যৌতুকের জন্য অভিশপ্ত জীবনের গল্প

যৌতুকের জন্য অভিশপ্ত জীবনের গল্প
আরিফা সুলতানা

 

আজ আবারও পঞ্চম বারের মত বিয়ে ভেঙে গেছে আইরিনের।গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারে চার বোনের মধ্যে সবার বড়ো আইরিন।বয়স প্রায় তেইশ ছুঁই ছুঁই।কিন্তু এখনোও বাবা-মা তাকে পাত্রস্থ করতে পারেন নি।চেষ্টা করেনি যে তা না,বারবার বিয়ের কথা পাকা হওয়া সত্বেও সমাজের এক নিষ্ঠুর নিয়মের কাছে হার মেনে বারবার ভেঙে যাচ্ছে সেই বিয়ে।তার সাথে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে আইরিনের মনের ভেতরটাও।আর ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে আইরিনের বাবা-মা’য়ের ধৈর্যের বাঁধটাও।আজ যেন মনে হচ্ছে তাদের, মেয়ে জন্ম নেওয়া মানেই অভিশাপ।মেয়ে মানেই বুঝা।যদিও এতদিন একটি বারের জন্যও এই ভাবনা তাদের মনে আসে নি,কিন্তু এখন যেন এই ভাবনাটা মনে আসতে বাধ্য।মেয়ের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। ঘরে আইরিন ছাড়াও আরো তিনটা মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে উঠেছে।কিন্তু আইরিনের বিয়েই দিতে পারছে না,তার মধ্যে আবার বাকি তিন মেয়ে।
পাত্রদের চাহিদা মত যৌতুক দিতে না পারায় আজকেও আইরিনের পাকা হওয়া বিয়েটা হলো না।

“যৌতুক” শব্দটি অতি ছোট একটা শব্দ হলেও তার ভার কিন্তু অনেক।যৌতুক আমাদের সমাজের একটি মারাত্মক ব্যাধি হলেও সেটা আমাদের সমাজ বিয়ের একটি বাধ্যতা মূলক নিয়ম হিসেবে নিয়েছে।যার কারণে আজ আমাদের সমাজে মেয়েরা হয়ে উঠছে বুঝা,অভিশাপ,বাবা-মা’য়ের দীর্ঘশ্বাসের কারণ।সমাজের উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা এই যৌতুকের ভার সহজে নিতে পারলেও একজন নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য তা পাহাড়সম হয়ে পড়ে। এ যেন এক মরণব্যাধি।ধীরে ধীরে শেষ করে দেয় একটি পরিবারকে।স্বযত্নে তৈরি করা সুন্দর একটি মনকে।এ যেন হারিয়ে দেয় বহু বছর ধরে তিল তিল করা জমা করা ভালোবাসাকে।
কবে বুঝবে আমাদের এই সমাজ,যে যৌতুক কোন সমাজের নিয়ম নয়,বরং যৌতুক একটি ধ্বংসের নাম, মরণব্যাধি সমতূল্য একটি মারাত্মক ব্যাধির নাম।একটি পরিবার থেকে আমরা একটি প্রাণ কে নিয়ে আসতেছি,একজন বাবার কাছ থেকে আমরা তার কলিজাটাকে ছিঁড়ে নিয়ে আসতেছি,আদরের ভাই বোনদের কাছ থেকে তার ভালোবাসাটাকে নিয়ে আসতেছি,একজন মা’য়ের কাছ থেকে তার নাড়ি ছেঁড়া ধনটা নিয়ে আসতেছি,আর কী চাই আমাদের?

আরো পড়ুনঃ  ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ পদ্ধতি কলমে বখতিয়ার উদ্দিন

আমাদের তো লজ্জা হওয়া উচিত,জীবনে চলার জন্য একজন ছায়াসঙ্গী পাওয়ার পরেও নির্লজ্জের মত নিম্ম মানের মানসিকতার পরিচয় দিতে হাত পেতে বসি পাত্রীর বাবার কাছে।আসলেই প্রচুর লজ্জা জনক এই বিষয়টা।আফসোস তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না।নিজেকে ছোট করে,অমানুষের মত আমাদের হাত পাততেও দিধা হয়না। আরেকজনের কাছে ভিখারির মত যৌতুকের নামে এটা ওটা চাওয়া আমাদের সমাজের একটি নিষ্ঠুর নিয়মে পরিনত হয়েছে আজ।

 

আরো পড়ুন এবং লেখুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য 

প্রবন্ধের শিরোনাম ইচ্ছের প্রাধান্য, কলমে তাসলিমা আক্তার

গল্পের শিরোনাম ভ্রুণের আর্তনাদ লেখিকা সানজিদা সাবিহা

7 thoughts on “যৌতুকের জন্য অভিশপ্ত জীবনের গল্প”

  1. এই প্রোগ্রামের সাথে আপনার ল্যাপটপ একটি আর্থিক উপকরণ করুন. Telegram – @Cryptaxbot

  2. অর্থ উপার্জন করুন, যুদ্ধ নয়! আর্থিক রোবট আপনি কি প্রয়োজন. Telegram – @Cryptaxbot

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *