনো কিছুর বিনিময়ে তোমাকে হারাতে পারবো না বলে ডুকিয়ে কেঁদে ওঠে,
বিশাল বলে
রিমঝিম তুমি একটু শান্ত হও আমি তো আছি।

বিশাল বলে দেখো
তোমার বিয়ে হয়ে গেছে তোমার হাজব্যান্ড খুব ভালো মনের মানুষ তুমি তাকে নিয়ে সুখে থাকো ভালো থাকো তাছাড়া এই দুই বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে তোমার আর আমার জীবন চাইলেও আর আমরা দুজনে একসাথে হতে পারবো না, তাই তুমি তোমার সংসার নিয়ে সুখে থাকো ভালো থাকো এটাই আমি চাই আর কিছু না।
কিন্তু?
আর কোন কিন্তু নয়
তুমি আমাকে কথা দিয়েছো।
আমি শুধু একটি কথা তোমার কাছে জানতে চাই সত্যি করে বলবে,
বিশাল: বল কি জানতে চাও,
তুমি বেঁচে আছো অথচয় কেন তোমার মা আমাকে বলল তুমি মারা গেছে, সে অনেক কথা বাদ দাও,
না আমাকে তোমার বলতে হবে, বলো কি লাভ বলো!
আর তুমি শুনেই বা কি করবে বরং কষ্ট পাবে,
তার চেয়ে এই ভালো
তুমি তোমার পথে আমি আমার পথে,
বাহ তুমি কত সহজ ভাবে কথাগুলো বললে, কিন্তু আমি যে সহজ ভাবে নিতে পারছি না,
তুমি যদি আমায় না বলা তাহলে আমি এখানেই বসে থাকবো কোথাও যাবো না।
তুমি বড্ড ছেলে মানুষী করো তাহলে তুমি আমাকে কথা দাও সব শোনার পর তুমি তোমার সংসারে ফিরে যাবে নতুন করে সব শুরু করবে কাউকে কিছু বলবে না।
আমাকে কথা দাও,
রিমঝিম বিশালের বুকে মাথা রেখে বলে কথা দিলাম তোমায় কাউকে কিছু বলবো না মনে করব সব আমার নিয়তি তোমার সাথে আমার সংসার করা ভাগ্যে লেখা নেই তাই করতে পারিনি।
এবার বিশাল বলে নিজেকে একটু শক্ত করো লক্ষীটি,
রিমি বললো
আমি অনেক শক্ত আছি তুমি বলো,
তারপর বিশাল বলতে শুরু করল
সেদিন তোমার সাথে দেখা করার জন্য তোমার বাড়ির সামনে এসেছি ঠিক ওই সময় পাশের মহল্লার ছেলেদের সাথে মারামারি শুরু হয়
আমি বুঝার আগেই
একটা গুলি এসে আমার বুকে লাগে
ভাগ্য খুব ভাল ছিল
গুলিটা সাইডে লাগে
সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাই সাথে সাথে গুলিটা বের করে দেয় ডাক্তার অপারেশন করে,
ঠিক সেই হাসপাতালে তুমিও ভর্তি হয়েছো
আমার যখন জ্ঞান ফিরে দেখি তোমার মা-বাবা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে
তারা বলে আমি যেন তোমার জীবন থেকে সরে যাই তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে,
আমি তাদের কথা দেই আমি তোমার ভালোর জন্য সবকিছু করতে পারি আমার জীবনের বিনিময় হলেও তোমাকে আমি ভালো রাখবো সুখে রাখবো তুমি যে আমার ভালোবাসা আমার জীবন তুমি,
বলেই খুব শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো রিমিকে,
রিমি বললো এ কেমন সুখ তুমি আমাকে দিলে কেমন ভালো আমাকে রাখলে বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো
রিমি বললো তারপর,
তারপর তাদেরকে কথা দিলাম তোমার ভালোর জন্য আমি তোমার জীবন থেকে সরে যাবো সারা জীবনের জন্য।
হাসপাতাল থেকে সোজা আমি বিদেশ চলে যাই আর যাবার সময় সবাইকে বলি
সবাই যেন আমার মৃত্যুর খবর তোমাকে দেয়, আর সেই মতেই সবাই তোমাকে আমার মৃত্যুর খবর দেয়।
রিমঝিম বলে তুমি এত নিষ্ঠুর তুমি সবার কষ্ট বুঝলে, আমার কষ্ট বুঝলে না
আমি যে তোমাকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম
বিশাল কে ধরে কান্না করতে থাকি,
বিশাল রিমঝিমকে এক হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে অন্য হাত
দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
রিমঝিম তুমি যদি এমন করে কাঁদো
তাহলে আমি যে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা আমি যে নিজেকে দোষী করে ফেলেছি তোমার কাছে।
আমি তোমার অপরাধী আমাকে তুমি ক্ষমা করো না।
রিমঝিম বললো তোমার কোন দোষ নেই সব দোষ আমার ভাগ্যের,
আমার ভাগ্য ছিল আমার ভালবাসার মানুষটিকে পাবোনা তাই পাই নাই
তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার পরিবারের জন্য তুমি
তোমার ভালোবাসা ত্যাগ করেছো।
আমি জানি তোমার বিয়ে হয়ে গেছে বাংলাদেশে এসে শুনলাম কিন্তু নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না তাই তোমার বাড়ির সামনে যাই আর ঠিক তখনই তুমি বের হও তোমাকে ফলো করে মার্কেটে আসি কিন্তু তোমার চোখে ফাঁকি দিতে পারলাম না সেই তুমি দেখে ফেললে,
তোমার সংসারে তুমি ফিরে যাও তোমার স্বামী খুব ভালো মনের মানুষ ওকে তুমি কষ্ট দিও না।
আর তুমি?
আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না আমি বিদেশে শেটেল হয়ে গেছি ওইখানেই থাকবো আমি চাই তুমি সুখে থাকো রিমঝিম বলল হ্যাঁ আমি অনেক সুখে আছি আর থাকবো তুমি ভেবোনা বলে বিশালের বুক থেকে মাথা সরিয়ে নিয়ে বলো।
বিশাল বলে আমার সাথে রাগ করোনা আমি তাহলে কি নিয়ে থাকবো বল,
রিমি বললো আমি কে তোমার যে তোমার উপর রাগ করবো রাগ তো হচ্ছে আমার নিজের উপর।
আমি তো স্বামী পেলাম সংসার পেলাম কিন্তু তুমি কি পেলে?
বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো,
বিশাল বলে কেন?
আমি তো আমার ভালবাসার মানুষটির হাতের শেষ হাতের ছোঁয়া পেলাম
এই যে তুমি এতক্ষণ আমার বুকে মাথা রেখে ছিলে এটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া বাকি জীবন তোমার এই পরশ নিয়ে কাটিয়ে দেবো,
বিশাল বলে অনেক দেরি হয়ে গেছে বাড়ি যাও,
রিমি বলে তুমি,
হ্যাঁ আমিও যাব,
চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি বলে বিশাল রিমঝিমের হাত ধরে গাড়ি সামনে এসে বলে ওঠো রিমি কোনো কথা বলে না
গাড়িতে উঠে বলে তুমি কবে যাচ্ছো,
বিশাল: বলে আমি আগামীকাল চলে যাবো, রিমি বলে আমাদের আর দেখা হবে না,
বিশাল বলে কে বলেছে দেখা হবে না
আমি তো তোমার হৃদয় থাকবো তোমার ছায়া হয়ে আর তুমি থাকবে আমার সমস্ত সত্তা জুড়ে যেখানে থেকে কেউ তোমাকে মুছে দিতে পারবে না, রিমি বললো ভালো থেকো বিশাল
বিশাল বলল তুমিও ভালো থেকো বলেই গাড়ি স্টার্ট দিল,
বিশাল সামনের দিকে তাকিয়ে রইল,
আর মনে মনে ভাবছে
একদিন চলে যাব সব ফেলে,
সেই দিন কি তোমার অনুশোচনা হবে
সেই দিন কি আমার ভালোবাসা তোমাকে কাঁদাবে,
সেই দিন আমাকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা তোমার মনে জাগবে,
আসবে কি সেই দিন অনুশোচনা থেকে
আমি সেই দিন তোমার অপেক্ষায় থাকবো
বড্ড যে ভালবাসি তোমাকে।

আরো পড়ুনঃ  পরিত্যক্ত লাল ডায়েরি

বিশালের আজ চলে যাবার দিন,
বিশালের মা খুব কান্নাকাটি করছে আর বলছে আগেই ভালো ছিলো তুই মাস্তানি করতি তবু তোকে দেখতে পেতাম এখন তো তোকে দেখতেও পাবো না
বিশাল বলে মা আমি তোমাকে প্রতিদিন ভিডিও কল দিবো তুমি এত ভেবোনা বিশালের বাবা বলল দেরি হয়ে যাচ্ছে
বিশাল বলো বাবা তোমার প্রতি খেয়াল রেখো ঠিকমতো প্রেশারের ওষুধ খেয়ো আমি আসি ভালো থেকো বলে গাড়িতে উঠলো।
এদিকে রিমি সাহেদকে সব কিছু খুলে বলে বিশাল বেঁচে আছে,আজ সে
চিরদিনের মত দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে ,শুধু
এসেছিল আমাকে একবার দেখার জন্য বলে কাঁদতে থাকে,
রিমি আমিও তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি কিন্তু দেখো
আমাদের নিয়তি কি?
তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পাওয়ার জন্য ছটফট করছো আর আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি
কি আজব তাই না।
বলেই বললো সাহেদ চলো,
রিমি বললো কোথায়?
সাহেদ বললো এয়ারপোর্টে,
কিন্তু,
কোন কিন্তু নেই।

রিমি: সাহেদের পাশে বসে আছে আর ভাবছে এই মানুষটি কি দিয়ে তৈরি এতো টুকু খারাপ লাগছে না।
শাহেদ এক মনে গাড়ি চালাচ্ছে, যে করেই হোক এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে,
এদিকে বিশাল এয়ারপোর্টে ঢুকে গেছে, সবকিছু ঠিকঠাক করে প্লেনে উঠতে যাবে,
এই সময় রিমঝিম ডেকে উঠে বিশাল বলে,
বিশাল তাকিয়ে দেখে রিমঝিম দাঁড়িয়ে,
বিশাল: রিমির দিকে তাকিয়ে আছে
এদিকে সাহেদ বলে
রিমঝিম তোমার ভালবাসার মানুষটির কাছে যাও আমার দায়িত্ব শেষ,
সাহেদ সেখান থেকে বের হয়ে গাড়ির সামনে এগিয়ে যায়,
রিমি দেখে সাহেদের চোখে পানি,
রিমি বিশালকে বলে
আমাদের ভাগ্য আমাদের নিয়ে আজব খেলা খেলেছে এখন তুমি আর আমি অনেক কাছে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর তুমি আর আমি অনেক দূরে চলে যাবো তুমি তো স্মৃতি থেকে পালিয়ে গেলে আর আমি এই শহরে যন্ত্রণাদায়ক তোমার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবো,
অন্য কারো সংসারে অন্য কারো বুকে আমি থাকবো,
পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি পারবো না তোমার সাথে চলে যেতে
ভালো থেকো।
বলেই দৌড়ে শাহেদের কাছে চলে আসে রিমি,
সাহেদ বলে চিৎকার করে ডাক দেয়
সাহেদ পিছন ফিরে দেখে রিমিকে
রিমঝিম দৌড়ে গিয়ে শাহেদকে জড়িয়ে ধরে বলে আমি তোমার কাছে ফিরে এসেছি,
সাহেদ রিমঝিমকে দুহাত দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে কখনো ফেলে চলে যেওনা,
খুব বেশি ভালোবাসে ফেলেছি তোমাকে,
তুমি আমার প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে গেছো রিমঝিম।
এদিকে বিশাল চিরদিনের মত প্লেনে উঠে চলে যায় দেশ ছেড়ে যাবার আগে শুধু বলে ভালো থেকো
My love,
আর সাহেদ রিমিকে জড়িয়ে ধরে বলে
I love you,

ভালোবাসা সত্যি আজব
এইভাবে রিমি আর সাহেদ সুখে সংসার করতে থাকে কিন্তু মনের গভীরে থেকে যায় তার ভালোবাসার মানুষটি,
ঐই দিকে বিশাল তার কর্মব্যস্ততা নিয়ে ভুলে থাকে ফেলে আসা তার ভালোবাসার মানুষটিকে,

সমাপ্ত,,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *