
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার
আহমাদুল্লাহ আশরাফ
গোটা পৃথিবী চলে এখন প্রযুক্তির উপর।
আসা-যাওয়া, কাজ-কর্ম, পড়াশোনা সবই ছুটছে প্রযুক্তি নির্ভর। ফলে, মানুষ ও মনন সবকিছুতেই ঘটছে পরিবর্তন। মন ও মানসিকতা, চিন্তা ও চেতনা সবই কল্পিত হচ্ছে প্রযুক্তিকে সামনে রেখে।প্রযুক্তি যতো আপডেট হচ্ছে, চাল-চলন, উঠাবসাতেও দেখা যায় ততোই ভিন্নতা।তাই; প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করলে সহজেই যেমন সফল হওয়া যাবে। এর দুর্ব্যবহারেও রয়েছে যথেষ্ট ক্ষতি ও যিল্লতি।
একটা সময় ছিল, যখন মানুষ দু’চারটা ডাল ভাত হলেই যথেষ্ট মনে করতো। সুখে শান্তিতে আছে বলে প্রশান্তি পেতো। তখন এতোটা অশ্লীলতা আর বেহায়াপনার ছিল না ছড়াছড়ি। সরলমনা মানুষের মনটাও ছিল সরল ও নরম। ফলে, তারা যেমন নিজেরদের কল্যাণার্থে কাজ আনজাম দিতো। সেই সাথে বন্ধু ও প্রতিবেশীর প্রতিও খেয়াল রাখতো। পাশে দাঁড়াতো সুখ ও দুঃখেও। কারো সাথে বন্ধুত্ব করতো নিঃস্বার্থে, মন থেকে। অথচ; তখন মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। সাধারণ থেকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেকোন বিষয়েও সংবাদ দিতে হলে চিঠির ধারস্ত হতে হতো। তাও আবার চিঠি পৌঁছাতে পৌঁছাতে দিনকে দিন, মাসকে মাস চলে যেতো। আবার না পৌঁছার আশংকাও ছিল যথেষ্ট পরিমাণ।
তখন চলার মাধ্যম হিসেবে ছিল উট ও গাধা।এগুলোই ছিল উন্নত মাধ্যম। বাকি সকলকে পায়ে হেঁটেই চলাফেরা করতে হতো। কাফেলাবদ্ধ হয়ে যেতে হতো এক দেশ থেকে আরেক দেশে। ক্ষেত খামার চাষবাস করতে গিয়ে নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হতো তাদের। কুড়ের ঘর, খেজুর পাতার তৈরি ছোট ছোট কামরায় জীবনকে যাপন করতে হতো বড় কষ্টে।
পরবর্তীতে মানুষ উন্নত হতে লাগলো। বিভিন্ন প্রযুক্তির আবিষ্কার করতে থাকে। মানুষের চোখ হয়ে যায় একাধিক। যা দিয়ে দেখতে শুরু করে আধুনিকতার স্বপ্ন। নিজেকে ও দেশকে ডিজিটাল করার প্রতি বেড়ে যায় বড় আগ্রহ। আবিষ্কার হয় মোবাইল, ক্যাসেট, বাস,ট্রেন, জাহাজসহ আরো কত কী। ফলে, সহজ হয়ে যায় দেশকে দেশ ভ্রমণ।একদেশ থেকে আরেকদেশে যোগাযোগ বন্ধন। অর্থাৎ—হাতের মুঠোয় যেন গোটা পৃথিবী।যখন যা ইচ্ছে, মুহুর্তেই করে ফেলছে।
এতে যেমন উপকার হচ্ছে। ক্ষতিও কম হচ্ছে না।কাজ করা যেমন সহজ হয়েছে। আকাম-কুকাম করারও পথ খুলে গেছে।বেড়েছে অশ্লীলতা।নারীর প্রদর্শন সবখানেই ছড়াছড়ি। যেখানে ইসলাম বলেছে—নারীকে পর্দা করে চলতে হবে।গাইরে মাহরাম মানুষের সাথে দেখা করা নিষিদ্ধ করেছে।এসবই হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিক। গুনাহকে গুনাহ মনে করা হচ্ছে না।মিথ্যাকে সত্যের রূপে প্রকাশ করতে তেমন কষ্ট সইতে হচ্ছে না।ফলে—উন্নতির তুলনায় ক্ষতির দিকটাই দেখা যাচ্ছে বেশি।জাতি যদি এর অপব্যবহার থেকে বিরত না থাকে তবে অদূর ভবিষ্যতে তাকে দেখতে হবে ব্যর্থতা ও যিল্লতির করুণ চেহারা।
প্রযুক্তিগুলোর দিকে সুক্ষ দৃষ্টিতে খেয়াল করতে দেখতে পারবেন কিছু ভালো দিকও।যেমন:—ইউটিউব।যেখানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার কন্টেন্ট ভিডিও আপলোড হচ্ছে। যার সিংহভাগ অশ্লীল। সামান্য কিছু ভালো। আপনি ভালোকে প্রধান্য দিন।মুসলিম হিসেবে আপনার উপর কি ভালোকে প্রধান্য দিয়ে চলা কর্তব্য নয় কি? ছেলে মেয়ে মোবাইল ছাড়া খানা খায় না।আপনি তাকে ইসলামিক মাইন্ডের ভিডিও দিয়ে দিন।দেখুক।মন্দ না দেখে অন্তত ভালো কিছু দেখুক।এতে কী হবে জানে!ছোট থেকেই তার মেজাজে ইসলাম সম্পর্কে একটা ধারণ আসবে।
অনেক সময় দেখেন না! ছোট বাচ্চা দীর্ঘদিন যা শুনে সেটাই সে বলতে থাকে।যদি গজল হয়।তবে গজল গাইতে থাকে।এতে নিজেকে সে আনন্দিত মনে করে।তো আপনার সন্তান যেন অন্যদের মতো না হয়।সে যেন গান না গেয়ে গায় যেন গজল আল্লাহ ও রাসূলের নামে।সে যেন নায়ক-নায়কাকে না চিনে চিনে বড় বড় আলেমকে।অশ্লীল কিছু না দেখে,দেখুক মক্কা মদিনার মনোরম দৃশ্য। এটাই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার। শুধু মাইন্ডকে চেঞ্জ করে,ঘুরিয়ে দিবেন ইসলামের দিকে।
ফলে—দেখবেন আপনার সন্তান আপনাকে কখনো বিদ্যাশ্রমে রেখে আসবে না।বাবাকে বাবার সম্মান দিবে।মা’কে মায়ের সম্মান দিবে।এমনকি নিজে না খেতে হলেও আপনাকে খাওয়াবে।এর চেয়ে শান্তির কিছু আছে মা বাবার জন্য। আর মূল বিষয় হচ্ছে— সন্তানরা খারাপ হয় মা বাবার কারণেই।মা বাবা তাদেরকে যেভাবে পরিচালনা করবে।লালন পালন যেভাবে করবে,সন্তানরা তা-ই শিখবে।সে অনুযায়ীই তারা আচার ব্যবহার দেখাবে।তাই তো হাদিসে বর্ণিত হয়েছে—প্রতিটি সন্তানই জন্ম লাভ করে ইসলামি ফিতরতের উপর।পরবর্তীতে তার মা বাবাই তাকে ইহুদি কিংবা নাসারা বানায়।অতএব,খেয়াল রাখতে হবে আপনার সন্তান যেন প্রযুক্তির অব্যবহারের কারণে খারাপ হয়ে না যায়।এবং খারাপ দিকে চলে না যায়। সে জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হবে।বাকিটা আল্লাহর হাতে।
প্রযুক্তির অব্যবহারে রয়েছে নানান ক্ষতি।চোখের ক্ষতি।রাতকে রাত না ঘুমিয়েই কাঁটিয়ে দিচ্ছে। খানার সময় খাওয়া হচ্ছে না।খেলার সময় খেলা হচ্ছে না। ফলে, শরীর স্বাস্থ্য দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। যৌনশক্তিতে দূর্বলতা চলে আসছে।ইত্যাদি আরো নানান ক্ষতি রয়েছে এ প্রযুক্তির অব্যবহারে।
তাই আসুন আমরা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করি।সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।সন্তানাদিদের প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।যদি ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে তবে যথাসম্ভব বিরত থাকি।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের সকলকে কবুল করুন।
─────প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার
─────আহমাদুল্লাহ আশরাফ
─────ত্রিশাল,মোমেনশাহী।