বন্যা নিয়ে কবিতা গুলো প্রতিটি বাস্তব চিত্রের লিখিত রূপ। এই সাহিত্য দ্বারা কত কিছুই তো প্রকাশ করা হয়। কবিতার ও কত ভাষা আছে? তাই না? প্রিয় শহর বা আমাদের দেশের একটা অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেলে কি আমাদের কখনো ভালো লাগবে? কখনোই না। সামান্য দেশপ্রেম মনোভাব থাকলে তো আর কখনো কথা নেই। দেশপ্রেম কিছু তরুণ লেখক ও লেখিকার বন্যা নিয়ে কবিতা গুলো পড়ুন। পড়লে অবশ্যই আপনাকে ভালো লাগবে। আমরাও চেষ্টা করেছি, সেরা সকল কবিতা সংকলন করে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করার।
বন্যার পানি রান্না ঘরে
কবি এস এম সুমন
বন্যা এসে রান্না ঘরে
পানি ডুকলো হায়.
কেমন করে রান্না করবো
টেনশনে দিন যায়।
ঘরের মানুষ নিরব হয়ে
বসে আছে ভাই.
বন্যার পানি চতুর্দিকে
মনে শান্তি নাই।
গ্যাসের চুলা এনে ঘরে
রান্না করতে হয়.
হঠাৎ করে গ্যাস শেষ হলো
তা কি প্রাণে সয়।
এতো দামে গ্যাস কিন্তে ভাই
টাকা পাবো কই.
বন্যার পানি রান্না ঘরে
কেমন করে সই।
কয়েক দিনই পরে দেখি
বন্যার পানি কম.
সকাল উঠে নাস্তা করি
আটা তৈরী গম।
বিষাদ বন্যা
ডাঃ নূরুল ইসলাম মোল্লা
বর্ষার দিনে ঝড় তুফানে
নদীতে বড়ই চাপ
দুর্বল বাঁধ ভেঙেই বলে
একি বাপরে বাপ।
জলটা এসে আছড়ে পড়ে
গ্রাম শহর ও মাঠে
মানুষ পশু বাঁচতে গিয়ে
বিপদে দিন কাটে।
ভাসতে থাকে পশু পাখি
ডোবে পথ ও ঘাট
সাপ ব্যাঙ মাছ চিতিয়ে বেড়ায়
যেন নীরব মাঠ।
গরীব যারা আশ্রয় খোঁজে
কাটবে কোথায় দিন
অন্ন বস্ত্র সন্ধানে কাটে
রয় যে আহার হীন।
দুঃসময়ে চিনতে পারে
কে বা আপন পর
পাপের পাহাড় ধৌত হবে
পাঠায় কি ইশ্বর?
বান ডেকেছে
তপন কুমার পাল
আষাঢ় মাসে বান ডেকেছে
বাঁধ ভেঙেছে হায়,
বানের জলে ঘরবাড়ি আজ
ভেসে বুঝি যায়।
বানের যে জল হু হু করে
যাচ্ছে বেড়ে ভাই,
দারা-পুত্র নিয়ে এখন
কোথায় চলে যাই?
জলে থৈ থৈ চারিদিকে
দেখলে লাগে ভয়,
গবাদি সব যাচ্ছে ভেসে
কী জানি কী হয়!
কী যে ভীষণ বন্যা রে ভাই
গায়ে কাঁটা দেয়,
জলের তলায় ঘরবাড়ি সব
কত যে প্রাণ নেয়।
চারিদিকে হাহাকার আর
শুধু কান্নার রোল,
গরিব কাঁদে ত্রাণ শিবিরে
মুখেতে নেই বোল।
কাঁদে মেঘের কন্যা
মুনীর আল হাদী
আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষাকালে
কাঁদে মেঘের কন্যা,
বৃষ্টি জলে ডোবা তলে
দেশে আসে বন্যা।
ধান কাউনের মাঠ ডুবে যায়
ভাসে সেথায় ভেলা,
বড়শি হাতে মাছ ধরিতে
কেটে যায় যে বেলা।
কৃষক ভায়ের স্বপ্ন ভাঙে
বানের পানি এসে,
কষ্ট নদীর পানিতে তাই
দু’চোখ যায়রে ভেসে।
খেলাধুলা বন্ধ করে
খোকন সোনা ঘরে,
খেলনা সবি ভেসে গেছে
খেলবে কেমন করে?
সাইক্লোন
বিজন বেপারী
ঝড় নাকি বা সাইক্লোন যে
আসবে শুনি আসবে,
আকাশ পানে লুকোচুরি
গগনে মেঘ ভাসবে।
বুকে ধরপর করে ওরে
শুনলে ঝড়ের কথা,
সিডর গেল আইলা গেল
মনে অনেক ব্যথা।
দুখী জনের দুঃখ বাড়ে
কেহ উপোষ করে,
মাটির ঘরের চুলা খানা
পানিতে যায় ভরে।
ঝড়ের মুখে জেলের নৌকা
ডুবে আর যে ওঠে,
কেউবা বাঁচে কেউবা মরে
ভীষণ ঝড়ে পড়ে।
ব্যথার জলে
স্বপন মুখোপাধ্যায়
অহর্নিশি ঝম ঝমা ঝম
অবিশ্রান্ত ধারা,
সবাই আটক যে যার ঘরে
নেইকো কারো সাড়া।
কৃষ্ণমেঘের চমকানি আর
উজান ভাঙা ঝড়ে,
কূল ছাপানো ভয়াল নদী
উথাল পাথাল করে।
ভাঙলো হঠাৎ বাঁধের আগল
স্বপ্ন নিলো কেড়ে,
মানুষ পশু দিশেহারা
বে-দখলের জেরে।
ডুবলো রে ক্ষেত বসত ভিটে
চারদিক জলে ভরা,
নিভলো আশার প্রদীপগুলো
যত্ন করে গড়া।
বানভাসি চোখ বেবাক তাকায়
শূন্য ঘরের পানে,
ব্যথার জলে বেঁচে থাকার
পায় না খুঁজে মানে।
বন্যা নিয়ে কবিতা
ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম
বন্যার সময় প্লাবিত হয়
শুধু দুর্ভোগ বাড়ে,
অসহায় হয়ে পড়ে সবে
নিজ এলাকা ছাড়ে।
বাঁধের ওপর গিয়ে শুধু
তারা আশ্রয় নেয়,
পানিবন্দি হবার কারণে
ভীষণ কষ্ট পায়।
প্রবল স্রোতেই ঘর-বাড়ি
পানিতে যায় ভেসে,
পার করে কষ্টের জীবন
দুঃখ বয়ে আসে।
ত্রান সামগ্রী নিয়ে মানুষ
তাদের কাছে যায়,
চাল ডাল সাহায্য পেয়ে
তারা বাঁচতে চায়।
সুযোগ পেলে ত্রাণ কিন্তু
অনেকে চুরি করে,
এরপরেও পায় না রক্ষা
পুলিশ তাদের ধরে।
বন্যার কবলে
শক্তি শেখর দাস
নদীর কূলে বসত করে
ভেবে ছিলাম মনে,
রইবো অতি বড় সুখে
আমরা সকল জনে।
বন্যা এসে ভাঙলো আমার
সকল মনের আশা,
ভাসিয়ে দিল সকল কিছু
বন্যা সর্বনাশা।
ভেসে যায় সব ফসল পাতি
ভাসে ঘর আর বাড়ি,
সবটা ফেলে মনের দুখে
এলাম গৃহ ছাড়ি।
ভেসে গেল গরু বাছুর
হাঁস আর মুরগি গুলো,
কিছু ধরতে পারলাম নাকো
হলাম যেন নুলো।
বন্যা শেষে মানব মাঝে
ধরলো কত রোগে,
দয়াল বিধি ফেলবে মোদের
কতো আর দূর্ভোগে।
বর্ষার বন্যার বিভাবরী
ডাঃ রামপদ মণ্ডল
বর্ষা এলো ঝম্ ঝুমিয়ে, ঝরছে সারা রাত ,
পুকুর খাল দিলো ভরিয়ে, বন্যায় মাথায় হাত,
সারা রাত্রি বৃষ্টি পড়ে
ঝাপটা আসে বারে বারে
বৃষ্টি ঝরে কুঁড়ে ঘরে, বর্ষায় বাজিমাত ।
মাটির দেওয়াল জলের তলে, মরণ বৃষ্টি পড়ে,
খড়ের ছাউনি ভাসছে জলে, জীবজন্তুর মরে।
আর্তনাদে সবাই ছোটে
কূল কিনারা যদি জোটে
উচ্চ ভূমির বালুর তটে, মরছে বিপদ ঘোরে ।
ষাঁড়া ষাঁড়ির কটাল এখন, নদী ডাকে বানে,
স্তব্ধ গভীর নিশী, তখন হাসি বর্ষার মনে ।
বর্ষা নদীর মিলন খেলা
মাঠে মাঠে জলের মেলা
ভাসছে কিছু কাঠের ভেলা, গাছের ডগার বনে।
নিশুতি রাত আঁধার মাঝে, সৌদামিনী ঝরে,
মৃত্যু মুরলী হৃদয়ে বাজে, কত মানুষ মরে।
মৃত্যু কালে স্বজন হারা
ডুকরে কাঁদে ছোট্ট যারা
বাংলার এ রূপ মনোহরা, ছেড়ে গেল ঘরে ।
ঠিকানাঃ বারুইপুর, কলকাতা।
সর্বনাশা বন্যা
মিয়াজী তোফায়েল আহমাদ
বানে ভাসছে শহর নগর
নামছে বৃষ্টির ঢল,
মানব জীবন অতুষ্টিকর
ঝরছে চোখের জল।
বন্যার পানি দিচ্ছে হানা
ভাঙছে সুখের নীড়,
জলে ভাসছে পশুপাখি
মানব জাতির শির।
গরু মহিষ সবই ভাসছে
ভাসছে জমির ধান,
ভেসে নিলো সুখ ও শান্তি
সর্বনাশা বান!
বানে বন্দী মানব জীবন
সুখের আবাস নাই,
সৃষ্টি কর্তা মহান প্রভু
সুখী করবেন তাই।
প্রভু হলো পালন কর্তা
তারই হাতে জান,
কুদরতের মাঝ সরাবে
সর্বনাশা বান।
বন্যার লক্ষ্মণ
জেহান মোবারক
বর্ষা এলেই বৃষ্টি নামে
ছাতি মাথায় দেবো রে,
ঘরের বাহির যেতেই সদা
ছাতি হাতে নেবো রে।
অতি বৃষ্টি বন্যার লক্ষ্মণ
রাস্তাঘাট সব ডুবে রে,
কলা গাছের খেয়া বানায়
স্বজন পাড়ি দেবো রে।
জলাশয়ের মাছ ভেসে যায়
বন্যার পানির স্রোতে রে,
পুকুর কুয়া খালও বিলে
ছড়িয়ে গেছে দ্রুত রে।
বন্যায় ভাসে চাষী মজুর
ধনীরা সব শহরে,
গরু ছাগল পোষা প্রাণী
খাবার বিহীন সফরে।
বান
মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর
আকাশ থেকে বিষ্টি পড়ে
ঝমঝম শব্দ করে।
রাতে-দিনে চব্বিশ ঘন্টা
মাঠে ঘাটে ঘরে।
বিষ্টি জলে পুকুর নদীর
দ্রুত বাড়ে পানি।
শাক-সব্জি আর ফসল ডুবে
ডুবে গেরাম খানি।
বানের জলে ভাসতে থাকে
গরু ছাগল বাড়ি।
তীব্র স্রোতে ভেঙে পড়ে
সাঁকো নদীর ধারি।
বানের স্রোতে সব হারিয়ে
কাঁদে কৃষক বানি।
বান ভাসিরে করো সেবা
দিয়ে খাবার মানি।
ঠিকানাঃ শেরপুর, বগুড়া
বানভাসি
বিজন মজুমদার
অঝোরধারায় বৃষ্টি যখন
সিক্ত করে মাটি
কৃষক লাঙল চললে সেথা
ফসল ফলে খাঁটি।
এই বৃষ্টিই কয়েকটি দিন
নামলে অবিরত
বন্যা হয়ে ভাসায় যে সব
করে গভীর ক্ষত!
জমির বুকে সোনার ফসল
নদীর পাড়ে বাড়ি
বন্যা এসে তুমুল তোড়ে
সব নিয়ে নেয় কাড়ি।
জল মানে জীবন যখন
বুকের তৃষ্ণা মেটে
অধিক বৃষ্টি বন্যা এনে
জীবনকে দেয় ঘেঁটে।
বন্যা নিয়ে কবিতা ও ছন্দ
আসগার আলি মণ্ডল
ক’দিন থেকে ঝম-ঝমিয়ে
বৃষ্টি অবিরাম
এক হাঁটু জল সবখানেতেই
ভাসছে আমার গ্রাম।
ভরা জোয়ার বাঁধ ভেঙেছে
ঢুকছে গ্রামে জল
আজ রাতেতে কোথায় যাবো
কি হবে এর ফল !
গরুগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে
দারুন ক্ষিদে নিয়ে
মাঠ ডুবেছে ঘাট ডুবেছে
খাবে কোথায় গিয়ে।
করিম চাচা ভাবনা নিয়ে
দাঁড়িয়ে সবার মাঝে
ঘর পড়েছে আজ সকালে
যাবে কোথায় সাঁঝে।
হঠাৎ-হঠাৎ দমকা বাতাস
কাঁপছে সবার বুক
বন্যা এলো গ্রাম ডুবলো
কাড়লো সবার সুখ।
ঠিকানাঃ বাউড়িয়া, হাওড়া।
বন্যা নিয়ে কবিতা
মোঃ কাজী আব্দুল্লা হিল আল কাফী
জল ভরে বন্যা আসে
নেই তার দয়া,
ঘর বাড়ি ভেঙে দেয়
নেই কোন মায়া।
চারি পাশে উঠে পানি
শুধু থই থই,
লোক জন এক করে
যাবে যে কই।
ভরে আছে সন্ধা রাত
পানি আর পানি,
সুখ নেই শান্তি নেই
বন্যা ভয় মানি।
পশু পাখি ভেসে যায়
ঐনা দুর দেশে,
বন্যা এসে হানা দেয়
পানি আসে ভেসে।
বন্যা এসে দিয়ে যায়
কত যে জ্বালা,
চারি দিকে পানি ভরা
নদী আর নালা।
ঠিকানাঃ হাতীবান্ধা লালমনিরহাট
বন্যা
বিকাশ চক্রবর্তী
দুকূল ছাপানো বন্যার ঢেউ
বাধ ভাঙ্গা বেগে আসে,
সম্মুখে পায় যা কিছু সকলি
নদীর সে স্রোতে ভাসে ৷
বন্যার কাছে অসহায় আজও
ধরণীর জীবকুল,
তার রোষানলে পায় নাকো ছাড়া
প্রাণী গাছ ফল ফুল ৷
ভেসে যায় শত জনপদ ,ভাসে –
কত শত ঘর বাড়ি ৷
বন্যার কালে হা হুতাশ করে
বানভাসি নরনারী |
কখনো সে আসে অভিশাপ হয়ে
কখনো আশীর্বাদ-
স্বপ্ন কখনো ধ্বংস করেছে
কখনো পুরালো সাধ৷
চাষির মুখেতে হাসি ফুটিয়েছে
বন্যার পলিমাটি,
বন্যা কখনও শত্রু – মিত্র
দুটোই আসলে খাঁটি ৷
বন্যার পানি
নিলুফার জাহান
বৃষ্টি পড়ে ঘূর্ণিঝড়ে
ভাসে সকল সাধ
পাহাড়ি ঢল উজান জলে
ভাঙ্গে নদীর বাঁধ।
রান্না খাওয়া যায় না পাওয়া
ক্ষুধায় কাটে দিন
সকল দিকে বন্যার পানি
বাজে দুখের বীণ।
জমির ফসল গরু ছাগল
ভেসে গেছে হায়
ঘরের চালে মাচার উপর
জীবন কেটে যায়।
পড়াশোনা স্বপ্ন বোনা
বন্ধ সবই আজ
রাস্তা ঘাটে ফসল মাঠে
শুধু পানির রাজ।
কেমন করে থাকি ঘরে
বাঁচার উপায় নাই
ওগো প্রভু দাও না তুমি
একটু খানি ঠাঁই।
বন্যা সর্বনাশী
সৈয়দুল ইসলাম
সুনামগঞ্জ আর সিলেট জেলায়
বন্যা দেখা দিলো,
ধনী গরিব সবার মুখের
হাসি কেড়ে নিলো।
রাস্তাঘাট আর বসতভিটার
পানির নিচে ঠাঁই,
দুর্বিপাকে লাখো মানুষ
যাওয়ার জায়গা নাই।
খাবার কিছু নেই ঘরেতে
দুর্বিসহ ক্ষণ,
অবুঝ শিশুর জন্য কাঁদে
মা জননীর মন।
উজান ঢলের প্রবল স্রোতে
নদী পাড়ের বাড়ি,
বিলীন হচ্ছে নদী গর্ভে
হায়রে আহাজারি!
সোনার ধানে ভরবে গোলা
ছিলো মুখে হাসি,
মুখের খাবার কেড়ে নিলো
বন্যা সর্বনাশী।
ঠিকানা: হাসারচর, শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।
বন্যার জলে!
মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন
বন্যার জলে যায়না চেনা
রাস্তা নাকি খাল
নদীর মতো নৌকা চলে
ফেলে মাছের জাল।
বন্যার জলে দেশটা তলে
চলতে গেলে ডর
রাস্তাগুলি জলের তলে
দেখি জীবন ভর।
রাস্তাঘাটে বেহাল দশা
বলতে লাগে লাজ
বাঁধের নামে যাচ্ছে টাকা
দেখি কাজের কাজ।
চলছে গাড়ি টলছে গাড়ি
উল্টে কতো রোজ
বাঁধ ভাঙিয়ে ফসল তলে
নেয় না কেহ খোঁজ।
বন্যা এলে দেশটা তলে
যেনো জলের দেশ
বাংলা জুড়ে নৌকা চলে
যেন পাপের রেশ।
ঠিকানাঃ বগুড়া, বাংলাদেশ।